ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঈদের কেনাকাটা

রাজধানীর শপিংমল মার্কেট ফ্যাশন হাউসে উপচেপড়া ভিড়

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৫ জুলাই ২০১৫

রাজধানীর শপিংমল মার্কেট ফ্যাশন হাউসে উপচেপড়া ভিড়

রহিম শেখ ॥ হাতেগোনা কদিন বাদেই ঈদ। ইতোমধ্যে রোজার অর্ধেক সময় পার হয়ে গেছে। ধনী-গরিব সবাই মিলে এখন ঈদের কেনাকাটায় মহাব্যস্ত। চলছে জমজমাট বেচাকেনা। ক্রেতারা পছন্দের পোশাকটি কিনতে ভিড় করছেন রাজধানীর বিপণিবিতান, ফ্যাশন হাউস, শপিংমল ও মার্কেটগুলোতে। কেনাকাটায় সবচেয়ে এগিয়ে নারী ও ফ্যাশন সচেতন তরুণীরা। পিছিয়ে নেই পুরুষ ও হাল আমলের তরুণরা। শপিংয়ে বড়দের সঙ্গে সামিল হচ্ছেন ছোটরাও। এখন পাইকারিতে বেচাকেনা ধীরগতি হলেও খুচরা বাজারে বিক্রি তুঙ্গে। বিক্রেতারা বলছেন, শুরুতে বৃষ্টির বাগড়া থাকায় বেচাকেনা জমেনি। তবে ১০ রমজানের পর থেকে বেচাকেনা ভাল জমজমাট। এদিকে ঈদ বাজারে যানবাহনের বাড়তি চাপে দীর্ঘ জ্যামে প্রতিদিনই নাকাল হতে হচ্ছে ক্রেতাদের। তারপরও ভোগান্তির সীমারেখা পাড়ি দিয়ে সবাই চেষ্টা করেছেন সাধ আর সাধ্যের সবটুকু দিয়ে ঈদের কেনাকাটায় ভাল জিনিসটি নিয়ে ঘরে ফিরতে। আজ রবিবার রমজানের ১৭তম দিন। ইতোমধ্যে মাসব্যাপী রমজানের অর্ধেকের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। আর কদিন পরই মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। আর এ উৎসবের সঙ্গে নতুন পোশাকের সংযোগ নিবিড়। রাজধানীর অভিজাত শপিংমল থেকে শুরু করে ফুটপাথেও এখন ক্রেতার উপচে পড়া ভিড়। সাধ আর সাধ্যের সমন্বয় ঘটাতে ধনী-গরিব সবাই এখন ঈদের কেনাকাটায় মহাব্যস্ত। প্রায় সব বিপণিবিতানগুলোতে অনেক রাত পর্যন্ত চলেছে বিকিকিনি। তুলনামূলক সবচেয়ে বেশি ভিড় শাড়ি ও থ্রি পিসের দোকানে। ভারতীয় চলচ্চিত্র ও সিরিয়ালের নামে এবারও মেয়েদের পোশাক নিয়ে মাতামাতি চলছে ঈদ বাজারে। ক্রেতারাও খুঁজে ফিরছেন এসব ড্রেস। এছাড়া দেশী কাপড় ও ডিজাইনারদের তৈরি পোশাকের বুটিক হাউসগুলোতে ভিড় বেশি লক্ষ্য করা গেছে। পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, শার্ট ও জিন্স প্যান্টের দোকানেও বেশ ভিড়। পা ফেলার জায়গা নেই শিশুদের পোশাক ও খেলনা সামগ্রী, কসমেটিক্স ও গহনার দোকানেও। ভিড় বাড়ছে জুতোর দোকানেও। বাদ নেই ইলেকট্রনিক্স দোকানও। টেইলারিং শপগুলোর রাত-দিন এখন আলাদা করে দেখার উপায় নেই। রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট, আজিজ সুপার মার্কেট, চাঁদনী চক, রাপা প্লাজা, এআর প্লাজা, এলিফ্যান্ট রোডের দোকান, ফার্মগেটের সব মার্কেট, ফুটপাথ, গুলিস্তানের পুরো এলাকা, মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট, শাহ আলী মার্কেট, খিলক্ষেতের রাজউক ট্রেড সেন্টার, উত্তরার নর্থ টাওয়ার, রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন বিপণিবিতান ও মহল্লার বুটিকশপ ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। জানা গেছে, সারাদেশে ছোট-বড় মিলে দোকান রয়েছে প্রায় ২৫ লাখ। এর মধ্যে বড় দোকানের সংখ্যা ২০ লাখ। এর সঙ্গে ফুটপাথসহ ঈদ উপলক্ষে আরও প্রায় ৫ লাখের বেশি ছোট ছোট দোকান বসে এই ঈদ মৌসুমে। ঈদে অন্য সময়ের চেয়ে প্রায় দশগুণ বেশি লেনদেন হয় এসব দোকানে। বিশেষ করে ঈদের বাজারে সবচেয়ে বড় অংশজুড়েই রয়েছে বস্ত্র ও খাদ্যসামগ্রী। বস্ত্রের মধ্যে পায়জামা, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, শাড়ি, লুঙ্গি ও টুপি প্রধান। এরপর রয়েছে জুতো, প্রসাধনী, স্বর্ণালঙ্কার। এসব অধিকাংশ দোকানে ১০ রমজানের পর থেকে জমজমাট বেচাকেনা হচ্ছে। বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের ইনফিনিটির ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, গত সপ্তাহের তুলনায় ক্রেতা ও বিক্রির পরিমাণ দুটোই বেড়েছে। ছেলেদের পাঞ্জাবি ও প্যান্ট এবং মেয়েদের পোশাক বিক্রি হচ্ছে ভালই। বসুন্ধরার নিচতলায় জিমি ফ্যাশনে ‘গ্রাউন ফ্লোর টাচ’ নামের একটি ড্রেস কিনেছেন মিরপুর এলাকার বাসিন্দা নূসরাত আলভিনা। