ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কলকারখানা

গ্রীসে ঘণ্টায় ঘণ্টায় ফুরিয়ে যাচ্ছে ব্যাংকের অর্থ

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ৪ জুলাই ২০১৫

গ্রীসে ঘণ্টায় ঘণ্টায় ফুরিয়ে যাচ্ছে ব্যাংকের অর্থ

গ্রীসের ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থের মজুদ ঘণ্টায় ঘণ্টায় ফুরিয়ে যাচ্ছে এবং কলকারখানাগুলো বন্ধ হতে শুরু করেছে। এতে দেশটি এক সর্বাত্মক জাতীয় সঙ্কটে পতিত হচ্ছে এবং ক্ষমতাসীন কোয়ালিশন সরকার ভেঙ্গে পড়ার গতি ত্বরান্বিত হচ্ছে। এদিকে, বর্তমান বিতর্কিত বেইলআউট পরিকল্পনার আওতায় গ্রীসের অর্থব্যবস্থা স্থিতিশীল করতে দেশটির জন্য আগামী তিন বছরে আরও ৫,০০০ কোটি ইউরোর প্রয়োজন হবে। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) এ কথা জানায়। গ্রীসের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার শূন্য হবে বলেও আইএমএফ এখন ভবিষ্যদ্বাণী করছে। এর আগে সেই হার ২ দশমিক ৫ ভাগ হবে বলে সংস্থাটি ভবিষ্যদ্বানী করেছিল। খবর বিবিসি ও টেলিগ্রামের। গ্রীসের ব্যবসায়ী নেতারা জরুরী নগদ অর্থ অবিলম্বে ছাড় করার অনুরোধ জানিয়ে ব্যাংক অব গ্রীসের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। পর্যটন খাত অচল হয়ে পড়ার আগে খাদ্য আমদানি ও ওষুধপত্র সরবরাহের জন্য সেই অর্থ চাওয়া হচ্ছে। কর্মকর্তা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শুক্রবারই তহবিল ছাড় করার কথা। কিন্তু এটি হবে বেশির পক্ষে এক অস্থায়ী ব্যবস্থা। গ্রীক অর্থমন্ত্রী ইয়ানিস ভারুফাকিস বলেন, আমরা এ দেশে এক যুদ্ধেই লিপ্ত রয়েছি। অনেকগুলো এটিএম মেশিনে দৈনিক অনুমোদিত উত্তোলনযোগ্য নগদ অর্থের পরিমাণ ৬০ ইউরো থেকে কমিয়ে ৫০ ইউরো করা হয়েছে। দৃশ্যত ২০ ইউরোর নোটগুলো শেষ হয়ে আসায় এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বহুসংখ্যক মেশিন খালি। পেট্রোল স্টেশন ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করা বন্ধ করে দেয়ায় আর্থিক সঙ্কট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ........ চেম্বারস অব কমার্সের প্রধান কনস্ট্যান্টাইন মাইকেলস বলেন, সহজ কথায় সর্বদা তাদের অর্থ ফুরিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি যে, ব্যাংকগুলোতে মজুদ নগদ অর্থের পরিমাণ ৫০ কোটি ইউরোতে নেমে এসেছে। ব্যাংকগুলো মঙ্গলবার আবার খুলবে বলে যারা ভাবছেন তারা দিবাস্বপ্ন দেখছেন। নগদ অর্থ এক ঘণ্টাও থাকবে না। তিনি বলেন, আমরা খুবই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে রয়েছি। ইউরোপের টার্গেট টু সিস্টেমের ইলেক্ট্রোনিক ট্রান্সফার থেকে গ্রীক কোম্পানিগুলোকে বাইরে রাখা হয়েছে। সমগ্র গ্রীক ব্যবসায়ী সমাজ কোনকিছুই আমদানি করতে পারছে না এবং কাঁচামাল ছাড়া তারা কোনকিছু তৈরি করতেও পারছে না। জাতীয়তাবাদী ইন্ডিপেন্ডেন্ট গ্রীকস পার্টির চারজন সদস্য বলেন, তারা দলীয় মত অগ্রাহ্য করে দরদাতাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে হ্যাঁ ভোট দেবেন। তারা স্বীকার করেন যে, তারা ব্যাংকিং ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় এবং সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে ভীত হয়ে পড়েছেন। দলটি কোয়ালিশন সরকারের অন্যতম শরিক। দলের কট্টরপন্থী প্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী পালোস কামেনস তাদের বক্তব্য উড়িয়ে দিয়ে বলেন, আমরা যুদ্ধে আছি এবং এ থেকে পিছু হটে যাব না। যাদের যুদ্ধ করার ইচ্ছা নেই তারা চলে যাক। যদি গ্রীক জনগণ ‘হ্যাঁ’ ভোট দেয়, তাহলে ভারুফাকিস পদত্যাগ করবেন বলে অঙ্গীকার করেন। তিনি ব্লুমবার্গ টিভিকে বলেন, আমি ঋণের পুনঃতফসিলীকরণ ছাড়া কোন চুক্তিতে সই করার চেয়ে বরং আমার নিজের হাত কেটে ফেলাই পছন্দ করব। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নির্বাহী শাখা ইউরোপিয়ান কমিশন চায়, এথেন্সের ঋণগত বাধ্যবাধকতা মেটানোর জন্য কর বৃদ্ধি ও জনকল্যাণ খাতে ব্যয় হ্রাস করুক। ইউরোপিয়ান কমিশন, আইএমএফ ও ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক গ্রীসের তিন ঋণদাতা। গ্রীক প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিম সিপরাস ঋণদাতাদের প্রস্তাবের প্রতি ‘না’ ভোট দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হলে আরও ভাল চুক্তি হওয়ার পথ সুগম হবে। কিন্তু ইউরোজোন অর্থমন্ত্রীদের সমিতি উইরো গ্রুপ বলেছে, কোন ‘না’ ভোটই গ্রীসকে এর অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার সহজ পথ দেখাবে না এবং গ্রীক প্রধানমন্ত্রীর অভিমত সহজ কথায় ‘ভুল’।
×