ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নদী ভাঙ্গনে হুমকির মুখে বরিশালের বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২৮ জুন ২০১৫

নদী ভাঙ্গনে হুমকির মুখে বরিশালের বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল থেকে ॥ বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই বরিশালের বিস্তীর্ণ এলাকায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ নদীভাঙ্গন। ইতোমধ্যে শুক্রবার ভোরে বাবুগঞ্জের চাঁদপাশা ইউনিয়নের রফিয়াদি এলাকায় আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে একটি রাইস মিল, একটি স’ মিল এবং দুটি বসতঘর। হুমকির মুখে রয়েছে ওই এলাকার নদী তীরবর্তী শতাধিক পরিবার, শত শত একর ফসলি জমি, রাস্তাঘাট। এছাড়া বর্ষার ভয়ঙ্কর সুগন্ধা নদীর ভাঙ্গনে চরম হুমকির মুখে রয়েছে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের দোয়ারিকা এলাকার বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুসহ বরিশাল বিমানবন্দর, মেঘনা সংরক্ষণ বাঁধ, একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, ফেরিঘাট ও সড়ক। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, উল্লিখিত স্থাপনাসহ জেলার ঝুঁকিপূর্ণ ২৬ স্পটকে চিহ্নিত করে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প পাঠিয়েছেন। ২৬ স্পটকে রক্ষার জন্য প্রয়োজন ৪১০ কোটি টাকা। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে মাত্র ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ায় ভাঙ্গন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর দক্ষিণ-পূর্ব পাশের এ্যাপ্রোচ সড়ক থেকে মহিশাদি সৈয়দ মোশাররফ হোসেন একাডেমি পর্যন্ত এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। একই অবস্থা মানিককাঠি ও রাকুদিয়া গ্রামের। বরিশাল-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট শেখ মোঃ টিপু সুলতান বলেন, ভাঙ্গনকবলিত স্থানে শীত মৌসুমে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রাথমিক ভাঙ্গন প্রতিরোধে বিমানবন্দরের উত্তর পাশে পার্কো পাইন (বাঁশের খাঁচায় ইট ফেলা) তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে আপতকালীন বরাদ্দ দেয়া হলেও তারা ভাঙ্গন প্রতিরোধে গড়িমসি করছে। সূত্রমতে, কীর্তনখোলার ভাঙ্গনে বরিশাল নগরীর বেলতলা পানি শোধনাগার, ফেরিঘাট ও শিপইয়ার্ড ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ফেরির গ্যাংওয়ে ডুবে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। একই অবস্থা চরবাড়িয়া, চরকাউয়া ফেরিঘাট এলাকার। সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শাহিন বলেন, গত বছর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে ভাঙ্গন প্রতিরোধের আশ্বাস দেয়া সত্ত্বেও আজও কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বর্তমানে কীর্তনখোলার তিন কিলোমিটার এলাকা নদীতে ধসে পড়ার হুমকির মুখে রয়েছে। মেঘনা ঘেরা মেহেন্দীগঞ্জের উলানিয়া নদী সংরক্ষণ বাঁধের বিভিন্ন স্থানে চলতি বর্ষায় ব্লক সরে গিয়ে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। একই অবস্থা লেংগুটিয়া, পাতারহাট স্টিমারঘাটের। পাতারহাট বন্দর সংলগ্ন কয়েকটি দোকান নদীভাঙ্গনের কারণে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। নদীভাঙ্গনের কারণে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে উলানীয়া মোজাফফর খান ডিগ্রী কলেজ, করনেশন হাইস্কুল, বালিকা বিদ্যালয়, মহিলা মাদ্রাসা, তেঁঁতুলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। হিজলা উপজেলার হরিনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান তৌফিকুর রহমান সিকদার জানান, মেঘনা নদী গ্রাস করে নিচ্ছে হরিনাথপুর বাজার, ধুলখোলা, আলীগঞ্জ বাজার ও বাউশিয়া গ্রাম। মুলাদীর সফিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফখরুল আহসান শাহজাদা মুন্সী বলেন, গত রবিবার চরমেমালিয়া লঞ্চঘাট এলাকায় নয়টি বাড়িঘর ও যাত্রী ছাউনী রাক্ষুসী জয়ন্তী নদী গ্রাস করে নিয়েছে। মৃধারহাট লঞ্চঘাটেও ভাঙ্গন ধরেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশালের (পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ) নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন আহমেদ ভাঙ্গনের তীব্রতার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, চলতি মৌসুমে ভাঙ্গন প্রতিরোধে বড় কোন ব্যবস্থা তাদের হাতে নেই। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি পানি সম্পদমন্ত্রী সরেজমিন পরিদর্শন করে ভাঙ্গন প্রতিরোধে প্রকল্প প্রস্তাব করে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী জেলায় ২৬ স্পটকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প আকারে পাঠানো হয়। এর মধ্যে সুগন্ধা নদীর ভাঙ্গনে দোয়ারিকার ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু, বরিশাল বিমানবন্দর, মেঘনা সংরক্ষণ বাঁধ, নগরীর বেলতলা ফেরিঘাট, চরবাড়িয়া, উজিরপুরের সাকরাল চতলবাড়ি, হিজলার হরিনাথপুর, মুলাদীর গুদিঘাটা রয়েছে। তিনি জানান, ২৬ প্রকল্পের অনুকূলে ৪১০ কোটি টাকার বরাদ্দ চাওয়া হলেও তাতে কোন সাড়া মেলেনি। বরং পাঁচ প্রকল্পে আংশিক বরাদ্দ হিসেবে ১৫ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে।
×