ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম আলো মিথ্যা তথ্য প্রচার করে কী পেতে চায় ॥ সংসদে মতিয়া চৌধুরী

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৬ জুলাই ২০১৫

প্রথম আলো মিথ্যা তথ্য প্রচার করে কী পেতে চায় ॥ সংসদে  মতিয়া চৌধুরী

সংসদ রিপোর্টার ॥ পাওয়ার টিলার বিক্রি নিয়ে ‘দৈনিক প্রথম আলো’তে প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে চলতি অধিবেশনে তৃতীয়বারের মতো জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দিলেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, প্রথম আলো মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে কী অর্জন করতে চায়? ক্ষোভ প্রকাশ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমি মন্ত্রী বলে এবং সংসদ চলছে বলেই দেশবাসীর কাছে সত্য ঘটনা তুলে ধরতে পারছি। কিন্তু সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করলে তাদের অবস্থা কী দাঁড়ায়? এর নাম সৎ সাংবাদিকতা নয়, আবারও বলছি এর নাম সৎ সাংবাদিকতা নয়। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রবিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ৩০০ ধারায় বিবৃতি দিতে গিয়ে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে গত ১৬ জুন একই বিষয়ে বিবৃতি দেন তিনি। এরপরে আবারও বিবৃতি দিয়ে বিষয়টি নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টের সত্যতা নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন কৃষিমন্ত্রী। বিবৃতিতে মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ঝিনাইদহ কোট চাঁদপুর ১৩টি পাওয়ার টিলার বিক্রি নিয়ে প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে আজাদ রহমান প্রতিবেদনটি প্রকাশে মেসার্স রাখী এন্টারপ্রাইজের কাছে নিজেকে এসসিআইয়ের লোক পরিচয় দিয়ে কথা বলেন। বানোয়াট খবর প্রকাশ করে পাঠকদের ‘বিভ্রান্ত’ করে প্রথম আলো পত্রিকাটি সৎ সাংবাদিকতা করছে না দাবি করে তিনি বলেন, যতই বানোয়াট নিউজ ছাপান না কেন এতে যে আমি খুব একটা উত্তেজিত হব, এমন না। তারা তাদের ইচ্ছামতো নিউজ করে এবং সেইভাবে পাঠকদের বিভ্রান্ত করে। মন্ত্রী বলেন, আমি মন্ত্রী বলে সংসদে বিবৃতি দিয়ে প্রকৃত ঘটনা জানাতে পারছি। কিন্তু সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে অসত্য খবর প্রকাশিত হলে তার প্রতিকার কিভাবে পাবে? প্রতিবাদ দিলেও তারা (প্রথম আলো) তিন-চার লাইন দেন অথবা দেন না । এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, প্রথম দিন সংবাদ প্রকাশের পরেই মন্ত্রণালয় থেকে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি কোট চাঁদপুর এলাকায় বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিভিন্ন তথ্য যাচাই করে। এ সময় সাংবাদিক আজাদ রহমানের ডাকা হলেও তিনি যাননি। আমরা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিলে সেটা ছাপে না। কখনও আংশিক ছাপে। মন্ত্রী বলেন, প্রথম আলো বিষয়টি নিয়ে যে রিপোর্ট করেছে তা সত্য নয়। পাওয়ার টিলার বিক্রিকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক আসাদুল ইসলামের জবানবন্দীতেই তা প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত কমিটির কাছে আসাদুল ইসলাম বলেছেন, প্রথম আলো যা লিখেছে তার কোন সত্যতা নেই। আমি পুরনো পাওয়ার টিলার বিক্রি করি নাই। এ সময় মন্ত্রী বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে ৭৫ শতাংশ টাকা প্রাপ্তির পরেই কেবল কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে এসব পাওয়ার টিলার দেয়া হয়। যা পরবর্তীতে কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করার সুযোগ থাকে। কিন্তু যা হয়নি তাই নিয়ে তারা (প্রথম আলো) বার বার মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করছে। প্রসঙ্গত, গত ২৭ মে প্রথম আলো পত্রিকায় ‘কলের লাঙলের ভর্তুকির বড় ভাগ সরকারী দলের নেতাকর্মীদের পকেটে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ জুন সংসদে বিবৃতি দেন মতিয়া চৌধুরী। পরে আবারও ওই পত্রিকাটি সংবাদ প্রকাশ করলে মন্ত্রী পুনরায় বিবৃতি দেন। সর্বশেষ গত ২ জুলাই আবারও ‘প্রথম আলোর খবর অসত্য নয়, এখনও পাঁচজন লাঙল কেনেননি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করা হয় বলেন মন্ত্রী। প্রথম আলোর সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ জুলাই মন্ত্রণালয় আবারও তদন্ত করেছে বলে সংসদে জানান কৃষিমন্ত্রী। ওই তদন্তে প্রথম আলোর সংবাদ ‘অসত্য’ উল্লেখ করেন মতিয়া চৌধুরী। প্রথম আলোর প্রতিবেদক সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, প্রতিবেদক আজাদ রহমান ’৯৬-’৯১ সালে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সম্পাদক ছিলেন। ২০০০-৯৮ মেয়াদে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও তিনি প্রাক্তন মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের লোকসমাজ পত্রিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ভর্তুকি দেয়া চৌধুরী বলেন, একজন কৃষক ৭৫ ভাগ টাকা জমা দিলে পরে কিনতে পারে। তাও কাগজপত্র নিশ্চিত হওয়ার পর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে ভর্তুকির টাকা দেয়া হয়। কোন ব্যক্তিকে এই টাকা দেয়া হয় না। তিনি বলেন, মূলত এই বিষয়টি হয়ত প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ বোঝে না অথবা বুঝেও না বোঝার চেষ্টা করছে... অথবা এর পেছনে কোন উদ্দেশ্য নিহিত আছে।
×