স্টাফ রিপোর্টার ॥ তাঁরা দু’জনেই চিত্রকলা ভুবনের মানুষ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে দীক্ষা নেয়ার সময় তাঁদের মাঝে গড়ে ওঠে সখ্য। সেই সখ্যের সূত্র ধরে এক সময় জড়িয়ে পড়েন সংসার জীবনে। তবে থেমে থাকেনি তাঁদের শিল্পযাত্রা। লোকজশিল্পের প্রতি প্রবল অনুরাগী এই শিল্পী যুগল হলেন সামিনা নাফিজ ও আফজালুর রহিম। এই প্রথম একসঙ্গে এক আঙিনায় উপস্থাপিত হলো তাঁদের সৃজিত শিল্পকর্ম। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চিত্রশালায় চলছে এই শিল্পী দম্পতির প্রদর্শনী। দেশের লোকজশিল্পীদের সৃজনশীল কাজের স্মরণে নিবেদিত এ প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘ইন রিমেমবারেন্স অব দ্য ফোক আর্টিস্টস এ্যান্ড দেয়ার ক্রিয়েশন্স’। চিত্রকর্মের সঙ্গে আয়োজনে সংযুক্ত হয়েছে টেরাকোটা, স্থাপনাশিল্প ও জামদানি শাড়ির ওপর গবেষণাধর্মী কর্মপ্রবাহ।
তেল রংয়ের আশ্রয়ে চিত্রপট রাঙিয়েছেন সামিনা নাফিজ। প্রতিটি ক্যানভাসে রঙের খেলায় চিত্রায়িত হয়েছে দেশজ সংস্কৃতির নানা অনুষঙ্গ। পল্লী স্মৃতি শিরোনামের সিরিজ ছবি এঁকেছেন এই শিল্পী। তাঁর প্রতিটি চিত্রকর্মের নানাভাবে নক্সাবহুল জামদানি শাড়ির পার। তেমনই একটি ছবিতে দৃশ্যমান হয়েছে গাঢ় নীল জমিনের জামদানি শাড়ি। আর শাড়িটির ওপর প্রতিস্থাপিত হয়েছে লোকজ অনুষঙ্গবাহী ফুলতোলা রঙিন সুতার হাতপাখা। ঠিক তার পাশেই ঠাঁই পেয়েছে ফুলদানি। তাতে শোভা পাচ্ছে সবুজ পাতার সঙ্গে উজ্জ্বল হলদে রঙের ফুল। আরেকটি ছবিতে কারুকার্যখচিত শাড়ির সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে বেতের ঝুড়ি। আর ঝুড়িটির ভেতর থেকে যেন উঁকি দিচ্ছে ডাল ঘুটনি, মোমদানি, নারকেলের উরহীসহ নানা কিছু। এভাবেই শিল্পী লোককলার নানা অনুষঙ্গের ব্যবহারে রাঙিয়েছেন আপন চিত্রপট। সেসব ছবিতে হাতপাখা, ফুল, চরকা, শখের হাড়ির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জামদানি শাড়ির রকমারি নক্সা। প্রদর্শনালয়ের চারপাশে ছড়ানো আফজালুর রহিমের টেরাকোটাগুলো দারুণ নজর কাড়ে। মাটির বুকে এই শিল্পী ভাসিয়েছেন তাঁর শিল্পকে। সৃজনের বৈভবে মৃত্তিকার উপর প্রতিফলিত হয়েছে নানা অবয়ব। তেমনই একটি শিল্পের শিরোনাম কান্তজীর। কাঠের বোর্ডে বাঁধাইকৃত ফ্রেমের ভেতর থেকে দৃশ্যমান হয়েছে বিশাল এক হাতি। আর হাতিকে পরিচালিত করছে তার ওপর চড়ে বসা মাহুত। মাহুতের পেছনে বসে রয়েছে কয়েকজন যাত্রী। হাতির সামনে পায়ে হেঁটে এগিয়ে চলেছে পাহারাদার। নৌকা শীর্ষক টেরাকোটার কাজটি যেন মনে করিয়ে দেয় নদীমাতৃক বাংলাদেশের কথা। পোড়ামাটির এ শিল্পকর্মটিতে একসঙ্গে উপস্থাপিত হয়েছে কয়েকটি নৌকার সামনের অংশ। আর নৌকাগুলোর নিচে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে খরস্রোতা ঢেউ। এছাড়া শিল্পীর আরেকটি টেরাকোটায় নান্দনিক কৌশলে মেলে ধরেছেন গরুর চাকা। শুধু