ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্যারাগুয়েকে উড়িয়ে ফাইনালে আর্জেন্টিনা

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ২ জুলাই ২০১৫

প্যারাগুয়েকে উড়িয়ে ফাইনালে আর্জেন্টিনা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দৃষ্টিনন্দন ও চোখ ধাঁধানো ফুটবলশৈলী উপহার দিয়ে কোপা আমেরিকা ফুটবলের ফাইনালে নাম লিখিয়েছে ফেবারিট আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশ সময় বুধবার ভোরে চিলিতে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে লিওনেল মেসির দল ৬-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে আসরের বর্তমান রানার্সআপ প্যারাগুয়েকে। এই জয়ে ৪৪ বারের কোপা আসরের মধ্যে রেকর্ড ২৭ বারই ফাইনালে উঠল আর্জেন্টিনা। শনিবার রাতে ২২ বছরের শিরোপা খরা কাটানোর মিশনে ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে আসরের চৌদ্দবারের চ্যাম্পিয়নরা। যেখানে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ স্বাগতিক চিলি। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মেসি গোল না পেলেও পুরো ম্যাচে খেলেছেন দুর্দান্ত। অপ্রতিরোধ্য মেসি দলের ছয়টি গোলের তিনটিতেই সহায়তা করেন। যে কারণে ম্যাচসেরাও নির্বাচিত হন সাবেক টানা চারবারের ফিফা সেরা ফুটবলার। প্যারাগুয়েকে গোলবন্যায় ভাসানোর ম্যাচে আর্জেন্টিনার হয়ে লক্ষ্যভেদ করেন মার্কোস রোজো, জ্যাবিয়ের পাস্টেরো, আঞ্জেল ডি মারিয়া, সার্জিও অ্যাগুয়েরো ও গঞ্জালো হিগুয়াইন। এর মধ্যে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার মারিয়া করেন জোড়া গোল। প্যারাগুয়ের হয়ে সান্ত¡নাসূচক একমাত্র গোলটি করেন ফরোয়ার্ড লুকাস ব্যারিওস। চিলির মিউনিসিপ্যাল ডি কনসেপশন স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরু থেকেই প্যারাগুয়ের রক্ষণব্যুহে আক্রমণের ঢেউ বইয়ে দিতে থাকে আর্জেন্টিনার বিখ্যাত ফরোয়ার্ডরা। আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিরোপাধারী ‘লা আলবেসেলেস্তে’ খ্যাত আর্জেন্টিনার এগিয়ে যেতেও সময় লাগেনি। দুইবারের চ্যাম্পিয়ন ‘হোয়াইট এ্যান্ড রেড’ খ্যাত প্যারাগুয়ে গ্রুপ পর্বে এই আর্জেন্টিনাকেই রুখে দিয়েছিল ২-২ গোলে। এবার সেই দলটির কি হতশ্রী দশাই না করেছেন ডি মারিয়া, অ্যাগুয়েরোরা। শেষ চারের লড়াইয়ে গুনে গুনে ছয় গোল! এ হারের কারণে কোপা আমেরিকা আসরে আর্জেন্টিনাকে প্রথমবারের মতো হারানোর স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল প্যারাগুয়ের। ২০০৭ সালের পর মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের আসরে আবারও ফাইনালে পৌঁছাল দিয়াগো ম্যারাডোনার দেশ। প্যারাগুয়ের মূল সর্বনাশটা হয় তাদের দুই নির্ভরযোগ্য ফরোয়ার্ড ডার্লিস গঞ্জালেস ও অধিনায়ক সান্তা ক্রুজ চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যাওয়ায়। এ সময় তারা পিছিয়ে ছিল ২-১ গোলে। এতে দলীয় শক্তি অনেকটাই কমে যায় তাদের। এর খেসারত দিতে হয় হাফডজন বেশি গোল হজম করে। ম্যাচে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে খেলে আর্জেন্টিনা। আর ৪-২-২ ফর্মেশনে প্যারাগুয়ে। শুরুতে দু’দলই খেলে গতিশীল ও আক্রমণাত্মক ফুটবল। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বল ও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় আর্জেন্টিনা। তুলনামূলকভাবে আর্জেন্টিনাই গোল করার সুযোগ বেশি নষ্ট করে। পক্ষান্তরে প্যারাগুয়ে খেলে কাউন্টার এ্যাটাক স্টাইলে। দুই গোল খেয়েও হতোদ্যম হয়নি প্যারাগুয়েনরা। তবে তৃতীয় গোল হজমের পরই ভেঙ্গে পড়ে তাদের সব প্রতিরোধ। ম্যাচের ১৫ মিনিটে ডি মারিয়াকে ফাউল করা হলে ফ্রিকিক পায় আর্জেন্টিনা। প্যারাগুয়ের ডি-বক্সের ভেতর হাওয়ায় ভাসিয়ে শট নেন অধিনায়ক মেসি। প্যারাগুয়েন ডিফেন্ডাররা বল বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হন। বল পান জটলার মধ্যে সুযোগ সন্ধানী মার্কোস রোজো। কালবিলম্ব না করে এই আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার বাঁ পায়ের গড়ানো শটে পরাস্ত করেন প্যারাগুয়েন গোলরক্ষক জাস্টো ভিলারকে (১-০)। ম্যাচের ২৭ মিনিটে মেসি লম্বা থ্রু পাস দেন সতীর্থ মিডফিল্ডার জ্যাভিয়ের পাস্টোরোকে। ডি-বক্সে ঢুকে পাস্টোরো ডান পায়ের গড়ানো শটে বোকা বানান আগুয়ান প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে। তিনি প্রাণপণ ঝাঁপিয়ে পড়েও বল রুখতে পারেননি (২-০)। ৪৩ মিনিটে ডি-বক্সে সতীর্থ ব্রুনো ভালদেসের কাছ থেকে বল পেয়ে বাঁ পায়ের দূরপাল্লার উড়ন্ত শটে গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরোকে পরাস্ত করে প্যারাগুয়ের হয়ে গোল করেন লুকাস ব্যারিওস (১-২)। এই গোলের পর অনেকেই ভেবেছিলেন ম্যাচে হয়ত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। কিন্তু ৪৭ মিনিটে ডি মারিয়া আর্জেন্টিনার হয়ে তৃতীয় গোল করলে সব প্রতিরোধ ভেঙ্গে যায় প্যারাগুয়ের। ৫৩ মিনিটে মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে চমৎকারভাবে প্রতিপক্ষের তিনজনকে কাটিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে মেসি পাস দেন পাস্টেরোকে। তার শট প্রতিহত করেন গোলরক্ষক। বল চলে যায় ডি মারিয়ার পায়ে। দেরি না করে তিনি বল জড়িয়ে দেন জালে (৪-১)। ৮০ মিনিটে মেসি পাস দেন মারিয়াকে। তিনি ডি-বক্সের বাঁ প্রান্ত দিয়ে ঢুকে বাঁ পায়ের যে উড়ন্ত ক্রস দেন, তা থেকে মাথা ছুঁইয়ে জালে বল পাঠান প্যারাগুয়েন ডিফেন্ডারদের কড়া পাহাড়ায় থাকা ফরোয়ার্ড সার্জিও অ্যাগুয়েরো (৫-১)। ৮৩ মিনিটে মেসির পাস থেকে বাঁ পায়ের গড়ানো শটে লক্ষ্যভেদ করে প্যারাগুয়ের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন হিগুয়াইন (৬-১)। বাকি সময়ে আর কোন গোল হয়নি। ব্রাজিলিয়ান রেফারি সান্ড্রো রিক্কি খেলা শেষের বাঁশি বাজালে ফাইনালে ওঠার আনন্দে মেতে ওঠে এ আসরে সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়া আর্জেন্টিনা। আগামী ৯ জুলাই আর্জেন্টিনার ১৯৯তম স্বাধীনতা দিবস। রূপালী পর্বতমালার দেশের মাঠের সেনানীরা কি পারবে স্বাধীনতা দিবসের আগে কোপার শিরোপা জিতে দেশবাসীকে স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ পুরস্কার উপহার দিতে?
×