ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মায়ার মন্ত্রিত্ব বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত দেবে হাইকোর্ট ॥ ড. কামাল

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৪ জুলাই ২০১৫

মায়ার মন্ত্রিত্ব বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত দেবে হাইকোর্ট ॥  ড. কামাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মন্ত্রিত্ব থাকছে কিনা সে ব্যাপারে হাইকোর্টই সঠিক সিদ্ধান্ত দেবে বলে মন্তব্য করেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। শুক্রবার রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক ইন সেন্টারে একটি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল বলেন, কেউই বিচারের উর্ধে নন। মায়ার বিষয়টি এখন বিচারাধীন। তার মন্ত্রিত্ব থাকবে কি থাকবে না, এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারবে হাইকোর্ট। এ প্রশ্নের উত্তর জানতে হাইকোর্টের রায়ের জন্য অপেক্ষা করাই ভাল। কোর্টই জানাবে, মায়ার জন্য সঠিক কী হবে। সিনিয়র আইন বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন বলেন, শুধু আইনজীবীদের পক্ষে কোটি কোটি মানুষকে আইনী সহায়তা দেয়া অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। সমাজের দরিদ্র, অবহেলিত মানুষের পক্ষে আইনী সহায়তা পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে আইনী সহায়তা দিতে প্যারালিগ্যাল (আইনী সেবাদানকারী) সংস্থা ও ব্যক্তিদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশেও কিছু বড় বড় সংস্থা এ কাজটি অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে করছেন। এ কাজের পরিধি আরও ব্যাপক হওয়া উচিত। সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব এ্যাডভান্স লিগ্যাল এ্যান্ড হিউম্যান রাইটস স্টাডি (সেইলস) প্রশিক্ষণ কর্মসূচী সমাপনী ও প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে সনদ বিতরণ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ড. কামাল হোসেন সেইলসের গবর্নিং কাউন্সিলের সভাপতি। তিনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও নেপালের মোট ২১ জন প্যারালিগ্যাল প্রশিক্ষণার্থীকে সনদ দিয়েছে সেইলস ও ব্র্যাক। নাগরিকের অধিকার সচেতনতা বাড়াতে ও অধিকার আদায়ে এ প্যারালিগ্যালরা অসামান্য ভূমিকা রাখবেন বলে আয়োজনে বলেন বক্তারা। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন, ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ফজলে হাসান আবেদ, সেইলসের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার মঞ্জুর হাসান, সেইলস সহ-সভাপতি ভারতের আইনজীবী গগন শেঠী, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর ফুয়াদ হাসান মল্লিক, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম এতে বক্তব্য রাখেন। ড. কামাল হোসেন বলেন, প্যারালিগ্যালরা পুরোদস্তুর আইনজীবী নন। তবে তারা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আইন সম্পর্কে জানেন এবং অন্যদের জানান। এছাড়া ন্যায়বিচার পেতে তারা নাগরিকদের সহযোগিতা করেন। তিনি বলেন, সেইলস একটি সমন্বিত কার্যক্রম। এ কার্যক্রমে সরকার ও এনজিও সবাই একসঙ্গে কাজ করছে। ভারতের সেন্টার ফর সোস্যাল জাস্টিস এ বিষয়ে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে। আমাদের দেশেও যারা কাজ করছে, অনেককে সহযোগিতা করতে পেরেছে। কানাডা, ডেনমার্ক, মিসর, ভারত, নরওয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা, তানজানিয়া, যুক্তরাজ্য এক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে রয়েছে বলেও জানান কামাল। তিনি বলেন, পেশায় যারা আইনজীবী, তারা পেশার পাশে সবাইকে স্বেচ্ছাশ্রম সেভাবে দিতে পারবেন না। এক্ষেত্রে প্যারালিগ্যালরা থাকবেন। সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় তারা কার্যকর ভূমিকা রাখবেন। প্রশিক্ষণ পাওয়া প্যারালিগ্যালদের উদ্দেশে কামাল হোসেন বলেন, স্বাধীনতার এতো বছর পরে আর কোন মানুষ যেন অধিকারহীন না থাকেন। সব সংবিধানই ইতিবাচক কথা জানায়। সংবিধানে বর্ণিত সবটুকু অধিকার তারা যেন পান, সেটি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ৭০ বছর আগে ইংরেজরা যে আইন রেখে গেছে, সেসব দিয়ে এখন সব কিছুর বিচার চলে না। এখন নতুন পরিস্থিতি, নতুন সমস্যায় পড়লে নাগরিকদের নতুনভাবে সহায়তা দিতে হবে। যাতে কেউই আইনের অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন। কামাল হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের ইদানীং কিছু ঘটনায় নারীদের অধিকার অতিমাত্রায় লঙ্ঘিত হতে দেখেছি। এসব নিয়ে কাজ করতে হবে। নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করতে হবে। তারা যেন তাদের প্রাপ্য অবশ্যই পান। গগন শেঠী বলেন, এক্ষেত্রে উপ-মহাদেশের চিত্রে মিল রয়েছে। তাই দেশগুলোর মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময় ভাল কাজ দিচ্ছে। নাগরিকের নির্বিঘœ জীবনের জন্য কাজ করেন প্যারালিগ্যালরা। ফজলে হাসান আবেদ বলেন, আমাদের দেশের যেক’টি এমন প্র্রতিষ্ঠান রয়েছে, তারা সাফল্য দেখাতে পেরেছে। কিন্তু এর তো কোন শেষ নেই। এমন কাজে যত বেশি সংশ্লিষ্টতা বাড়বে, ততই সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে। বক্তারা জানান, সেইলস হলো সাউথ এশিয়ান দেশগুলোর মধ্যে আইনী বিষয়ক অভিজ্ঞতা বিনিময় ও প্রশিক্ষণের একটি প্রতিষ্ঠান। ব্র্যাকের সঙ্গে যৌথভাবে এটি কাজ করছে। এসব দেশের আইনজীবী ও প্যারালিগ্যালরা একে অন্যের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে সহায়তা বিনিময়ও করছে। আগামীবার আফগানিস্তান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভুটানের প্যারালিগ্যালদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। গত ২৮ জুন ৫ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণটি পরিচালিত হয়।
×