ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশী পরিবারটি এখনও নিখোঁজ

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ৩ জুলাই ২০১৫

যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশী পরিবারটি এখনও নিখোঁজ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত একটি পরিবার বাংলাদেশ ঘুরে যুক্তরাজ্য যাবার পথে নিখোঁজ হয়ে গেছে। তাদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। যুক্তরাজ্যের পুলিশ ধারণা করছে, বেডফোর্ডশায়ারের লুটন শহরে বসবাসরত ১২ সদস্যের এ পরিবারটি হয়ত তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে। বাংলাদেশে ছুটি কাটিয়ে যাবার পর গত ১৭ মে থেকে তারা নিখোঁজ রয়েছে। খবর বিবিসির। নিখোঁজ স্বজনদের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে এক বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত আত্মীয়রা। তারা বলছে, এটি খুবই বিচলিত হবার মতো ঘটনা। নিখোঁজ ওই পরিবারের ১২ সদস্যের মধ্যে তিনটি শিশু রয়েছে। এছাড়া দুজন বয়স্ক ব্যক্তি রয়েছেন, যাদের একজন নারী ক্যান্সারের রোগী এবং বয়স্ক পুরুষটি ডায়াবেটিসের রোগী। তুরস্ক থেকে সিরিয়া যাওয়ার সন্দেহ প্রকাশ করলেও বেডফোর্ডশায়ার পুলিশ জানিয়েছে, পরিবারটি ঠিক কবে নাগাদ সীমান্ত অতিক্রম করেছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত কোন তথ্য নেই। পুলিশ এ বিষয়টির তদন্ত চালাচ্ছে। পরিবারটির কোন সদস্যের নাম সন্ত্রাসীদের তালিকায় ছিল কি না, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, গত ১০ এপ্রিল এই পরিবারটি বাংলাদেশে যায়। এক মাস পর ১১ মে তারা যুক্তরাজ্যে ফেরার জন্য রওনা হয়। ১১ মে তারা ইস্তাম্বুলেও পৌঁছে। কিন্তু এর তিন দিন পর তাদের লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছার কথা থাকলেও তারা আসেনি। কমিউনিটি নেতা আশুক আহমেদ বিবিসিকে জানিয়েছেন, তিনি ৩৫ বছর ধরে ওই পরিবারটিকে চেনেন। পরিবারটির প্রধান ৭৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ আবদুল মান্নানের সঙ্গে তিনি সবসময় মসজিদে যাতায়াত করতেন। আহমেদ বলেন, তারা ছুটি কাটাতেই বাংলাদেশে গিয়েছিল এ বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। অনেকে তুরস্ক হয়ে বাংলাদেশে যায়, যুক্তরাজ্যে আসে। কেন যে তারা আসল না সেটা খুবই চিন্তার বিষয়। এখানকার বাঙালীরা সবাই খুব উদ্বিগ্ন। এরা তিন প্রজন্ম একসঙ্গে সফর করছিল। আশুক আহমেদ বলছেন, সিরিয়ায় ইসলামী জঙ্গী গোষ্ঠীতে পরিবারের কোন সদস্য যোগ দিয়েছে কিনা সে বিষয়েও তো কেউ কিছু জানে না। আহমেদ এটাও বলেছেন, ওই পরিবারের কয়েকজন নারী উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। তারা সন্দেহ করছেন, গ্রেফতার এড়াতে তারাই পুরো পরিবারটি নিয়ে যুক্তরাজ্য ছেড়েছেন। লুটনে ওই পরিবারের প্রতিবেশীদের একজন সৈয়দ হুসাইন বিবিসিকে বলেন, পরিবারটি এভাবে উধাও হয়ে যাওয়ার পর পুলিশ বেশ কয়েকবার তাদের বাড়িতে গেছে এবং খোঁজ-খবর করেছে। হোসাইন বলেন, ‘আমি শুনেছি, তারা সিরিয়া চলে গেছে। বয়স্ক দুজনের জন্য খারাপ লাগছে। খুব সম্ভবত এসবের কিছুই তারা জানেন না।’ মান্নানের আগের স্ত্রীর দুই ছেলেও লুটনে থাকেন, তারাই পরিবারটির নিখোঁজ হওয়ার খবর পুলিশকে জানায়। প্রতিবেশী সৈয়দ হুসাইন বলেন, পুলিশ বেশ কয়েকবার তাদের বাড়িতে খোঁজখবর করে গেছে। তবে বিবিসির পক্ষ থেকে তাদের একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। নিখোঁজ পরিবারের যেসব আত্মীয় যুক্তরাজ্যে বাস করছে তাদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘স্বজনদের এভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় আমরা ভেঙ্গে পড়েছি। কারণ এ আচরণ তাদের স্বভাববিরুদ্ধ।’ আশুক আহমেদ বলেন, ওই পরিবারের একজন যুক্তরাজ্যে তাদের স্বজনদের সঙ্গে দুই সপ্তাহ আগে যোগাযোগ করেছে বলে তিনি শুনেছেন। ‘আমি শুনেছি, ফোনে তারা স্বজনদের বলেছে, তারা নিরাপদে আছে এবং তাদের নিয়ে চিন্তা করতে মানা করেছে।’ পুলিশও বলেছে, যুক্তরাজ্যে থাকা স্বজনদের সঙ্গে পরিবারটি যোগাযোগ করেছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। তবে তারা কোথায় রয়েছেন তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি।
×