ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

লতিফ সিদ্দিকী জামিনে মুক্তি পেলেন

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৩০ জুন ২০১৫

লতিফ সিদ্দিকী জামিনে মুক্তি পেলেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হজ ও তবলীগ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার ১৭ মামলায় জামিনে মুক্তি পেলেন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এমপি। ৬ মাস কারাভোগের পর সোমবার বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে কারাবন্দী অবস্থায় চিকিৎসাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) ৫১২ নাম্বার কেবিন থেকে তিনি মুক্তি পান। উল্লেখ্য, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পবিত্র হজ ও তবলীগ জামাত নিয়ে কটূক্তি করেন তখনকার ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই সব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দেশ ও দেশের বাইওে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। পরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন আদালতে মোট ২৯টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ১৭ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। এরপর গত বছরের ২৩ নবেম্বর রাতে ভারত হয়ে দেশে ফেরেন লতিফ সিদ্দিকী। ২৫ নবেম্বর ধানম-ি থানায় আত্মসমর্পণ করেন তিনি। পরে তাকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক কারাগারে পাঠিয়ে দেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১ ধারা মোতাবেক ১৭ মামলায় জামিন ও মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন লতিফ সিদ্দিকী। বাকি ১০ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা না থাকায় জামিন চাননি তিনি। আবেদনে বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৮ ধারা অনুযায়ী দেশের বাইরে সংঘটিত অপরাধ নিজ দেশে বিচার করতে হলে মামলা দায়েরের আগে সরকারের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু এসব মামলার ক্ষেত্রে কোন অনুমোদন নেয়া হয়নি। মুক্তি পাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করেন। তিনি নিচে অপেক্ষা করা কালো রঙের একটি গাড়িতে করে হাসপাতাল এলাকা ত্যাগ করেন। এ সময় সাংবাদিকরা তার কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করলে তিনি সবাইকে এড়িয়ে যান। একজন সাংবাদিক জামিন সম্পর্কে ও মুক্তি পেয়ে কোথায় যাবেন? এ সম্পর্কে মিডিয়ার কাছে কিছু বলার অনুরোধ করলে তিনি বলেন, আমি মিডিয়ার কাছে কোন কথা বলব না। এর আগে সোমবার সকালে বিভিন্ন মিডিয়ায় কিছুক্ষণের মধ্যেই জামিনে মুক্তি পাবেনÑ এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার কেবিনের সামনে সাংবাদিকরা জড়ো হন। এর আগে সকালে জামিনের খবর পেয়ে তিনি হাসপাতালের কেবিন থেকে সামনে বের হন। এ সময় সাংবাদিকরা তাকে জামিন সম্পর্কে কিছু বলার অনুরোধ করলে তিনি বলেন, প্লিজ আমাকে কোন প্রশ্ন করবেন না। আমি এখনও মুক্ত নই। এখনও কারান্তরীণ আছি। এছাড়া আমি আমার নেত্রীর নির্দেশ ছাড়া আপনাদের কাছে কিছুই বলব না। আমি নেত্রীকে ও তার নির্দেশ মানি। তিনি আমাকে কিছু বলতে বললে বলব, অন্যথায় নয়। এ সময় বিভিন্ন প্রশ্নের পাশাপাশি সকল সাংবাদিকরা টিভি ক্যামেরা নিয়ে ভিডিও করতে ও ছবি তুলতে থাকলে তিনি উপস্থিত সকল সাংবাদিকের কাছে হাতজোড় করে বলতে থাকেনÑ প্লিজ আমাকে মাফ করেন। আমাকে আপনারা আর কোন প্রশ্ন করবেন না। কারা সূত্র জানায়, সকাল ১০টায় লতিফ সিদ্দিকীকে মুক্তির বিষয়ে আর কোন বাধা নেই বলে কারা বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তার নির্দেশে একজন কারা কর্মকর্তাকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু হঠাৎ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসির (প্রসিকিউশন) পক্ষ থেকে লতিফ সিদ্দকীকে জামিন দিতে কোন বাধা আছে কিনা, তা জানতে মুক্তি কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রাখার নিদেশ দেন। পরে কয়েক ঘণ্টা পর গোয়েন্দাদের নির্দেশ পাওয়ায় একজন কারা কর্মকর্তা বিএসএমএমইউ হাসপাতালে এসে কারামুক্ত করেন। এর আগে ২৬ মে ওই ২৭ মামলার মধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা ১৭ মামলার মধ্যে ৭ মামলায় ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করে আদালত এবং পরবর্তী চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এ রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলাগুলো স্থগিত থাকবে বলে আদেশে বলা হয়। এ সাতটি আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক ও বিচারপতি মোঃ ফরিদ আহমদ শিবলীর বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ প্রদান করেন। এর মধ্যে ছয়টি মামলা ঢাকার সিএমএম ও একটি মামলা নারায়ণগঞ্জের আদালতে দায়ের করা হয়েছিল। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা ঢাকার সাত মামলায় জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করলে হাইকোর্টে আসেন লতিফ সিদ্দিকীর আইনজীবীরা। ওই সাতটির মধ্যে ছয়টিতে এবং নারায়ণগঞ্জের এক মামলায় জামিন পান তিনি। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবির। এরপর ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, মোট দশ মামলায় লতিফকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী কোন ব্যক্তি দেশের বাহিরে অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে সরকারের পূর্ব অনুমোদন দরকার। কিন্তু লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে মামলা করতে সরকারের পূর্ব অনুমোদন নেয়া হয়নি।’ তিনি বলেন, একই অভিযোগে একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলতে পারবে না। এরপর ২৩ জুন আরও ১০ মামলায় জামিন পান সাবেক এই ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী। একই সঙ্গে ১০টি মামলা স্থগিতও করা হয়। বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিম ও বিচারপতি মোঃ ফরিদ আহমদ শিবলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ প্রদান করেন। এ নিয়ে মোট ১৭ মামলায় আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী জামিন পান। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার যে ১০টি মামলায় জামিন দেয়া হয় তার মধ্যে চট্টগ্রাম ৭টি, ঢাকা ১টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১টি ও লক্ষ্মীপুরে একটি মামলা রয়েছে। গত ২৩ জুন আদালতে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া। আদেশের পর তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, মঙ্গলবার ১০টি মামলা থেকে তিনি জামিন পেয়েছেন। এর আগে আরও ৭টি মামলা থেকে জামিন পান। অন্যদিকে ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মুনিরুজ্জামান কবির জনকণ্ঠকে বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে এখন ঢাকাসহ সারাদেশে ৪টি মামলা রয়েছে। যার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। ডিএজি বলেন, তার বিরুদ্ধে মোট ২১টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। অন্যদিকে ২৬ মে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে ঢাকার সিএমএম আদালতে করা ছয় মামলা ও নারায়ণঞ্জের আদালতে করা এক মামলায় জামিন পাওয়ায় সাত মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। ওই দিন আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বিদ্যমান আইন অনুসারে একই অভিযোগে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলতে পারে না। তাছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী কোন ব্যক্তি বিদেশে অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে দেশে মামলা করতে হলে সরকারের পূর্ব অনুমতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে সরকারের অনুমতি নেয়া হয়নি। ফলে সারাদেশে বিভিন্ন আদালতে দায়ের করা মামলাগুলো অবৈধ ছিল।
×