ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফরাশগঞ্জকে গোলবন্যায় ভাসাল জামাল

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৯ জুন ২০১৫

ফরাশগঞ্জকে গোলবন্যায় ভাসাল জামাল

মোঃ মামুন রশীদ ॥ গত কয়েকদিন অবিরাম বৃষ্টি হয়েছে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় জমে গেছে হাঁটুপানি। বিরামহীন বৃষ্টি আর বাজে আবহাওয়ার কারণে মান্যবর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবল পিছিয়ে দেয়ার চিন্তাও করা হয়েছিল। কিন্তু রবিবার বৃষ্টি হয়নি একটিবারের জন্যও। এরপরও বন্যা হয়েছে রবিবার বিকেলে। সে বন্যা গোলবন্যা। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলের দ্বিতীয় লেগের প্রথম ম্যাচেই এ গোলবন্যার রেকর্ড গড়ে ৯-১ গোলে ফরাশগঞ্জকে ডুবিয়েছে শীর্ষে থাকা শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব। জামালের হয়ে হ্যাটট্রিক করেন হাইতির ফরোয়ার্ড ওয়েডসন আনসেলমে এবং মামুনুল ইসলাম। ওয়েডসন হ্যাটট্রিকসহ চার গোল করেছেন। গত মৌসুমে উত্তর বারিধারার বিপক্ষে ৮-০ গোলে জিতেছিল শেখ জামাল। সেটিই ছিল প্রিমিয়ার ফুটবলের ইতিহাসে বড় ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড। এবার নতুন রেকর্ড গড়ল তারাই। প্রথম লেগে ১০ ম্যাচে ২২ গোল হজম করেছিল ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব। অর্থাৎ ম্যাচপ্রতি ২.২ গোল করে। কিন্তু আবার তারা দ্বিতীয় লেগের প্রথম ম্যাচেই ৯ গোল হজম করল। টানা ১১ ম্যাচের সাতটিই হারল তারা। প্রথম লেগ শেষে ১০ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকা শেখ জামাল ও ১০ ম্যাচের ছয়টি হেরে তলানিতে থাকা ফরাশগঞ্জ মুখোমুখি হয় রবিবার শুরু হওয়া প্রিমিয়ার ফুটবলের দ্বিতীয় লেগের প্রথম ম্যাচে। শুরু থেকেই ফরাশগঞ্জকে কোণঠাসা করে শক্তিশালী জামাল। একের পর এক আক্রমণে তাদের বিপর্যস্ত করতে থাকে ধানম-ির তারকা সমৃদ্ধ ক্লাবটি। সে তুলনায় একেবারেই দুর্বল ফরাশগঞ্জ ছিল আক্রমণ ঠেকিয়ে নিজেদের বাঁচাতে ব্যস্ত। কিন্তু সে প্রতিরোধ মাত্র ৮ মিনিট স্থায়ী হয়েছে। ৮ মিনিটের সময় জামালের হয়ে প্রথম গোল করেন গাম্বিয়ার ফরোয়ার্ড ল্যান্ডিং ডার্বো। মিডফিল্ডার আলমগীর কবিরের স্কয়ার পাস থেকে বল পেয়েই সুযোগ সন্ধানী ডার্বো মাটি কামড়ানো তীব্র শটে ফরাশগঞ্জের জালে বল জড়িয়ে দেন (১-০)। এরপরও আক্রমণ থেমে থাকেনি। পুরোপুরি অসহায় ছিল ফরাশগঞ্জ। মিডফিল্ডার সোহেল রানা দারুণ দুটি সুযোগ মিস করেন। ফরাশগঞ্জের গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি তিনি। কিন্তু পরিবর্তে একবারও জামালকে চাপে ফেলতে পারেনি ফরাশগঞ্জ। ডার্বো, মামুনুল আর ওয়েডসনের দুরন্ত ফুটবলশৈলী তাদের বিপর্যস্ত করে তাদের। ২৬ মিনিটের সময় দ্বিতীয় সাফল্য পায় জামাল। ডার্বোর নিচু করে দেয়া ক্রসে বল পেয়ে যান ওয়েডসন। এ সময় ফরাশগঞ্জের গোলরক্ষক এগিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তাকে বোকা বানিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন ওয়েডসন (২-০)। মুহুর্মুহু আক্রমণ চলতেই থাকে। তবে ফরাশগঞ্জ কিছুটা প্রচেষ্টা চালায় জামালকে প্রতি আক্রমণ করার। তেমনি এক প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ ৩৮ মিনিটে দারুণ একটি গোল আদায় করে তারা। নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড আকিনইয়েলে একক প্রচেষ্টায় বল নিয়ে ইয়ামিন মুন্না ও কেষ্ট কুমারকে কাটিয়ে দূরপাল্লার শটে গোল করে ব্যবধান কমান (২-১)। ৪২ মিনিটে ডার্বোর একটি শট রুখে দেন ফরাশগঞ্জ গোলরক্ষক সুজন চৌধুরী। কিন্তু ব্যবধান বাড়াতে সময় নেয়নি জামাল। ৪৫ মিনিটের সময় সোহেল রানার উঁচু করে বাড়ানো বলে হেড করে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন ওয়েডসন (৩-১)। প্রথমার্ধ শেষ হয়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধে প্রান্ত বদল নিজেদের গুছিয়ে নিতে পারেনি ফরাশগঞ্জ। ৫২ মিনিটেই আরেকটি গোল করে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন ওয়েডসন। ডার্বোর কাছ থেকে বল পেয়ে ডি-বক্সে ঢুকে গোল করেন তিনি (৪-১)। এক মিনিট পরেই অধিনায়ক মামুনুল নিজের প্রথম গোল করেন পেনাল্টি থেকে (৫-১)। ভল নিয়ে বিপজ্জনকভাবে আগুয়ান ডার্বোকে ডি-বক্সের মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন ফরাশগঞ্জের ডিফেন্ডার ফরহাদুজ্জামান বাবু। ৬৬ মিনিটের সময় মামুনুল দুরন্ত গতিতে বল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তার পাস থেকে ম্যাচে নিজের চতুর্থ গোল করেন ওয়েডসন (৬-১)। লীগে এটি ছিল এ হাইতিয়ানের দশম গোল। ৭৩ মিনিটে কর্নার পায় জামাল। লিঙ্কনের কর্নার থেকে পাওয়া বলে ২০ গজ দূর থেকে বাঁ পায়ের বাঁকানো শটে আবার লক্ষ্যভেদ করেন মামুনুল (৭-১)। কিছুক্ষণ পরে জামালের হয়ে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নামেন তকলিস আহমেদ। ৮৩ মিনিটেই তিনি গোল পেয়ে যান। এবারও গোলের পেছনে অবদান ত্রাস হয়ে ওঠা মামুনুলের। তার ক্রস থেকে লীগে নিজের প্রথম গোল করেন তকলিস (৮-১)। গোল করার ক্লান্তি এরপরও ভর করেনি জামাল শিবিরে। আক্রমণ চলতে থাকে। ৯০ মিনিটের সময় আবারও ফরাশগঞ্জকে বিমূঢ় করে দেন মামুনুল দূরপাল্লার শটে। লীগে প্রথম হ্যাটট্রিক করে এবার নিজের নবম গোল করেন মামুনুল ৩০ গজ দূর থেকে ওয়েডসনের দেয়া পাস থেকে (৯-১)। রেকর্ড জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে জামাল। ১১ ম্যাচে ৮ জয়, ২ ড্র ও ১ পরাজয়ে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে এককভাবে শীর্ষে থাকল তারা দ্বিতীয় লেগে দারুণ সূচনা করে।
×