ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২৯ জুন ২০১৫

মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আলহামদু লিল্লাহ। আল্লাহ পাকের অশেষ শুকরিয়া আমরা পবিত্র মাহে রমজানে রহমতের ১ম দশক অতিক্রম করে আজ মাগফিরাতের দশকে সন্তরণ শুরু করেছি। হুজুর আকরাম (স.) আমাদেরকে সিয়াম সাধনায় উৎসাহ দিতে গিয়ে বলেছেন, আউসাতুহু মাগফিরাহ অর্থাৎ মাহে রমজানের দ্বিতীয় দশক ক্ষমা প্রার্থনার ও ক্ষমা প্রাপ্তির। আসলে একজন বান্দার জন্য সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি, সবচেয়ে বড় অর্জন আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার পক্ষ থেকে ক্ষমা ও মার্জনা লাভ। এখন সে সুযোগ আমাদের দ্বারপ্রান্তে, ইবাদত, রিয়াযত ও তওবা ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে হবে। বস্তুত বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমার সুসংবাদ প্রাপ্তির চেয়ে আর কোন বড় পাওনা নেই। এ জন্য মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) তার প্রিয়তম স্ত্রীকে দুআ মুনাজাত শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেছেন, আয়েশা তুমি আল্লাহর কাছে বলবে, আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারীম তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নীÑ হে আল্লাহ পরওয়ারদিগার! তুমি তো বড় ক্ষমাশীল, দয়াবান। ক্ষমা করাকে পছন্দ কর। সুতরাং আমাকে ক্ষমা কর।’ বস্তুত আখিরাতের হিসাব-নিকাশ এত জটিল ও ইনসাফপূর্ণ যে আল্লাহ যদি কাউকে পাকড়াও করতে চান তাহলে নিস্তার নেই। এক্ষেত্রে যদি তার দয়ায় ক্ষমার মওকা মিলে তাহলেই কেবল তার নাজাত সম্ভব। আমাদের জাতীয় কবি নজরুল এ জন্য অত্যন্ত ব্যাকুল করা ফরিয়াদ করেছেনÑ রোজ হাশরে আল্লাহ আমার করোনা বিচার/ বিচার চাহিনা, চাহি খোদা করুণা তোমার...।’ এ সময় ক্ষমাপ্রাপ্তির জন্য আমাদের চিন্তা-চেতনা ও আমলের মধ্যে শুদ্ধিতা আনতে হবে। বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (র.) হতে বর্ণিত আছে, হুজুরে করীম (স.) বলেছেন, এমন কোন বান্দা নেই, যে বেহুদা কথাবার্তা ত্যাগ করে আল্লাহ তায়ালার জিকির চর্চার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর হালালকে হালাল জেনে এবং হারামকে হারাম মনে করে রোযা রাখবে এবং সমস্ত রমজানের মধ্যে কোন খারাপ কাজ করবে না। (তবে অবশ্যই) রোজার মাস শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার সমুদয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। তার প্রত্যেক তাসবীহ ও তাহলিলের বিনিময়ে বেহেস্তের মধ্যে একখানা প্রাসাদ তার জন্য তৈরি করা হয়। হুজুরে পুর নূর হযরত মুহম্মদ (স.) এর সুসংবাদ কার্যকর হওয়ার জন্য ও আখিরাতের পাথেয় লাভের জন্য আমাদেরকে খুলুসিয়াতের সঙ্গে যথাযথভাবে সিয়াম সাধনায় কোশেশ করতে হবে। আমরা কখনও শয়তানী কুমন্ত্রণার সাড়া দেব না, লোভে পড়ে হারামের পথে অগ্রসর হব না। হালাল রাহে দীনহীনভাবে হলেও চলার প্রত্যয়ী হব। হারাম উপার্জন সমূদয় ইবাদত কবুলের পথের বড় অন্তরায়। বস্তুত হালাল পথে চলার জন্য নিজের ইচ্ছে শক্তিই যথেষ্ট। আল্লাহ পাক জঙ্গলের বিশাল হাতি, সাগরের তিমি ও অথৈ জলে পাথরের নিচে শুয়ে থাকা ছোট প্রাণীটিরও রিজিকের ব্যবস্থা করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। পরওয়ার দিগার আল্লাহতে উজাড় করা ঈমান ও সাধ্যমতো শ্রমের মাঝে আমাদের সকলের জীবিকা এবং নাজাত উভয়টিই নিহিত। মাগফিরাতের দশকে বিষয়টি পূর্ণভাবে আমলে আনার চেষ্টা করতে হবে। মহনবী (স.) ইরশাদ করেন যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে ‘কানা লাহু মাগফিরাহ’... তা তার জন্য ক্ষমা এবং দোজখ থেকে মুক্তির এক বিরাট ওয়াসিলা হয়ে থাকে। হযরত রাসুলে কারীম (স.) বলেছেন : ৪টি কাজ রমজান মাসে বেশি বেশি করবে। দু’টি কাজ আল্লাহর জন্য আর দু’টি কাজ যা না করলে তোমার উপায় নেই। এর মধ্যে প্রথম দু’টি হলো কালিমা- ত্ইায়্যেবা ও ইস্তেগফার আর অপর দু’টি হলো বেহেস্তের প্রত্যাশা এবং দোজখের অগ্নি থেকে পানাহ কামনা। (এমনিভাবে) যে ব্যক্তি এ মাসে কোন রোজাদারকে পানি পান করাবে, আল্লাহ পাক ক্বিয়ামতের দিন তাকে হাউজে কাউসারের পানি পান করাবেন। অতঃপর বেহেস্তে প্রবেশ পর্যন্ত তার আর কোন পিপাসা হবে না।’ (বায়হাকী)। আখিরাতে নবীজীর হাতে হাউজে কাউসারের পানি পান করার সৌভাগ্য অনেক বড় প্রাপ্তি একজন আশেকে রাসূল বান্দার জন্য। আল্লাহ পাক! আমাদেরকে আপনার দয়া, রহমত ও মাগফিরাতের সামিয়ানার নিচে আশ্রয় পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন॥
×