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, গতবারের তুলনায় এবার মেয়েদের ড্রেসের দাম অনেক বেশি। মার্কেটের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও সপ্তম তলায় ছেলেদের পাঞ্জাবি, ফতুয়া এবং প্যান্টের দোকানে ক্রেতার ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। দর্জিবাড়ির বিক্রয়কর্মী রেদোয়ান জানান, ছেলেরা বারবার মার্কেটে আসতে চান না। তাই একবারেই কেনাকাটা সারতে চান। ছুটির দিনগুলোতেই আসেন ছেলেরা। ছেলেদের পাঞ্জাবির দাম এসব দোকানে এক হাজার ২০০ থেকে পাঁচ টাকা হাজার পর্যন্ত। জিন্স প্যান্টের দাম দেড় থেকে চার হাজার টাকা। ‘দেশীদশে’র দোকানগুলোর পাঞ্জাবির দাম ৬০০ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। কেনাকাটা, বিনোদন আর ভোজনবিলাসিতাÑ এই তিনটির সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করেছে যমুনা ফিউচার পার্ক। দেশের প্রায় বড় বড় ফ্যাশন হাউস, কাপড়ের দোকান, জুতোর দোকান, সুগন্ধিসহ এ মার্কেটে রয়েছে বিদেশের নামিদামী ব্র্যান্ডের আউটলেট। শনিবার আড়ং, ইনফিটিনিটি, ক্যাটস্ আই, নবরূপা, ইয়েলো, এক্সটেসি, রিচম্যান, স্টেশন ২১ ও মড, সাদাকালোসহ প্রায় সব দোকানে বিক্রয়কর্মীদের ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা গেছে। বিক্রেতারা জানান, গত সপ্তাহের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা ও বিক্রি বেড়েছে। এখন শিশু ও মেয়েদের পোশাক বিক্রি হচ্ছে বেশি। রামপুরা থেকে আসা লাভলী আক্তার জানান, এক ছাদের নিচে সব আয়োজন থাকায় শপিং করে ভাল লাগছে। কেনাকাটার পাশাপাশি বাচ্চাদের খেলাধুলা এমনকি বড়দের বিনোদনের ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। গাউছিয়া, চাঁদনী চক, ধানম-ি হকার্স ও নিউমার্কেটে ঈদ উপলক্ষে বেশি বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় হিন্দি ছবি, সিরিয়াল ও নায়িকাদের নামে ট্যাগ করা পোশাক। নিউমার্কেটের গাউছিয়ার জুয়েল ফ্যাশনের বিক্রেতারা বলেন, এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ‘কিরণমালা’। বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া আধুনিক ও নতুন নতুন ডিজাইনের ভারতীয়, পাকিস্তানী ও দেশী সেলাই করা এবং সেলাইবিহীন থ্রি-পিসও বিক্রি হচ্ছে বিপণিবিতানগুলোতে। নিউমার্কেটের ইমিটেশন গহনার দোকানগুলোতে তরুণীদের ভিড়ও আগের তুলনায় বেড়েছে। পোশাক ও শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে গহনা কিনছেন হাল আমলের তরুণীরা। আজিমপুর থেকে নিউমার্কেটে আসা গৃহবধূ সিনথিয়া ইসলাম জানান, পুরান ঢাকায় অনেক বড় বড় দোকান আছে। কিন্তু ছোটবেলা থেকে আমরা নিউমার্কেটে কেনাকাটা করেছি। এখানে দাম খুব একটা যে কম তা নয়, তবে অনেক চেনা দোকান আছে। বৃষ্টি হলেও শুক্রবার ছুটির দিন বলেই মার্কেটে এসেছি। ফুটপাথেও উপচেপড়া ভিড় ॥ ‘দেইখ্যা লন, বাইছ্যা লন এক দাম দেড় শ’। রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউর ফুটপাথ ধরে এমন সেøাগান এখন নিত্যদিনের। সারি সারি স্টল সাজিয়ে বাহারি পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। প্রতিটি স্টলেই উপচেপড়া ভিড়। শুধু গুলিস্তান নয়, রাজধানীর বায়তুল মোকাররম উত্তর ও দক্ষিণ গেট, মতিঝিলের শাপলা চত্বর, আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের সামনে, সেগুনবাগিচা, মৌচাক, ফার্মগেট ও মিরপুরে ১০ গোল চত্বর ও ১ নম্বর ফুটপাথ সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সর্বত্রই ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়।
×