ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম ধাপ সম্পন্ন হবে তিন বছরে

চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বে-টার্মিনাল নির্মাণে সমীক্ষা শুরু

প্রকাশিত: ০৭:১১, ৪ জুলাই ২০১৫

চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বে-টার্মিনাল নির্মাণে সমীক্ষা শুরু

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বে-টার্মিনাল নির্মাণ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ বে-টার্মিনালের প্রথম ধাপ অর্থাৎ বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শেষ হবে আগামী তিন বছরের মধ্যে। পূর্ণাঙ্গ টার্মিনাল নির্মাণ করতে সময় লাগবে কমপক্ষে ৮ বছর। আগামী ২০২৩ সাল নাগাদ ছোট আকারের এ বন্দর নির্মাণের কাজ শেষ হবে আশা করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বে-টার্মিনাল (ছোট বন্দর) নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ শেষে নৌ-মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন আসার অপেক্ষায় ছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি নৌ-মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন আসার পর এ প্রকল্পে গতি এসেছে। ল্যান্ড ফিজিবিলিটি স্টাডি (ভূমি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা) শেষ হলে ছোট বন্দরের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া পুরোদমে শুরু হবে। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমার শেষ প্রান্তে প্রায় ৯০৭ একর জমির ওপর নিজস্ব অর্থায়নে বে-টার্মিনাল নামে মিনি আকৃতির বন্দর গড়ে তোলা হবে। পূর্ণাঙ্গ বন্দরটি তৈরি করতে ৮ বছরেরও বেশি সময় লেগে যাবে। তবে ছোট এই বন্দরের প্রথম অংশ বাল্ক টার্মিনালের নির্মাণ কাজ আগামী তিন বছর অর্থাৎ ২০১৮ সাল নাগাদ শেষ করা হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন) মোঃ জাফর আলম বলেন, ‘ছোট বন্দরটি নির্মাণের আগে ভূমির ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হচ্ছে। ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ হলেই কাজের গতি আরও বাড়বে। শুরুতে বে টার্মিনালের প্রথম অংশ ডলফিন জেটি আকারে বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। আশা করছি ২০১৮ সাল নাগাদ এর নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। আর পূর্ণাঙ্গ বন্দর নির্মাণে ২০২৩ সাল নাগাদ সময় লাগবে’। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করতে ১৩টি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই শেষে কাজ করার অনুমোদন দেয়া হবে বলেও জানান তিনি। তিনি জানান, ‘আমরা ছোট বন্দরের নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করতে চাই। বে-টার্মিনালে কার্যক্রম চালু হলে আমদানি-রফতানি কয়েকগুণ বেড়ে যাবে’। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমুদ্রপথে দেশের বহির্বাণিজ্যের প্রায় ৯৩ শতাংশ সম্পাদিত হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। এ বন্দর দিয়ে বর্তমানে বছরে ১৬ লাখ টিইইউএস কনটেনার হ্যান্ডলিং হয়ে থাকে। এ বন্দরের আমদানি-রফতানি প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ১৩ শতাংশ, যা দেশের গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধির তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। ছোট এ বন্দরটি নির্মাণ সম্পন্ন করতে পারলে চট্টগ্রাম বন্দরের বড় অর্জন সাধিত হবে বলেই মনে করেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে বড় জাহাজগুলো বার্থিং করতে না পারায় অনেক সময় দুর্ভোগ পোহাতে হয় ব্যবসায়ীদের। কর্তৃপক্ষ যদি ছোট এই বন্দর (বে-টার্মিনাল) নির্মাণ করতে পারে তবে শুধু চট্টগ্রাম নয় সারাদেশের ব্যবসায়ীরা দারুণভাবে উপকৃত হবেন। এর ফলে আমাদের আমদানি-রফতানি চিত্রের গ্রাফই বদলে যাবে। বন্দরের কার্যক্রমে গতিশীলতা বাড়ার পাশাপাশি বড় জাহাজ অনায়াসে বার্থিং করতে পারবে। এর সুফল হিসেবে পণ্যের পরিবহন ব্যয় অনেকাংশে কমে যাবে।’ বে-টার্মিনালটি নির্মাণের স্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে বন্দর সচিব ওমর ফারুক জানান, টোল সড়কের শেষ প্রান্তে আনন্দবাজার নামক জেটি এলাকায় এটি নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে বড় জাহাজ ভিড়তে পারে না। দিনের বেলা জোয়ারের সময় কম- বেশি ৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫ মিটার গভীরতা এবং সর্বোচ্চ ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারে। শীত মৌসুমে এ সঙ্কট আরও প্রকট হয়। এ সীমাবদ্ধতা কাটাতে নতুন এ বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ চ্যানেলে দিন-রাত যেমন জাহাজ ভিড়ানোর সুযোগ আছে, তেমনি চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে বেশি গভীরতার ও দৈর্ঘ্যরে জাহাজ চলাচলের সুযোগ রয়েছে বলেও জানান তিনি। উল্লেখ্য, পতেঙ্গার শেষ প্রান্তে প্রায় ১২ কিলোমিটার লম্বা চর জেগেছে। এ চর উপকূলের মাঝামাঝি প্রায় এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকায় পড়েছে। এটি প্রশস্ত হওয়ায় জাহাজ চলাচলের পথ বা চ্যানেল তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে জাহাজ ভিড়ানোর ক্ষেত্রে জাহাজের দৈর্ঘ্য ও গভীরতার যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে, নতুন চ্যানেলে তা নেই। এ কারণে নতুন চ্যানেল ঘিরে নতুন বন্দর তৈরি করতে বন্দর কর্তৃপক্ষের এ উদ্যোগ।
×