ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তবে কি সরিষাতেই ভূত!

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ৩০ জুন ২০১৫

তবে কি সরিষাতেই ভূত!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের সৈয়দ নজরুল ইসলাম জাতীয় সুইমিং কমপ্লেক্স একটি আন্তর্জাতিক মানের সুইমিং কমপ্লেক্স। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের তত্ত্বাবধানে ওই সুইমিং কমপ্লেক্সের প্রশিক্ষণ পুলের পাশে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণ করা হচ্ছে। এই স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণ করা হলে পরিবেশ ও নিরাপত্তা বিপর্যয় ঘটবে বিধায় খেলাধুলার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে কোয়ার্টার নির্মাণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশন এবং ফেডারেশন ফোরামের কর্মকর্তারা এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন সোমবার বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, সাঁতার ফেডারেশনের অনেক কর্মকর্তাই বিভিন্ন সরকারী পদে কর্মরত, তাহলে প্রভাব খাটিয়ে এই অবৈধ ভবন নির্মাণ বন্ধ করাতে পারছেন না কেন? সেক্ষেত্রে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠবেÑ তাহলে কি সরিষাতেই আছে ভূত? তাদের অনেকেই কি এই ভবন নির্মাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত বা বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে নামকাওয়াস্তে আন্দোলন নামের প্রহসন করে যাচ্ছেন? উল্লেখ্য, বিশ্ব সাঁতার সংস্থার (ফিনা) নিয়ম অনুযায়ী কোন সাঁতার কমপ্লেক্সের পাশেই যে কোন ধরনের স্থাপনা বা ভবন নির্মাণ করা যাবে না। জাতীয় সুইমিং কমপ্লেক্সের মূল নক্সাও যেভাবে করা হয়েছে। কিন্তু জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এই নক্সাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তড়িঘড়ি করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য একটি স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। এ জন্য কেটে ফেলা হয়েছে সুইমিংপুলের ওয়ার্মআপ পুলের পাশের ফলদ ও বনজ গাছ। ভবনটি নির্মিত হলে সাঁতারুরা সেখানে ওয়ার্মআপ, ফ্রি হ্যান্ড অনুশীলন ও জগিং করার মতো পর্যাপ্ত জায়গা পাবে না। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদারের আদেশক্রমেই এ কাজ হচ্ছে। তিনি নাকি চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁতার ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন! উল্লেখ্য, আগামী অক্টোবরে ঢাকায় প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক আমন্ত্রণমূলক সাঁতার প্রতিযোগিতা। এর আগে এভাবে স্থাপনা নির্মাণ করা হলে প্রতিযোগিতা ও দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করলেন সংবাদ সম্মেলনে আগত ব্যক্তিবর্গরা। এখন ভবন নির্মাণ বন্ধের একটাই উপায়Ñ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ। এর আগে গত ২৩ জুন সাঁতার ফেডারেশনের কর্মকর্তা, ক্রীড়ামোদি ও সাবেক জাতীয় সাঁতারুদের নিয়ে এক মানববন্ধন কর্মসূচী জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। তখন মানববন্ধন শেষে জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, এশিয়া সাঁতার ফেডারেশনের ব্যুরো মেম্বার এবং ২০০২ সালে সাঁতারে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পাওয়া শাহাবউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, সুইমিংপুলের আশপাশে এমনিতেই বহুদিন ধরে মাদকসেবীদের অবাধ বিচরণ, সুইমিংপুলের পাশে এমন সব নিষিদ্ধ জিনিস পড়ে থাকে, যার কথা উচ্চারণ করতেও লজ্জা হয়। বিল্ডিং হয়ে গেলে সেখানকার লোকজন যখন তখন সুইমিংপুলে ঢুকবে, পানিতে নেমে পড়বে, সাঁতার শিখতে আসা মেয়েদের দিকে তাকাবে বা ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করবে। ফলে এখানে কেউ সাঁতার শিখতে আসবে না। উল্লেখ্য, সাঁতার ফেডারেশন ভবন নির্মাণ বন্ধ করতে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদারকে অনুরোধ করে ক’দিন আগেই চিঠি দিয়েছে। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি। ক্রীড়া পরিষদ ভবন নির্মাণে বদ্ধপরিকর। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই ভবন নির্মাণে ক্রীড়া পরিষদের স্বার্থটা কী?
×