ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মূল লক্ষ্য চাঁদাবাজি

প্রকাশিত: ০৫:০০, ৬ জুলাই ২০১৫

মূল লক্ষ্য চাঁদাবাজি

শাসক দলের কর্মী বা অনুসারী পরিচয় দিয়ে নানা ধরনের সুবিধা আদায়ের অপতৎপরতায় লিপ্ত হওয়া লোকের দেখা মেলে সব আমলেই। এদের অনেকেই আবার ম্যানেজ করায় পারদর্শিতাও দেখিয়ে থাকেন। ফলে সুপরিচিত বা প্রভাবশালী নেতাদের অনুগ্রহ লাভে সক্ষম হন তারা। সাংগঠনিক কার্যক্রমের দোহাই দিয়ে নানা অনুষ্ঠান আয়োজনে সদাব্যস্ত থাকলেও এদের আসল উদ্দেশ্য চাঁদাবাজির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন। সম্প্রতি এ জাতীয় লোকের দৌরাত্ম্য অনেকটাই বেড়ে গেছে। রাজধানীতে কমপক্ষে এক শ’ ভুঁইফোড় সংগঠন এ ধরনের অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে গজিয়ে ওঠা এসব ব্যানারসর্বস্ব সংগঠনের বিরুদ্ধে কখনও কখনও কোন কোন নেতা সোচ্চার হন বটে। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই এসব সংগঠনের একাধিক অনুষ্ঠানে নির্দিষ্ট কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সাইডলাইনে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাসহ দলসমর্থক কিছু ব্যবসায়ী নিয়মিত উপস্থিত হন। মিডিয়া কাভারেজ প্রত্যাশী এসব ব্যক্তি যেমন অর্থের বিনিময়ে কর্মসূচীগুলোতে প্রধান কিংবা বিশেষ অতিথি হন, আবার অনেক ক্ষেত্রে তাদের নাম ভাঙ্গিয়েও চাঁদাবাজি চলে। ‘পদক’ কিংবা ‘সংবর্ধনা’ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে উঠতি কিছু নেতা ও ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েও ‘পদক বাণিজ্যে’ লিপ্ত রয়েছে এরকম কিছু সংগঠন। অনেক সংগঠনের প্যাড ও চিঠিতে সংগঠনের কার্যালয় হিসেবে আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা উল্লেখ থাকে। অনেক সংগঠনের কেন্দ্রীয়, মহানগর ও থানা কমিটির নেতার নামে বড় বড় ব্যানার ও পোস্টার টানানো হয়ে থাকে। সংগঠনগুলোর সাইনবোর্ড, ব্যানার-পোস্টারে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি ব্যবহৃত হয়। উল্লেখ করা জরুরী, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম নয়টি সংগঠনের বাইরে অন্য কোন সংগঠনের দলীয় পরিচয় ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই। সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও কার্যক্রম পরিচালনায় বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম ব্যবহারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পূর্বানুমোদনও বাধ্যতামূলক। মুক্তিযুদ্ধের নামে কোন সংগঠন গড়তে চাইলে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের অনুমতি গ্রহণ আবশ্যক। ভুঁইফোড় সংগঠনের বেলায় এসব কিছুই মানা হয় না। পরিতাপের বিষয় নতুন ধরনের ওই চাঁদাবাজদের কারণে শাসক দলের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হলেও এর প্রতিকারে কোন ব্যবস্থা গৃহীত হতে দেখা যায় না। শাসক দলের কোন মন্ত্রী-এমপি এসব চাঁদাবাজের আমন্ত্রণ গ্রহণ করে তাদের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বা বিশেষ অতিথির আসন অলঙ্কৃৃত করলে ভুঁইফোড় সংগঠনগুলো এক ধরনের বৈধতা পেয়ে যায়। যারা জেনেবুঝেই এসব অনৈতিক কর্মকা- এবং দল তথা সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্টকারী তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত হন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। চাঁদাবাজি একটি ঘৃণিত কৌশল। যত মহান কর্মকা-ের কথা বলে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে কিংবা প্রচ্ছন্নভাবে ভীতি প্রদর্শন করে চাঁদা সংগ্রহ করা হোক না কেন, মানুষ চাঁদাবাজিকে কখনোই ভালো চোখে দেখে না। চাঁদাবাজরা মানুষের শ্রদ্ধা পায় না। যারা অবৈধ সংগঠন গড়ে তুলে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এটাই প্রত্যাশা।
×