ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পীদের শিল্পী জর্জে ব্রাসান্সকে নিয়ে প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৭:৫৭, ৫ জুলাই ২০১৫

শিল্পীদের শিল্পী জর্জে ব্রাসান্সকে নিয়ে প্রদর্শনী

গৌতম পাণ্ডে ॥ গ্যালারির চারপাশ ঘিরে শোভা পাচ্ছে ফ্রান্সের সোনালি সময়ের মানুষ জর্জে ব্রাসান্সের বিভিন্ন রকমের ছবি। কোনটাতে গিটার বাজিয়ে শ্রোতাদের গান শোনানোর মুহূর্ত, কোনটাতে তিনি সঙ্গীত কম্পোজ নিয়ে ব্যস্ত আবার কোনটাতে পড়ছেন নিজের লেখা কবিতা। গ্যালারির এক পাশে বৃহত আকারের টিভি পর্দায় ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে দেখানো হচ্ছে শিল্পী জর্জে ব্রাসান্সের কণ্ঠে ফ্রান্সের ভাষায় জনপ্রিয় গান। একটি গান শেষ হলে করতালির মাধ্যমে শিল্পীকে জানানো হচ্ছে সাধুবাদ। রাজধানীর আঁলিয়স ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে স্বল্প পরিসরে আয়োজিত এ প্রদর্শনী শুধুমাত্র ফরাসী এই কবি ও সঙ্গীত শিল্পীকে ঘিরে। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার খ্যাত কলাম্বীয় সাহিত্যিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মারকেজ এক সাহিত্য সভায় বলেছিলেন, আমার দৃষ্টিতে সমসাময়িক সেরা ফরাসী কবি হচ্ছে জর্জে ব্রাসান্স। বহুমুখী প্রতিভার আধিকারী ফরাসী এ ব্যক্তিত্বের জীবন, সাহিত্য ও সঙ্গীত নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে আঁলিয়স ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকা। ব্রাসান্স এমন একজন যিনি ফ্রান্সের বাইরেই বেশি সমাদৃত। তিনি শুধু শ্রোতাদের শিল্পী নন বরং শিল্পীদেরও শিল্পী। তাঁর কবিতা ও গান ত্রিশটি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। তিনি সাহিত্যে যেমন ছিলেন পারদর্শী তেমনি গানেও ছিলেন শ্রোতাদের মধ্যমনি। তিনি ছিলেন একক নৈরাজ্যবাদী যিনি সম্মিলিত সংগ্রামে অংশ নেন নাই। তিনি তেমন মানুষ যিনি যুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিলেন। ছিলেন আদর্শবাদী সমাজের ভনিতার বিপক্ষে। তিনি পুলিশী স্বেচ্ছাচারিতারও বিরুদ্ধে ছিলেন। বিজ্ঞান, শিক্ষণ ও কৌতুকের সমন্বয় হলো ব্রাসেনস অ লা লিবার্টে। সাহিত্যে তাঁর আপন এক জগৎ ছিল। ব্রাসান্স ১৯২১ সালে দক্ষিণ ফ্রান্সের সেটে শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রায়ই লেখালেখি আর সুরসংযোজনায় নিজেকে মগ্ন রাখতের এই শিল্পী। ছোটবেলা থেকেই মায়ের সঙ্গে সেটে শহরে বেড়ে ওঠেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল। পরবর্তীতে গান ও কবিতা লেখার প্রতি ঝুকে পড়েন, পাশাপাশি নিজেকে সঙ্গীত চর্চার প্রতিও মগ্ন রাখেন। তিনি অনেক গান ও কবিতা লিখেছেন। যেগুলো পরবর্তীতে অনেক জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৫২ থেকে ৫৭ সাল পর্যন্ত তিনি প্রায় ৪০টি গানের এ্যালবাম বের করেছেন। ১৯৯১ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। জীবনের শুরুতে এই গুণী শিল্পী ছিলেন লাজুক, নিজের ক্ষেত্র তৈরির মাধ্যমে আস্তে আস্তে তিনি স্বচ্ছন্দ হন। ফ্রান্সের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিটার বাজিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করতেন। নিজের কণ্ঠের জাদু দিয়ে অসংখ্য শ্রোতাদের প্রিয় হয়ে ওঠেন। লোকজন কনসার্টে ভিড় করতে থাকল। এ্যালবামগুলোও আলোড়ন তুলছিল। নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা সবাই ব্রাসেনসের ভক্ত হয়ে উঠেছিলেন। এসব নিয়েই চলছে প্রদর্শনী। ব্রাসান্সের জীবনের শেষ দিকটাও ছিল চমকপ্রদ। প্রদর্শনীর শেষ অংশেও এর ছাপ পাওয়া যায়। এটা ছিল আনন্দদায়ক ও পরস্পর সম্পর্কিত। এই পর্যায়ে এসেই ব্রাসেনসকে পুরোপুরি চেনা গেল। যে মানুষ সময়ের চেয়ে এগিয়ে। ভিন্ন তিনি বিষয়ে ও উপস্থাপনায়। এক সময় প্রশ্ন উঠেছিল, কে হতে পারবেন ব্রাসেনসের উত্তরাধিকার? এই প্রশ্নটিই প্রদর্শনীর শেষাংশ যেটা শুরু করেছেন জোয়ান সফার। তিনি জর্জ ব্রাসেনসকে নতুন করে তুলে ধরেছেন। জানা যায়, প্রদর্শনীর শব্দাবলি ব্রাসান্সের তৈরি করা সঙ্গীত থেকে নেয়া অথবা সাক্ষাতকারের অংশবিশেষ। এগুলো সংগৃহীত হয়েছে বেতারের আর্কাইভ থেকে। কিছু পাওয়া গেছে তাঁর ব্যক্তিগত আর্কাইভেই। টেলিভিশন আর্কাইভ থেকে সংগৃহীত চিত্রাবলিতে আছে তাঁর প্রথম টিভি উপস্থিতি, অ্যাপস্ট্রফিজ নামের সৈনিকদের একটি অনুষ্ঠানে তাঁর হঠাৎ উপস্থিতি, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে জঁ ফেরাতের সঙ্গে কথোপকথন। আরও আছে ফাভিনোর ওয়ার্কশপ যেখানে ব্রাসেনসের সবগুলো গিটার তৈরি করা হয়েছিল। আছে ব্রাসেনসের আইডল টিনো রসির সঙ্গে ডুয়েট। এই অডিওভিস্যুয়াল মেটেরিয়ালগুলোর মাধ্যমে প্রদর্শনীটি পরিভ্রমণ করছে এবং একটি মাল্টিমিডিয়া মডিউল হিসেবে হচ্ছে সহজলভ্য। প্রদর্শনীটি চলবে ২২ জুলাই পর্যন্ত। সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা এবং শুক্র ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি খোলা থাকবে। রোববার সাপ্তাহিক বন্ধ। প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত।
×