ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রাজিলের গম খাওয়ার উপযোগী ॥ হাইকোর্টে রিপোর্ট খাদ্য অধিদফতরের

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৬ জুলাই ২০১৫

ব্রাজিলের গম খাওয়ার উপযোগী ॥  হাইকোর্টে রিপোর্ট খাদ্য অধিদফতরের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ব্রাজিল থেকে চারশ কোটি টাকায় আমদানি করা গম মানুষের খাওয়ার উপযোগী বলে উচ্চ আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে খাদ্য অধিদফতর। এ বিষয়ে শুনানির জন্য রিট আবেদনকারীপক্ষ সময় চাওয়ায় আদালত ৮ জুলাই পরবর্তী আদেশের জন্য দিন রেখেছেন হাইকোর্ট। পূর্বের নির্দেশনা অনুযায়ী রাষ্ট্রপক্ষ রবিবার গম নিয়ে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের প্রতিবেদন আদালতে জমা দিলে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মোঃ সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এই আদেশ প্রদান করেছেন। খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের (ডিজি) পক্ষে ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস এ প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস। খাদ্য অধিদফতরের ডিজি ৯টি বিষয় উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রদান করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাদ্য অধিদফতরের পরীক্ষাগারসহ বিভিন্ন পরীক্ষাগার হতে প্রাপ্ত সকল রিপোর্ট মোতাবেক ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ব্রাজিল হতে আমদানিকৃত আলোচ্য গম চুক্তিপত্রে বিনির্দেশ মোতাবেক সহনীয় সীমার মধ্যে থাকায় মানুষের খাওয়ার উপযোগী। আমদানিকৃত ২ লাখ ৫ হাজার ১২৮ মেট্রিক টন গম খাদ্য অধিদফতরের সরবরাহ ও বিতরণসূচী অনুসারে সারাদেশের খাদ্য গুদাম হতে ইতোমধ্যে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৯২৬ মেট্রিক টন বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ব্রাজিল থেকে আমাদানিকৃত গমের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় দেশের বিভিন্ন জেলার খাদ্য গুদামে মজুতকৃত গমের ৫৭টি নমুনা নির্বাহী ম্যাজিস্টেটের মাধ্যমে সংগ্রহ করে খাদ্য অধিদফতরের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার ফলাফল মোতাবেক ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত গম চুক্তিপত্রের গ্রহণীয় সীমার মধ্যে পাওয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে এ গম প্রেরণ করা হলে তাতে প্রোটিনের মাত্রা যাচাই করে চুক্তিপত্রে বর্ণিত নির্দেশের চেয়ে বেশি প্রোটিন রয়েছে মর্মে ফলাফল দেয়া হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১৪টি নমুনা বিসিএসআইআর-এ (সায়েন্স ল্যাব) পাঠানো হলে গমের মান ভাল বলে প্রত্যয়ন করা হয়। শুনানিতে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, প্রতিবেদন অনুযায়ী গমের শস্যদানা ভাঙাচোরা পুচকানো ও পোকা ওয়ালা।’ জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘গমের শস্যদানা ভাঙাচোরা পুচকানো, ও পোকাওয়ালা হলেও খাদ্য উপযোগী।’ শুনানির এক পর্যায়ে ব্যারিস্টার খোকন আদালতকে বলেন, ‘সরকার পক্ষের দেয়া প্রতিবেদন আমরা ভাল করে দেখব। তারপর আদালতে কথা বলব। এজন্য সময় প্রয়োজন। এরপর আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ৮ জুলাই দিন নির্ধারণ করেন। এর আগে গত ৩০ জুন ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত গম খাদ্য উপযোগী কি না তা পরীক্ষা করে জানাতে খাদ্য অধিদফতরকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আমদানিকৃত গম পরীক্ষার জন্য কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তাও জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। গম আমদানির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে এ রিট দায়ের করেন এ্যাডভোকেট পাভেল মিয়া। রিটে দুদকের মাধ্যমে তদন্ত এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) ও বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বারি) এর মাধ্যমে গম পরীক্ষার নির্দেশনা চাওয়া হয়। এছাড়া মানহীন গম আমদানি এবং সরবরাহ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, বিএসটিআই ও বারির ল্যাবেরটরিতে পরীক্ষার কেন নির্দেশনা দেয়া হবে না, অনিয়মের অভিযোগ কেন তদন্তের নির্দেশনা দেয়া হবে না মর্মে রুল চাওয়া হয়। রিটে খাদ্য সচিব, খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়। আবেদনে গম নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনও যুক্ত করা হয়। পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গমের মান নিয়ে খাদ্য অধিদফতর থেকে আপত্তি তোলা হয়েছিল। ব্রাজিলের কৃষি মন্ত্রণালয় বা অন্য কোন বিভাগের মান নিয়ে কোন সনদ দেয়নি। বন্দরে অবস্থানকারী খাদ্য অধিদফতরের রসায়নবিদেরা এ গমের কয়েকটি চালানকে ‘বি’ ক্যাটাগরির বা মাঝারি থেকে নিম্নমানের হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। এসব জেনেও খাদ্য অধিদফতরের তৎকালীন মহাপরিচালক সারোয়ার খান চট্টগ্রাম বন্দরে আসা ওই গমের ছাড়পত্র দেয়ার নির্দেশ দেন। অধিদফতরের আমদানি-সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতামত, চিঠি ও পর্যালোচনা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।এই গম আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রেশন হিসেবে সরবরাহের পর এর মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পুলিশের সব বিভাগীয় কার্যালয় এই গমকে নিম্নমানের এবং খাওয়ার অযোগ্য উল্লেখ করে একাধিকবার চিঠি দেয়। তারপরও খাদ্য মন্ত্রণালয় শুরু থেকেই বারবার বলছে, এই গম খাদ্য অনুপোযোগী নয়।
×