ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘টিকে থাকা কঠিন চ্যালেঞ্জ’

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ৩ জুলাই ২০১৫

‘টিকে থাকা কঠিন চ্যালেঞ্জ’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভয়াল মায়াবী ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন পদার্পণেই। এরপর তার নাম হয়ে গিয়েছিল বিধ্বংসী ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল ঘাতক হিসেবে। কিন্তু সেই সোহাগ গাজী থাকলেন অন্তরালে গত এক বছরের জন্য। কোথাও নেই তিনি, অন্তত আন্তর্জাতিক পরিম-লে ডানহাতি অফস্পিনার গাজীকে খুঁজে পাননি কেউ। গত বছর আগস্টে বোলিং এ্যাকশনে ত্রুটি ধরা পড়ার পর নিষিদ্ধ হয়েছিলেন অক্টোবরে, ত্রুটি কাটিয়ে আবার বোলিং করার অনুমোদনও পেয়েছিলেন। তবে ঘরোয়া ক্রিকেট ছাড়া জাতীয় দলে আর তাকে ডাকাই হয়নি। তবে আবার গাজীকে ডাকা হলো দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজের জন্য ঘোষিত বাংলাদেশ দলে। তবে ফিরে আসার পর আগের মতো ভাল করাটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন গাজী। এটিকে দ্বিতীয়বারের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক বলে মনে করছেন তিনি। যেহেতু বর্তমানে বাংলাদেশ দল আছে ফর্মের তুঙ্গে তাই দলে টিকে থাকার জন্য ধারাবাহিক নৈপুণ্য দেখাতে হবে। এ কারণে নতুন করে সুযোগ পাওয়াটাকে ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট বলে মনে করছেন গাজী। শুরুটা করেছিলেন বিস্ময় সৃষ্টি করে। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাস নতুন করে লিখতে হয়েছিল গাজীর জন্য। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে অভিষেকেই সেঞ্চুরি এবং হ্যাটট্রিক করে সেই ইতিহাস রচনা করেছিলেন পটুয়াখালীর ছেলে গাজী। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম স্বীকৃত ডানহাতি অফস্পিনার হিসেবে এসেই এমন কীর্তি দেখান ২৩ বছর বয়সী এ উদীয়মান ক্রিকেট মেধা। কিন্তু শুরুর করার কিছুদিনের মধ্যেই থেমে যেতে হয়েছে। উর্ধমুখী গতিটায় রাশ টেনে ধরে আইসিসি। গত বছর আগস্টে বোলিং এ্যাকশনে ত্রুটি চিহ্নিত করেন আম্পায়াররা। এরপর এ্যাকশনের পরীক্ষা দিয়ে সেটা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর অক্টোবরে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। তখন থেকেই সংগ্রাম করেছেন ফেরার। অবশেষে আবার ফিরলেন। এ বিষয়ে সোহাগ বলেন, ‘যত মাস আমি দলের বাইরে ছিলাম অনেক কিছুই শিখেছি। আমি দীর্ঘদিন জাতীয় দলের নেটে অনুশীলন করেছি অন্য জার্সি গায়ে দিয়ে। জাতীয় দলের জার্সি ছাড়া বোলিং করতে গিয়ে বেশ অস্বস্তি বোধ করেছি। আমি চেয়েছিলাম আবারও জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চড়াতে।’ গত বছর ৮ অক্টোবর বোলিং থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন গাজী। তবে কিছু পরীক্ষা দেয়ার পর ১৭ নবেম্বর থেকে আবারও ঘরোয়া আসরে বোলিং করার অনুমতি পান। এর এক মাস পর চূড়ান্ত পরীক্ষা ছিল বলে বিশ্বকাপ স্কোয়াডেও ঠাঁই পাননি। এমনকি কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকেও বাদ পড়েন। তখন থেকেই বাংলাদেশ দল আরও শক্তিধর হয়ে উঠেছে। সব হারানোর পর অবশ্য বড় পুরস্কার হিসেবে চেন্নাইয়ে বোলিং এ্যাকশনের পরীক্ষা দিয়ে উতরে গেছেন। তারপর শুধু প্রচেষ্টা ছিল জাতীয় দলে ফেরার। সেটাও ফিরলেন। এ বিষয়ে গাজী বলেন, ‘এতদিন পর দলে ফেরাটা অনেক বড় একটি প্রাপ্তি। পরিশ্রম সফল হয়েছে এই সুযোগে। এখন নতুন চ্যালেঞ্জ দলে আগের জায়গাটা পাকাপোক্ত করা। একাদশে সুযোগ পেলে নির্বাচকদের প্রত্যাশা পূরণ করার চেষ্টা করব। আমার পরিবার আমাকে যথেষ্ট সাহস জুগিয়েছে। এছাড়াও অনেকে সমর্থন দিয়েছেন। যারাই আপনাকে কঠিন সময়ে সমর্থন দেবে তারাই আসল বন্ধু।’ কিন্তু ফিরে আসলেও এখন লড়াইটা আরও বড়। এ বিষয়টাও বেশ ভালভাবেই বুঝতে পারছেন গাজী। তিনি বলেন, ‘এটা কঠিন এক পরিস্থিতি। আমি দারুণভাবে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ থেমে যেতে হয়েছে। এখন আমি ফিরেছি। বর্তমানে বাংলাদেশ দল যেভাবে খেলছে তাতে করে কেউ আসলে সুযোগ দিচ্ছে না। আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা চালাব ভাল জায়গায় বল করে দারুণ কিছু করার। আমি টি২০ বিশ্বকাপ খেলেছি। সুতরাং এ ফরমেট নিয়ে আমার ভাল ধারণা আছে। যদি খেলার সুযোগ পাই অবশ্যই জায়গা ধরে রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাব।’ কিছুদিন আগেই ভারতীয় দল বাংলাদেশ সফর করে গেছে। আর দীর্ঘদিন পরে সেই দলে ফিরেছিলেন অভিজ্ঞ অফস্পিনার হরভজন সিং। তাকে দেখে আরও অনুপ্রাণিত হয়েছেন সোহাগ গাজী। এখন তার নিজেকে টিকিয়ে রাখার লড়াই শুরু হবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।
×