ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের মাটিতে টি২ খেলবে দুই দল, ৬ বছর ৭ মাস পর দুই দল টি২’তে লড়াই করবে, চার বছর পর খেলবে ওয়ানডে, সাড়ে ছয় বছর পর খেলবে টেস্ট!

বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ শুরু রবিবার

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৪ জুলাই ২০১৫

বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ শুরু রবিবার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সবাই চায় নতুনত্ব। সেই নতুনত্বে চোখ যেন ধাঁধিয়ে যায়। ভারতের বিপক্ষে সিরিজে বাংলাদেশ চার পেসার খেলিয়ে দিয়ে চমক দেখিয়েছিল। এবার সিরিজ শুরুর আগেই দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল অনুশীলনে ‘ড্রোন ক্যামেরা’ ব্যবহার করে সবাইকে চমকে দিয়েছে। এর জন্য অবশ্য ক্ষমাও চাইতে হয়েছে। এখন প্রথম টি২০ দিয়ে রবিবার শুরু হতে যাওয়া দুই টি২০, তিন ওয়ানডে, দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকাকে চমকে দেয়ার পালা বাংলাদেশেরও। কিভাবে বাংলাদেশ চমকে দেবে? কিভাবে আবার, স্পিনে। স্পিন শক্তি মজবুত করেই নিয়েছে মাশরাফিবাহিনী। এখন সেই স্পিন বিষে প্লেসিস, ভিলিয়ার্সদের লাল করার অপেক্ষা। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা টি২০ ম্যাচ হবে। উপমহাদেশের উইকেটে এমনিতেই স্পিনে দুুর্বল দক্ষিণ আফ্রিকানরা। আবার এরসঙ্গে তীব্র গরমও ভোগাচ্ছে প্রোটিয়াদের। এ সুযোগে স্পিন জাদু দেখিয়ে যদি দক্ষিণ আফ্রিকাকেও হারিয়ে দেয়া যায়, তাহলে প্রথমবারের মতো দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শুধু জয়ই মিলবে না, টি২০’তেও দুইবার হারের পর সফরকারীদের প্রথমবারের মতো হারানোর গৌরব অর্জন করবে বাংলাদেশ। সেই যে দুই দল ২০০৮ সালের নবেম্বরে সর্বশেষ টি২০’তে মুখোমুখি হয়, ৬ বছর ৭ মাস পর আবার পরস্পরের বিপক্ষে লড়াই করবে। এ লড়াইয়ে জিতলে ‘বদলে যাওয়া বাংলাদেশে’র প্রতিচ্ছবিই সবার কাছে গচ্ছিত থাকবে। আর বাংলাদেশ যদি কোন সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতে, তাহলে সিরিজ জয়ের স্বপ্নও দেখা শুরু হয়ে যায়। তাতে সাফল্যও মেলার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজ হবে আগে। এরপর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ হবে। সবশেষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম টি২০ দিয়ে রবিবার শুরু হবে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের মাটিতে প্রথমবার টি২০ খেলতে নামবে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৭ জুলাই সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি২০ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ১০ জুলাই যে প্রথম ওয়ানডে দিয়ে ৫০ ওভারের ম্যাচের সিরিজ শুরু হবে এ ম্যাচটির মাধ্যমে ২০১১ সালের বিশ্বকাপের পর, চার বছর পর আবারও বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়ানডে ম্যাচ হবে। ১২ ও ১৫ জুলাই যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। ওয়ানডে সিরিজ শেষে ২১ জুলাই প্রথম টেস্ট শুরু হবে। এ টেস্টটি শুরু হতেই ৬ বছর ৭ মাস পর টেস্টেও দুই দল পরস্পরের বিপক্ষে লড়াই করবে। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারির পর, সাত বছর পর বাংলাদেশের মাটিতে টেস্ট খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৩০ জুলাই দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে। যদি প্রথম টি২০ জিতে যেতে পারে বাংলাদেশ, তাহলে বাকি ম্যাচগুলোতে জয়ের সম্ভাবনা থাকবে। তাতে করে টি২০ সিরিজও জিতে নেয়ার আশা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। যদি কোনভাবে সিরিজ জয় হয়ে যায়, তাহলে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকাকেও সিরিজ হারানোর স্বাদ পাবে বাংলাদেশ। অবশ্য টি২০ জয়ের স্বাদ ২০০৮ সালেই মিলে যাচ্ছিল। কিন্তু ২০০৭ সালে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারলেও ২০০৮ সালে মাত্র ১২ রানে হারে বাংলাদেশ। সেবারই সুযোগ ধরা দিয়েছিল টি২০’তে জেতার। তাহলে ওয়ানডের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকাকে টি২০ হারানোর স্বপ্নও তখনই পূরন হয়ে যেত। কিন্তু হয়নি। এবার বেশি সম্ভাবনা আছে জেতার। জিম্বাবুইয়েকে গতবছর শেষের দিকে যে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ, এরপর শুধু মাশরাফিদের ঝুলিতে সাফল্যই ধরা দিয়েছে। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালেও উঠেছে বাংলাদেশ। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জিতে একমাত্র টি২০তেও জয় তুলে নিয়েছে। পাকিস্তানকে হারানোর পর বিশ্বাস এতটাই মজবুত হয়ে গিয়েছিল যে ভারতকেও ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। সেই বিশ্বাস এখনও তরতাজাই আছে। তরতাজা আছে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের মুহূর্তগুলোও। মাত্র কয়েকদিনই যে হয়েছে। ২৪ জুন ভারতের বিপক্ষে সিরিজ শেষ হয়ে। ১০ দিন পরই যে আবার আরেকটি সিরিজ খেলতে নামছে বাংলাদেশ। এবার প্রতিপক্ষ দলটি দক্ষিণ আফ্রিকা। যারা উপমহাদেশে স্পিনে বেশ দুর্বল। সেই দুর্বলতায় এখন বাংলাদেশ আঘাত হানতে পারলেই হয়। শেষে যে দুুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ হবে, সেই সিরিজে বাংলাদেশ জিততে পারে; সেই আশা কেউই আসলে করছে না। দল যে টেস্টে এখনও পরিণত হয়েই উঠেনি। তবে টি২০ ও ওয়ানডেতে যে বাংলাদেশ সহজেই দক্ষিণ আফ্রিকাকেও হারাতে পারে, সেই বিশ্বাস সবার মধ্যেই আছে। দুই টি২০’র যে কোন একটি এবং তিন ওয়ানডের যে কোন একটিতে জেতার আশা সবাই করছে। যদি আবারও নির্ধারিত ওভারের সিরিজ জয় হয়ে যায় তাহলে তো কথাই নেই। জিম্বাবুইয়ে, পাকিস্তান ও ভারতের পর দক্ষিণ আফ্রিকাকেও সিরিজে হারানোর আশা পূরন হয়ে যাবে। তবে আপাতত সবার দৃষ্টি আসলে অন্তত একটি ওয়ানডে জয়ের দিকেই। কেন? চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের খেলা নিয়ে যে সংশয় শুরু হয়ে গেছে। পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুইয়ে একটি ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলবে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে। এ সিরিজটি করাই হচ্ছে যেন র‌্যাঙ্কিংয়ে যে এখন ৭ নম্বরে আছে বাংলাদেশ, অন্তত ৯ নম্বরে মাশরাফিদের নিয়ে যেতে। তাতে করে সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ সেরা আটে না থাকলেই পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলবে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার স্বপ্ন ভঙ্গ হবে বাংলাদেশের। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ওয়ানডের যে কোন একটিতে যদি বাংলাদেশ জিতে যায়, সব সংশয় উধাও হয়ে যাবে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে বাদ পড়ার ক্ষীণ সম্ভাবনাও যদি থাকে তা আর থাকবে না। তখন পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুইয়ে তিন দল মিলে যে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে হটানোর পরিকল্পনা করছে তা ভেস্তে যাবে। হাসবে বাংলাদেশই, মাশরাফি, সাকিবরাই। তখন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের খেলা না খেলা নিয়ে আরও কোন তর্করই অবকাশ থাকবে না। এ জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অন্তত একটি ওয়ানডেতে জিততে হবে বাংলাদেশকে। যা খুবই সহজ। যে সহজ কাজ করতেই তো দলে স্পিনারদের প্রাধান্য রাখা হয়েছে। ভারতের বিপক্ষে মাশরাফি, রুবেল, তাসকিন, মুস্তাফিজ এ চার পেসার নামিয়ে দিয়ে যে চমক দেখিয়েছিল বাংলাদেশ, এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সাকিব, সোহাগ, জুবায়ের, আরাফাত এ চার স্প্যাশালিস্ট স্পিনারকে নামিয়ে দিয়ে ধাঁধা তৈরি করেও দিতে পারেন মাশরাফিরা। তাতে করে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের মাটিতে যে টি২০ খেলতে নামবে দক্ষিণ আফ্রিকা, তাতে হারের খপ্পরেও পড়ে যেতে পারে।
×