টেরাকোটা নয়, আফজালুর রহিম জামদানি শাড়ির ওপর নিরীক্ষামূলক স্থাপনাশিল্পও উপস্থাপন করেছেন প্রদর্শনীতে। চরকা, মাকু ও নানা বর্ণের সুতার সঙ্গে জামদানি শাড়ির দৃষ্টিনন্দন সমন্বয় ঘটেছে স্থাপনাশিল্পটিতে। এই প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপে ভবিষ্যতে জামদানি নিয়ে গবেষণাধর্মী কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন আফজালুর রহিম।
প্রদর্শনী প্রসঙ্গে কথা হয় সামিনা নাফিজের সঙ্গে। লোকজ ঐতিহ্যের অনুরাগী এই শিল্পী বলেন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সময় থেকেই এ দেশের চারুকলার ইতিহাসের সূচনা হয়। অন্যদিকে আমাদের কারুকলার ইতিহাস হাজার বছরের। এর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছে সাধারণ মানুষের সম্পর্ক। আবহমান গ্রাম বাংলার যে কোন মেলায় আমরা ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পের দেখা পেতাম। অথচ উদাসীনতা ও চর্চার অভাবে ক্রমশই যেন বিবর্ণ হচ্ছে লোকশিল্প। শিল্পের এই মাধ্যমটির প্রতি এখনই গুরুত্ব না দিলে এক সময় হয়ত বিলুপ্তির পথে ধাবিত হবে। তাই লোকশিল্পের জাগরণের প্রত্যাশা নিয়ে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
৩ জুলাই শুরু হওয়া চার দিনের এ প্রদর্শনী শেষ হবে ৬ জুলাই। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
আবীর আব্দুল্লাহর আলোকচিত্র প্রদর্শনী ॥ আলোকচিত্রী আবীর আব্দুল্লাহর ১১ দিনব্যাপী ‘নি ডিপ’ শীর্ষক একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী শুরুর মধ্য দিয়ে শুরু হলো ‘লঙ্গিট্যুড ল্যাটিট্যুড-৬’ শীর্ষক ৪ মাসব্যাপী শিল্প প্রদর্শনী। শনিবার রাজধানীর বনানীর বে ডেভেলপমেন্টের বে-বেলাভিস্তার নতুন গ্যালারিতে শুরু হয় এই প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী ওয়াকিল আহাদ।
প্রদর্শনী প্রসঙ্গে আবীর আবদুল্লাহ জানান, বাংলাদেশে বসবাস প্রাকৃতিক নানা কারণে কখনই খুব সহজ নয়। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনার সঙ্গমে- গঙ্গার বদ্বীপে বাংলাদেশের অবস্থান। প্রতিবছর বর্ষায় বন্যার সম্ভাবনা থাকে সবসময়েই। উপকূলবাসীরা সম্মুখীন হয় সাইক্লোন আর টর্নেডোর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের। বন্যার সময়ে উপকূলবর্তী সমগ্র অঞ্চল হাঁটু পানিতে ডুবে যাওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা। এ সকল ঘটনা বৈশ্বিক উষ্ণতারই ফলাফল- এ সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণা এখন পর্যন্ত না হয়ে থাকলেও সকল গবেষণাপত্রেই এর ইঙ্গিত থাকে যে বাংলাদেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য প্রভাব।
আবীর আবদুল্লাহর আলোকচিত্র প্রদর্শনীটি চলবে আগামী ১৪ই জুলাই পর্যন্ত। সকলের জন্য উন্মুক্ত এই প্রদর্শনীটি প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: