ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বড় ধরনের সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশকে

আঞ্চলিক যোগাযোগে বিশেষ আগ্রহী বিশ্বব্যাংক

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ২ জুলাই ২০১৫

আঞ্চলিক যোগাযোগে বিশেষ আগ্রহী বিশ্বব্যাংক

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ ত্রি-দেশীয় আঞ্চলিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ আগ্রহী হয়ে উঠেছে বিশ্বব্যাংক। আঞ্চলিক সংযুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়বে। এতে দ্রুত মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যপূরণ হবে বলেই এত আগ্রহ সংস্থাটির। ভারত, নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গে আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াতে ইতোমধ্যেই দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ৩ হাজার ১২০ কোটি টাকা (৪০ কোটি মার্কিন ডলার) ঋণ দিতে প্রাথমিকভাবে সম্মত হয়েছে বিশ্বব্যাংক। এছাড়া এ সংক্রান্ত আরও কয়েকটি প্রকল্পে অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা চলছে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক উইংয়ের প্রধান অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব কাজী সফিকুল আযম জনকণ্ঠকে বলেন, এ বিষয়ে প্রাথমিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণের বিষয়ে আলাপ আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে। এখন প্রকল্প তৈরি করছে মন্ত্রণালয়। বিষয়টি মন্ত্রণালয়েই আছে। ইআরডিতে প্রকল্প এখনও আসেনি। বিশ্বব্যাংক সূত্র জানায়, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আঞ্চলিক সংযুক্তি-সংক্রান্ত প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নে ৪৪ কোটি ডলার ঋণ চাওয়া হয়েছিল। তবে বিশ্বব্যাংক ৪০ কোটি ডলার দিতে রাজি হয়েছে। গত ১৫ জুন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডাইরেক্টর ইউহানেস জাট অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিবকে দুটি প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। এ ঋণ ৩৮ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে ছয় বছরের গ্রেস পিরিয়ড রয়েছে। ঋণের সার্ভিস চার্জ দশমিক ৭৫ শতাংশ। শীঘ্রই এ-সংক্রান্ত আরও কয়েকটি প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহরিন এ মাহবুব জনকণ্ঠকে বলেন, আঞ্চলিক সংযুক্তি-সংক্রান্ত প্রকল্পের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এখনও অনেকটা সময় লাগবে। সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে দুটি প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের স্থলবন্দর, পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা, রেল, সড়ক এবং নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। এর মধ্যে ২৮ কোটি ডলার ব্যয়ে পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোর উন্নয়নে বড় আকারের একটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। এর আওতায় নৌপথের ড্রেজিং, নাব্যতা জরিপ, অভ্যন্তরীণ নৌ-বন্দরের উন্নয়ন, রেল কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে সক্ষমতা বাড়ানো এবং বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনের সুবিধা বাড়াতে কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উন্নয়ন এবং চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বিশ্বব্যাংকের অর্থ ব্যয় করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সার্ক অঞ্চলে কানেক্টিভিটি বাড়ানোর বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত হচ্ছে। তবে সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে তা নতুন করে গতি পেয়েছে। এ সফরে কোস্টাল শিপিং বা উপকূলীয় সহযোগিতা, বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন, চার দেশের মধ্যে মোটরযান চলাচল চুক্তি, নৌ-প্রটোকলসহ আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি সংক্রান্ত কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। অর্থনীতির সম্ভাবনার বিষয়টি বিবেচনায় সড়ক, নৌ ও রেলপথে এক দেশ থেকে আরেক দেশে পণ্য পরিবহনের সুযোগও রয়েছে দ্বি-পক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তিতে। অপর প্রকল্পে ১২ কোটি ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক। বাণিজ্য এবং পণ্য পরিবহন সুবিধা বাড়াতে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। এর আওতায় পাঁচটি স্থলবন্দর উন্নয়ন করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে রাঙ্গামাটির তেগামুখ, খাগড়াছড়ির রামগড় ও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর। বাকি দুটি স্থলবন্দর নির্বাচনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, শুধু ভোমরা স্থলবন্দরের উন্নয়ন হলে পণ্য পরিবহন ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে। প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবে এবং ২০ থেকে ২৫টি বাংলাদেশী ট্রাক ভারতে যাবে। আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি সংক্রান্ত এ দুটি প্রকল্পে অর্থায়নে কয়েকটি শর্তও বেঁধে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। শর্ত অনুযায়ী, বাণিজ্য বাধা দূরীকরণে পণ্য পরিবহন সুবিধা বাড়াতে বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। এছাড়া সীমান্ত ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আরও একটি উপ-কমিটি গঠন করার শর্ত দিয়েছে। এ কমিটি কার্যকরভাবে আঞ্চলিক বাণিজ্যে সকল বাধা-বিপত্তি দূর করতে সহযোগিতা করবে।
×