ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সাংবাদিকদের জড়িয়ে চট্টগ্রাম মেয়রের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২৮ জুন ২০১৫

সাংবাদিকদের জড়িয়ে চট্টগ্রাম মেয়রের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সাংবাদিকদের জড়িয়ে চট্টগ্রামের নব নির্বাচিত মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অশালীন ও বাস্তবতা বিবর্জিত বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৬ জুন মাদক দ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে স্থানীয় মুসলিম হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মেয়র নাছির বলেছেন, অনেক সাংবাদিক মাদক গ্রহণ করে থাকেন। সাংবাদিকরা মাদকের বিরুদ্ধে লেখেন না। তবে তিনি এও বলেছেন, কিছু ব্যতিক্রমও আছে। মেয়র নাছিরের এ বক্তব্যের পর শনিবার রাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠে। শনিবার মেয়রের বক্তব্য বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রচারিত হওয়ার পর সৃষ্টি হয়েছে আরও তীব্র প্রতিক্রিয়া। উঠেছে নিন্দার ঝড়। চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) পক্ষ থেকে শনিবার মেয়রের প্রদত্ত বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। সিইউজে সভাপতি এজাজ ইউসুফী ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এক যুক্ত বিবৃতিতে মেয়র নাছিরের বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, অন্যথায় চট্টগ্রামের সাংবাদিকরা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ, চট্টগ্রামের নব নির্বাচিত মেয়রকে অতীত ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, সাংবাদিকরা কারও পরামর্শ নিয়ে কাজ করে না। কি করা দায়িত্ব, আর কি করতে হবে-তা সাংবাদিকদের জানা আছে। এ জন্যে কারও কাছ থেকে পরামর্শ নেয়ার দরকার হবে না। বরং মেয়র হিসেবে তাঁর যে দায়িত্ব সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার মধ্য দিয়ে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার দাবি জানান সিইউজে নেতৃবৃন্দ। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘মাদক দ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় ‘অনেক সাংবাদিক মাদকসেবী’, ‘অত্যন্ত সচেতনভাবে সাংবাদিকরা মাদকের বিরুদ্ধে কলম ধরা থেকে বিরত থাকেন’ বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা কোন সুস্থ মস্তিষ্কের বক্তব্য হতে পারে না। নেতৃবৃন্দ বলেন, সাংবাদিকরা যদি মাদকের বিরুদ্ধে কলম না ধরেন তা হলে তিনি মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে কিভাবে জানলেন। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করা শুধু সাংবাদিকদের একার দায়িত্ব নয়, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদেরও দায়িত্ব রয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় দলের চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির তিনি সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। নগরীর প্রতিটি অলি-গলিতে তাঁর দলের অজস্র নেতা-কর্মী রয়েছেন। যাদের অনুপ্রেরণায় গড়ে উঠতে পারে মাদক মুক্ত চট্টগ্রাম। সাংবাদিকদের পরামর্শ না দিয়ে মেয়র এবং দলের নেতা হিসাবে তিনিই সেই দায়িত্ব পালন করতে পারেন। মরণনেশা ইয়াবাসহ মাদক পাচারের সঙ্গে সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে নেতা, পাতিনেতা অনেকেই সরাসরি জড়িত থাকার কথা সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে। ‘সচেতনভাবে সাংবাদিকরা মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে কলম ধরেন না’ বলে মেয়র নিজে দায়িত্ব নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন ‘তার প্রতিবাদ জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, সাংবাদিকরা বরাবরই মাদকের বিষাক্ত ছোবলের কথা জাতির সামনে তুলে ধরে আসছে। মেয়র ‘সুস্থ’ থাকলে অবশ্যই বিষয়টি তাঁর নজরে আসতো। চট্টগ্রামে মাদকের ভয়াবহতার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় মাদকসেবীদের হাতে সাংবাদিক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, যা নব নির্বাচিত মেয়র নিজেও জানেন না। যদি জানতেন তা হলে তিনি সাংবাদিকদের জড়িয়ে এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে নিজেকে অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ হিসেবে প্রকাশ করতেন না।
×