ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খাদ্যমন্ত্রীর চ্যালেঞ্জ গম পচা নয়-

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ২৯ জুন ২০১৫

খাদ্যমন্ত্রীর চ্যালেঞ্জ গম পচা নয়-

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত গম পচা নয় বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, যে কেউ আমাদের গোডাউন থেকে গমের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করাতে পারেন। পরীক্ষার মাধ্যমে এই গমকে পচা প্রমাণ করে কথা বলুন। চ্যালেঞ্জ দেয়া হলো। এটাকে নিয়ে কেউ রাজনীতি বা মিথ্যাচার করবেন না। রবিবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে খাদ্যমন্ত্রী এই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। পাশাপাশি রবিবার উপসচিব মোঃ কাউসার আহমেদ স্বাক্ষরিত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এ সম্পর্কিত ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, যে কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা নিজ উদ্যোগে যে সমস্ত গোডাউনে ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত গম মজুদ রয়েছে সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে বাংলাদেশের যে কোন ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হবে। এতে অহেতুক ভুল ও অনুমাননির্ভর তথ্য প্রকাশ করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আহ্বান জানানো হয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গম পচা নয়, এ গম খাওয়ার উপযোগী। যারা এই গমকে পচা বলছে তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ রইল। তারা পারলে যে কোন প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করে তা পচা প্রমাণিত করুক। তবে ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গমে কিছু সমস্যা পাওয়া যাওয়ায় দুই লাখ টন গম ফেরত দেয়া হয়েছে। আগামীতে ব্রাজিল থেকে আর গম আমদানি করা হবে না বলেও জানান মন্ত্রী। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, চার মাস আগে যে সব প্যারামিটারের (মানদ-) ভিত্তিতে ব্রাজিলের গম আমরা যেভাবে রিসিভ করেছিলাম, পরীক্ষা করে দেখা গেছে এখনো তেমন আছে। এ গম সম্পূর্ণ খাওয়ার উপযোগী। খাদ্য অধিদফতর ও সায়েন্স ল্যাবরেটরির (বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ) পরীক্ষায় এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। গমের মান নিয়ে আমি স্যাটিসফাইড (সন্তুষ্ট)। এরপরও টিআইবি, সুজন, পত্র-পত্রিকার সংবাদিক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কারও যদি সন্দেহ থাকে আমি তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছি। তারা আমাদের যে কোন গোডাউন থেকে গমের নমুনা সংগ্রহ করে যে কোন পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করতে পারেন। এ জন্য তাদের সহযোগিতাও করব। খাদ্য একটি সংবেদনশীল বিষয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘সবার কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাই, এটাকে নিয়ে কেউ রাজনীতি বা মিথ্যাচার করবেন না। ব্রাজিল থেকে ‘পচা ও খাওয়া অনুপযোগী’ গম আমদানি করা হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কিছুদিন ধরে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। সমালোচনার মধ্যে গমের নমুনা খাদ্য অধিদফতরে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সেই পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর গত ২৪ জুন একটি বিবৃতি দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। এতে জানানো হয়, ব্রাজিল থেকে আসা গম চুক্তি অনুযায়ী পাওয়া গেছে। বিভিন্ন জেলা থেকে নেয়া নমুনা পরীক্ষা করে পচা কিংবা মানুষের খাওয়ার অনুপযোগী কোন গম পাওয়া যায়নি। একই সঙ্গে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটে পরীক্ষার জন্য নমুনা দেয়া হয়। সেই পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর রবিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন খাদ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার এ রিপোর্টে আপনাদের যদি সন্দেহ থাকে আরও যদি পা-িত্য ফলানোর কিছু থেকে থাকে যে এটা করতে হবে। তবে আপনারা তা স্ব-উদ্যোগে করতে পারেন। আমি আপনাদের সহযোগিতা করব।’ খাদ্যমন্ত্রী বলেন, অযথা এ বিষয়টি নিয়ে মিথ্যাচার করবেন না। দয়া করে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না। একটা সরকারের ভাবমূর্তি, আমার ভাবমূর্তি, মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করবেন না। দয়া করে মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকুন। এখনও যদি কেউ আবার মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়, তবে তা হবে জঘন্য অপরাধ। তিনি বলেন, পরীক্ষার বিষয়ে আমরা অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানাব। এটা তো প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তিও ক্ষুণœ করা। তিনি বলেন, পত্রিকায় প্রকাশিত গমের ছবির সঙ্গে খাদ্য অধিদফতরের গোডাউনে থাকা গমের কোন মিল নেই। চলতি বছর ৩৪ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে। তার মধ্যে ব্রাজিলের কিছু গম থাকতে পারে। এদিকে, খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে রবিবার বিকেলে আবারও বিবৃতি দেয়া হয়েছে। এ সম্পর্কিত লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দেশের গমের চাহিদা মেটানোর জন্য দীর্ঘকাল থেকে সরকার বিদেশ থেকে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে গম আমদানি করে আসছে। সর্বনি¤œ দরদাতাকারীর সঙ্গে খাদ্য অধিদফতর চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে এই গম আমদানি করে। চুক্তির শর্ত মোতাবেক গমের মান নির্ণয়ের জন্য গমের বিনির্দেশে ৯টি প্যারামিটার রয়েছে। উক্ত প্যারামিটারের সঙ্গে গমের মান সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেই খাদ্য অধিদফতর গম সরবরাহ নিয়ে থাকে। বর্তমান বছরে মোট ৬ লাখ মে টন গম আমদানির জন্য ১২টি দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে ৪টি দরপত্রের বিপরীতে ২টি কোম্পানি ব্রাজিল থেকে গম এনে ফেব্রুয়ারি-মার্চ ২০১৫ মাসে সরবরাহ করে। উক্ত গম ল্যাবরেটরি টেস্টে চুক্তির বিনির্দেশ মোতাবেক গ্রহণযোগ্য মাত্রার মধ্যে হওয়ায় খাদ্য অধিদফতর তা গ্রহণ করেছিল। সম্প্রতি কিছু পত্র-পত্রিকায় উক্ত গম সম্পর্কে বিরূপ সংবাদ প্রকাশ করায় খাদ্য মন্ত্রণালয় তার প্রতিবাদে গত ২৪ জুন ২০১৫ তারিখে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে। উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে পচা কিংবা মানুষের খাবার অনুপযোগী কোন গম পাওয়া যায়নি মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। এর পরেও কিছু কিছু পত্রিকা উক্ত গম সম্পর্কে বিরূপ সংবাদ প্রকাশ করছে। বক্তব্যে বলা হয়, খাদ্য অধিদফতরের ল্যাবরেটরিতে বর্তমান মহাপরিচালকের তত্ত্বাবধানে সারাদেশ থেকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সিলগালাবস্থায় সংগৃহীত গমের নমুনা পুনরায় পরীক্ষা করে গমের মান সম্পর্কে কোন বিরূপ তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া উক্ত গমের নমুনা বিসিএসআইআর (সায়েন্স ল্যাবরেটরি) এর গবেষণাগারে গমের বিনির্দেশ অনুযায়ী প্যারামিটারসমূহ পরীক্ষা করেও কোন বিরূপ তথ্য পাওয়া যায়নি। খাদ্য একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। খাদ্য অধিদফতর কখনই পচা ও খাবার অনুপযোগী গম আমদানি করেনি বা করে না। ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত গম টেস্ট রিপোর্ট অনুযায়ী মানুষের খাবার উপযোগী। যে কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা নিজ উদ্যোগে আমাদের যে সমস্ত গোডাউনে ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত গম মজুদ রয়েছে সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে বাংলাদেশের যে কোন ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আমরা তাদের সহযোগিতা করব। অহেতুক ভুল ও অনুমাননির্ভর তথ্য প্রকাশ করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আহ্বান জানানো যাচ্ছে।
×