ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শঙ্কামুক্ত নন নায়করাজ রাজ্জাক

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ৩০ জুন ২০১৫

শঙ্কামুক্ত নন নায়করাজ রাজ্জাক

গৌতম পা-ে ॥ দেশীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা, নায়ক রাজ রাজ্জাক পুরোপরি আশঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন ইউনাইটেড হাসপাতালের কম্যুউনিকেসন্স এ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্টের প্রধান ডাঃ শাগুফা আনোয়ার। সোমবার দুপুর আড়াইটায় তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান। তিনি বলেন, শ্বাসকষ্টের কারণে তাঁকে ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দেয়া হচ্ছে। তবে মানসিকভাবে তিনি সচেতন আছেন। তাঁর পরিবারের কেউ পাশে গেলে চিনতে পারছেন। ওষুধের মাধ্যমে তাঁর শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, অতিরিক্ত ধূমপানের জন্য তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। হাসপাতালের আইসিইউর ৬ নম্বর বেডে তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সোমবার সকালে রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে রাজ্জাকের ছোট ছেলে চলচ্চিত্র অভিনেতা সম্রাটের কাছে তাঁর বাবার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, বাবা সিওপিডিতে ভুগছেন। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে বাবাকে এর আগে তিনবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। গত শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাবা আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমাদের বাসা ইউনাইটেড হাসপাতালের কাছেই। সঙ্গে সঙ্গে বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। অবস্থার অবনতি দেখে ডাক্তাররা তাঁকে হাসপাতালের আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখেন। চারজন বিষেশজ্ঞ ডাক্তার বাবার চিকিৎসায় নিয়োজিত আছেন। এর মধ্যে প্রধান দায়িত্ব পালন করছেন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডাঃ আদনান ইউসুফ চৌধুরী। সম্রাট তার বাবার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। দেশীয় চলচ্চিত্রে রাজ্জাক এক কিংবদন্তী নাম। চলচ্চিত্রই যার প্রাণ। চলচ্চিত্রের কল্যাণে তিনি নায়করাজ। চিরদিন তাই থাকতে চান ৭৩ বছর বয়সী এ অভিনয়শিল্পী। সম্প্রতি জনকণ্ঠকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে রাজ্জাক জানিয়েছিলেন, আমৃত্যু চলচ্চিত্রশিল্পের সঙ্গে থাকতে চান তিনি। যে দর্শকদের জন্য তিনি নায়ক রাজ হতে পেরেছেন তাঁদের জন্য কাজ করে যেতে চান। তিনি বলেছিলেন, জীবনের এত বছর পাড়ি দিয়েও সব ধরনের চরিত্রে অভিনয় করছি। অভিনয় না থাকলে পরিচালনার কাজটি নিয়মিত করে যাচ্ছি। চলচ্চিত্রশিল্পের সুখে-দুখে সবসময় পাশে থাকার চেষ্টা করছি। চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ ডাকলে তাতে সাড়া দেয়ার চেষ্টা করছি। আমি আমৃত্যু এ শিল্পের সঙ্গেই থাকতে চাই। রাজ্জাক এও বলেন, আমি রাজ্জাক হয়তো অন্য কোন চাকরি করতাম অথবা ঘুরে বেড়াতাম। কিন্তু ছোটবেলার অভিনয় প্রচেষ্টাকে আমি হারাতে দেইনি। আমি নাটক থেকে চলচ্চিত্রে এসেছি। সবাই আমাকে চিনেছে। পেয়েছি সাফল্যও। বাংলার মানুষ আমাকে একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবেই দেখেন ও আমাকে ভালবাসেন। আজ আমার যা কিছু হয়েছে সবই এ চলচ্চিত্রশিল্পের কল্যাণে। রাজ্জাক আরও বলেন, বাংলাদেশ ছোট একটি দেশ হতে পারে, তারপরও এই দেশের একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে আমি গর্ববোধ করি। যাঁদের জন্য আমি রাজ্জাক হয়েছি আমি সবসময় তাঁদের কাছাকাছি থাকতে চাই। অসুস্থতার কারণে খুব কমই অভিনয় করতেন রাজ্জাক। শুধু নায়ক হিসেবেই নয়, পরিচালক হিসেবেও বেশ সফল তিনি। সর্বশেষ ‘আয়না কাহিনী’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন রাজ্জাক। নায়ক হিসেবে নায়করাজ প্রথম অভিনয় করেন জহির রায়হান পরিচালিত ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রে। এতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন সুচন্দা। ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি কলকাতার টালিগঞ্জে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এই মহান অভিনেতা। নায়করাজের বাবা আকবর হোসেন আর মা নেসারুন্নেসার কনিষ্ঠ সন্তান আব্দুর রাজ্জাক। তার অভিনয় জীবনের শুরুটা কলকাতার মঞ্চনাটক থেকে হয়। ১৯৬৪ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উত্তাল সময়ে নতুন জীবন গড়তে একজন সাধারণ মানুষ আবদুর রাজ্জাক স্ত্রী ও শিশু সন্তান বাপ্পাকে নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন শূন্য হাতে। অমানুষিক জীবন সংগ্রামের পর সফল হয়ে আজকের নায়করাজ উপাধি পেয়েছেন, চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তী হয়েছেন, এটা যে কারও কাছেই গল্প বলে মনে হতে পারে। মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রথমদিকে রাজ্জাক তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে ‘ঘরোয়া’ নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হন। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি আব্দুল জব্বার খানের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। সালাউদ্দিন প্রোডাকশন্সের ‘তেরো নাম্বার ফেকু অস্তাগর লেন’ চলচ্চিত্রে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করে সবার কাছে নিজ মেধার পরিচয় দেন রাজ্জাক। পরবর্তীতে ‘কার বউ’, ‘ডাক বাবু’, ‘আখেরী স্টেশন’সহ আরও বেশ ক’টি চলচ্চিত্রে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয়ও করে ফেলেন। পরে ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রে তিনি নায়ক হিসেবে ঢালিউডে উপস্থিত হন সদর্পে। তিনি প্রায় ৩০০টি বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বেশ দাপটের সঙ্গেই ঢালিউডে সেরা নায়ক হয়ে অভিনয় করেন রাজ্জাক। জাতীয় চলচ্চিত্র আজীবন সম্মাননা পুরস্কার, মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননাসহ অর্জন করেন অসংখ্য সম্মাননা। এছাড়াও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের শুভেচ্ছা দূত হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।
×