ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শ্রদ্ধাঞ্জলি ॥ সাহিত্যিক শিক্ষাবিদ আবুল ফজল

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১ জুলাই ২০১৫

শ্রদ্ধাঞ্জলি ॥ সাহিত্যিক শিক্ষাবিদ আবুল ফজল

আবুল ফজল। একজন প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ। ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। একজন চিন্তাশীল ও সমাজমনস্ক প্রবন্ধকার ও গুণীজন হিসেবে তাঁর পরিচিতি রয়েছে। তাঁর প্রবন্ধে সমাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাষ্ট্র সম্পর্কে গভীর ও স্বচ্ছ দৃষ্টিসম্পন্ন মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। বাবা তাঁর নাম রেখেছিলেন মোহাম্মদ আবুল ফজল। কিন্তু আবুল ফজল নামেই তিনি লেখালেখি করেছেন। আবুল ফজলের জন্ম ১৯০৩ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রামের কেঁওচিয়া গ্রামে। বাবা মৌলবী ফজলর রহমান এবং মা গুলশান আরার একমাত্র পুত্রসন্তান তিনি। প্রাথমিক পড়াশোনা শুরু হয় গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে। এখানে অল্প কিছুদিন পড়ার পর বাবার কর্মস্থল চট্টগ্রাম শহরে চলে আসেন। পরে নন্দন কাননে এক প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হন। ১৯২৩ সালে এন্ট্রান্স পাস করেন। ১৯২৫ সালে ঢাকা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৮ সালে বিএ পাস করেন। ১৯৪০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন। বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী শিক্ষক হওয়ার সঙ্কল্প করলেন তিনি। ১৯৩১ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে দ্বিতীয় মৌলবী হিসেবে ২০ দিন চাকরি করেন। পরে চট্টগ্রাম সরকারী মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে দুই মাস চাকরি করেন। এরপর চট্টগ্রাম কাজেম আলী হাই স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৩৩ সালে আবুল ফজল খুলনা জিলা স্কুলে দ্বিতীয় প-িতের পদে স্থায়ীভাবে যোগ দেন। ১৯৩৭ সালে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে সহকারী ইংরেজী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৪০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করার পর ১৯৪১ সালে কৃষ্ণনগর কলেজে প্রভাষক পদে যোগ দেন। ১৯৪৩ সালে যোগ দেন চট্টগ্রাম কলেজে। এই কলেজে চাকরি করার পর ১৯৫৯ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে এবং বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। বাংলা সাহিত্যে নজরুল ইসলামের যখন আবির্ভাব তখন আবুল ফজল অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। সে সময় থেকেই তিনি নজরুলের লেখার প্রতি আকৃষ্ট হন। তাঁর জীবনী থেকে জানা যায়, সেই সময় বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত ‘হেনা’, সওগাতে প্রকাশিত তাঁর ‘বাউ-ুলের আত্মকাহিনী’ আর মোসলেম ভারতে প্রকাশিত ‘বাঁধনহারা’ লেখাগুলো সংগ্রহ করেন এবং পড়েন। ১৯২২ সালে তিনি যখন দশম শ্রেণীর ছাত্র তখন মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানেই বের হয় নজরুলের ‘ব্যথার দান’ ও ‘অগ্নিবীণা’। তিনি তখন জায়গির থাকতেন। হাতে তেমন কোন টাকা পয়সা নেই। তবুও অর্ডার দিয়ে কলকাতা থেকে পার্সেলেই বই দুটো আনেন। ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় থেকেই মূলত তিনি লেখালেখি শুরু করেন। আবুল ফজলের উল্লেখযোগ্য গল্প হলো- ‘রহস্যময়ী প্রকৃতি’, ‘প্রেম ও মৃত্যু’, ‘বিবর্তন’, ‘চোর’, ‘বিংশ শতাব্দী’ প্রভৃতি। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলো হলো- ‘রাঙ্গাপ্রভাত’, ‘চৌচির’, ‘জীবনপথের যাত্রী’, ‘মাটির পৃথিবী’, ‘বিচিত্র কথা’, ‘সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জীবন’। তাঁর রচিত ‘চৌচির’, ‘মাটির পৃথিবী’ আর ‘বিচিত্রকথা’ নামের তিনটি বই ১৯৪০ সালে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে শান্তিনিকেতনের ঠিকানায় পাঠিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ সে সময় খুব অসুস্থ ছিলেন, তারপরও নিজের হাতে দীর্ঘ এক পত্র লিখেছিলেন আবুল ফজলকে। ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘রাঙ্গাপ্রভাত’ বইটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে পাঠ্য হয়। ১৯৪৮-৪৯ সালে তিনি সংকলন করেছিলেন ‘সাহিত্য চয়নিকা’ নামে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর উপযোগী দুটি সাহিত্য বই। পাঠ্যবই হিসেবে ওই দুটি বইও টেক্সটবুক কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছিল। লেখালেখির মাধ্যমে তিনি সব সময় সত্য ও ন্যায়ের কথা বলেছেন এবং করেছেন অন্যায়ের প্রতিবাদ। ফলে তাঁকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু পিছপা হননি তিনি, চালিয়ে গেছেন লেখালেখি। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে দেয়া হয়েছে স্বাধীনতা পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, রাষ্ট্রীয় সাহিত্য পুরস্কার, সমকাল পুরস্কার এবং সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী। আবুল ফজল ১৯৮৩ সালের ৪ মে মারা যান। আজ তাঁর জন্মদিন, জন্মদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
×