ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভেজাল প্রসাধনীতে সয়লাব রাজশাহীর ঈদ বাজার

অসংখ্য নকল কারখানা

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৪ জুলাই ২০১৫

অসংখ্য নকল কারখানা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ ঈদ সামনে রেখে রাজশাহীর বাজার ভরে গেছে ভেজাল ও নিম্নমানের প্রসাধানীতে। নগরীর অজিযাত মার্কেটগুলোতে বিক্রি হচ্ছে এসব মানহীন পণ্য। এতে প্রতারিত হচ্ছে ভোক্তা। তবে তৎপরতা নেই মাননিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসটিআই ও স্থানীয় প্রশাসনের। এরই মধ্যে জমে উঠেছে ঈদের বাজার। ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন প্রসাধনীর দোকানগুলোতে। কিনছেন বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী। দেশী-বিদেশী ব্র্যান্ডের এসব পণ্য বিক্রিও হচ্ছে চড়া দামে। কিন্তু চকচকে মোড়কের আড়ালে কি কিনছেন এ নিয়ে ভ্রƒক্ষেপ নেই কারও। এক শ্রেণীর মুনাফালোভী কৌশলে ক্রেতাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন ভেজাল ও নিম্নœমানের প্রসাধনী সামগ্রী। নগরীর বিভিন্ন মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য। আর এগুলোর বেশীরভাগই যোগান আসছে নগরীর ও আশপাশের এলাকায় গড়ে ওঠা ভেজাল সব কারখানা থেকে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী নগরীতেই গজিয়ে উঠেছে অন্তত এক ডজন ভেজাল প্রসাধন কারখানা। আর নগরীর বাইরে আরও অসংখ্য ভেজাল কারখানা রয়েছে। নগরীর শিরোইল, শিরোইল কলোনী এলাকায় রয়েছে বেশী। এছাড়া জেলার পুঠিয়ায় গড়ে উঠেছে প্রসাধনী তৈরির আরও প্রায় ২০টি অবৈধ কারখানা। রাজশাহীজুড়ে সাব-কারখানা রয়েছে আরও অন্তত অর্ধশতাধিক। এসব কারখানার ভেজাল পণ্যে এখন ভরপুর রাজশাহীর বিপণি বিতান। অনুসন্ধানে জানা যায়, শতভাগ গায়ের রং ফর্সা করার প্রলোভন দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় রীতিমতো পোস্টার ও দেয়াল লিখন এবং মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা করছে অবৈধ কারখানার মালিকরা। পুঠিয়ার বেলপুকুর, বানেশ্বর, শিবপুরহাট, বিড়ালদহ বাজার, পুঠিয়া সদর, ঝলমলিয়া বাজার, ধোপাপাড়া, শিলমড়িয়াসহ গ্রামাঞ্চলের বাড়ি অথবা ঘর ভাড়া করে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে এসব প্রসাধনী কারখানা। এর মধ্যে বানেশ্বর বাজার এলাকায় মর্ডার্ন কসমেটিক্স এ্যান্ড হারবাল ইন্ডাস্ট্রি, রূপসী গোল্ড ক্রিম, সানোয়ার মেডোনা স্পট ক্রিম ও হারবাল প্রসাধনী, চ্যালেঞ্জার হারবাল ও প্রসাধনী, শিবপুর বাজার এলাকার ডিজিটাল হারবাল, ইয়াং লেডি, সীনা স্পট ক্রিম, সুন্দরী হারবাল ক্রিম ও প্রসাধনী, হোয়াইট গোল্ড, গোল্ডেন ক্রিম, রোমাঞ্চ হারবাল ও স্পট ক্রিম, ডায়মন্ড স্পট ক্রিম উল্লেখযোগ্য। এসব কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা জানান, কারখানা ও সাব-কারখানাগুলোতে বাজারের বিভিন্ন নামী-দামী ব্র্যান্ডের প্রসাধনী পণ্যের পরিত্যক্ত মোড়ক সংগ্রহ করে পরে সেগুলোতে স্টিলম্যান, টিয়ারিক এ্যাসিড, আইসোপ্রোপাইল, মাইরিস্টেড এবং সাধারণ পানির মিশ্রণে তৈরি রং ফর্সাকারী বিভিন্ন প্রকার প্রসাধনী তৈরি করে সেগুলো দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের নামী-দামী দোকান এবং বিউটি পার্লারে পৌঁছে দেয়া হয়। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের প্রধান ডাঃ মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ভেজাল প্রসাধনী ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষতি ও জটিল রোগ দেখা দিতে পারে। এজন্য ভেজাল প্রসাধনী পরিহারের আহবান জানান তিনি। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএসটিআই রাজশাহীর পরিচালক এবিএম মর্তুজা হোসেন বলেন, তাদের অভিযান চলছে। প্রতিদিনই কোন না কোনভাবে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। তবে জনবল সঙ্কটসহ নানান প্রতিবন্ধকতায় অভিযান জোরদার করা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, গত জুন মাসে ২০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ২৪টি সার্ভিলেন্স পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময় বিপুল পরিমাণ ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য জব্দ করে ধ্বংস করা হয়েছে।
×