ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সুবীর চৌধুরী শিল্পচর্চা বৃত্তি প্রবর্তন করল বেঙ্গল

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৪ জুলাই ২০১৫

সুবীর চৌধুরী শিল্পচর্চা বৃত্তি প্রবর্তন করল বেঙ্গল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তিনি নিজেও রং-তুলির আঁচড়ে ছবি আঁকতেন। দীক্ষাও নিয়েছিলেন চারুকলায়। তবে শিল্পী হওয়ার বাসনাকে ছাপিয়ে পরিণত হয়েছিলেন শিল্প সংগঠকে। আমৃত্যু কাজ করেছেন শিল্পী ও শিল্পীদের কল্যাণে। সেই সূত্রে পালন করেছেন শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালকের দায়িত্ব। পরবর্তীতে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের অন্যতম ট্রাস্টি ও বেঙ্গল গ্যালারি অব্ ফাইন আর্টসের পরিচালক হিসেবে রাখেন দক্ষতার স্বাক্ষর। প্রখ্যাত এই শিল্প সংগঠক সুবীর চৌধুরী গত বছরের ৩০ জুন পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। প্রায় চার দশকের কর্মজীবনে দেশের চারুকলা চর্চা ও এর বিস্তারে নবীনদের সৃজন এবং চারুশিল্পীদের জন্য দেশে ও বিদেশে নানাবিধ সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশে সুবীর চৌধুরী ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। আর সেই কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে সম্মান জানিয়ে প্রবর্তিত হলো বার্ষিক সুবীর চৌধুরী শিল্পচর্চা বৃত্তি। তরুণ ও উদীয়মান শিল্পীদের শিল্পচর্চা ও সাধনায় নবমাত্রা সঞ্চারের উদ্দেশে শুক্রবার এই বৃত্তি প্রবর্তনের ঘোষণা দেয় বেঙ্গল ফাউন্ডেশন । শুক্রবার বিকেলে বেঙ্গল শিল্পালয়ে ২০১৫-১৬ সালের সুবীর চৌধুরী প্র্যাকটিস গ্র্যান্ট ঘোষণা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি। বক্তব্য রাখেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। সুবীর চৌধুরীর স্মৃতিচারণ করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবুল খায়ের। শেষে এই শিল্পসংগঠকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ফরিদা পারভীন । নতুন শিল্পীদের বৃত্তি প্রসঙ্গে লুভা নাহিদ চৌধুরী জানান, বাংলাদেশে বসবাসকারী ৩৫ বছরের কম বয়সী প্রতিশ্রুতিশীল, সক্রিয় ও উদীয়মান শিল্পী বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের শেষ তারিখ ২৫ আগস্ট। বৃত্তির মূল্যমান দুই থেকে চার লাখ টাকা এবং তা ২০১৫/১৬ সময়কালের জন্য প্রদান করা হবে। যাচাই বাছাইয়ের পর এবছর অক্টোবরে বৃত্তিপ্রাপ্ত একজন শিল্পীর নাম ঘোষণা করা হবে। বৃত্তি লাভ করে শিল্পী যে শিল্পকর্ম তৈরি করবেন তা আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রদর্শন করা হবে। এর আগে অনুষ্ঠানের সূচনাতেই প্রয়াত সুবীর চৌধুরীকে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। প্রামাণ্যচিত্রে এ শিল্পসংগঠককে নানা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মূল্যায়ন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, শিল্পী রফিকুন নবী, শিল্পী শহিদ কবির, মনিরুল ইসলাম, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, নাসির উদ্দিন ইউসুফ প্রমুখ। পরে স্মৃতিচারণে অংশ নিয়ে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘ছাত্রাবস্থায়ই সুবীর চৌধুরীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তখন তিনি দেশের আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে ছিলেন ব্যস্ত রাজনৈতিক কর্মী। পরবর্তীতে তাঁর ওই সংগ্রামী চেতনাটি ধাবিত হয় দেশের চারুশিল্প আন্দোলনে। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগে। তিনি এমন একজন শিল্পসংগঠক ছিলেন, যার জীবনের শেষ দিনটিও ব্যয় হয়েছে শিল্পীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায়। নতুন শিল্পী আবিষ্কার থেকে শুরু করে, শিল্পীদের সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা দিতে তিনি এগিয়ে আসতেন। একইভাই প্রবীণ শিল্পীদেরও জন্য তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। শিল্পসংগঠক হিসেবে তাঁর নিষ্ঠা ও শ্রমের কোন তুলনা নেই।’ ফরিদা পারভীনের সুরের ভেতর দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলির এই আয়োজনটি শেষ হয়। সুবীর চৌধুরীকে নিবেদন করে দরাজ কণ্ঠে এ শিল্পী পরিবেশন করেন ‘পাখি কখন জানি উড়ে যায়’ ও ‘পার করো হে দয়াল’সহ তিনটি লালনের গান। ক্যালিগ্রাফির অনন্য সৌন্দর্যে বিন্যস্ত শিল্পকলা একাডেমি ॥ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালায় থরে থরে সাজানো বহুমাত্রিক সব ক্যালিগ্রাফি। এসব শিল্পকর্মে প্রাধান্য ছিল মহান সৃষ্টিকর্তার নামই। পবিত্র রমজান মাসে যেন নেমে এসেছিল শিল্পকর্মে সুন্দরের মহিমা। সুন্দর হস্তলিপি বা ক্যালিগ্রাফির অনন্য নান্দনিকতায় এক ব্যঞ্জনাময় পরিবেশের অবতার হয়েছিল গ্যালারি প্রাঙ্গণে। এমন চিত্রই লক্ষণীয় ছিল বাংলাদেশ ক্যালিগ্রাফি আর্টিস্ট গিল্ড এর ‘২য় ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং প্রদর্শনী ২০১৫’ এর প্রথম দিনে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে জাতীয় চিত্রশালা প্লাজার ৫ নাম্বার গ্যালারিতে শুরু হয় সপ্তাহব্যাপী ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম আর্ট কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল শিল্পী সবিহ উল আলম। ৩৭ শিল্পীর ১৪০টি শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে এই প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর উদ্বোধনের পরেই গ্যালারি প্রাঙ্গণে ভিড় জমায় শিল্পানুরাগীরা। ওয়াটার, এ্যাক্রেলিক, অয়েল ও মিক্স মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে ক্যালিগ্রাফির বিভিন্ন শিল্পকর্ম। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আগামী ৯ জুলাই শেষ হবে সপ্তাহব্যাপী এই প্রদর্শনী।
×