ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্রিকেটের জয়, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি ও সাবধানতা

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৭ জুন ২০১৫

ক্রিকেটের জয়, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি ও সাবধানতা

এক ধরনের ভ্রান্তিবিলাসে থাকা জাতি আমরা। জয়ের আনন্দেও সন্দেহ যায় না। দেশের কিছু দুশমন আগাগোড়াই এসব বিষয়ে সতর্ক আর ধুরন্ধর। জাতি যখন পাকিস্তান আর ভারতের বিরুদ্ধে টাইগারদের জয়ে উল্লসিত, আনন্দিত তখন এরা আবার সুযোগ বুঝে কোপ মারতে চাইছে। গোড়াতে বলে নেই- এদের কথা জাতি শোনেনি, শুনবেও না। তবে বিভ্রান্ত করার তরিকাটা এরা ভাল জানে। আমরা যে কারণে অবাক হই বা আমাদের বেদনা জাগে এ মানুষগুলো তো বহুদিন ধরেই এসব কুকর্ম চালিয়ে আসছে। এরা জামায়াতের চাইতে ভয়ঙ্কর। এদের আচরণ বিএনপিকে সবসময় এমন মদদ দেয় যাতে পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে ওঠে। এখন আমাদের ক্রিকেটের সুবর্ণ সময়। আমরা পাকিস্তানকে ধবল ধোলাই দিয়েছি। ভারতকে তা দিতে না পারলেও তারা বুঝে গেছে সেদিন খুব বেশি দূরে নয়। তাদের এতদিনের সাজানো স্বপ্ন আর উচ্চাশার কাচের ঘরে ঢিল পড়েছে। বুঝতে পেরেছে বাংলার বাঘকে ঠেকানো যাবে না। একদিকে যেমন আত্মতুষ্টি আরেকদিকে অন্যকে ছোট করা বা প্রতারণা করে হারানোর দিন শেষ। পাকিদের বেলায়ও একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেছেÑ দৈহিক যোগ্যতা আর হম্বি তম্বি দিয়ে পার পাওয়া যাবে না আর। সবচেয়ে বড় কথা মুস্তাফিজের বিশ্বকাঁপানো পারফর্মেন্স আর ইতিহাসের নতুন বাঁক। সব মিলিয়ে বৃহস্পতি ছিল তুঙ্গে। অথচ এই সব দুশমনরা পাকিদের বেলায় মিন মিন করে জয় মেনে নিলেও এখন এতে সন্দেহ আর অবিশ্বাসের ছায়া দেখছে। দেশ স্বাধীনের পর চিহ্নিত খুনী ব্যর্থ রাজনীতিক শফিউল আলম প্রধান শেষ ওয়ান ডে ম্যাচে বাংলাদেশের পরাজয়ের কারণে এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছেন। কতবড় দুঃসাহস। যত দেশপ্রেমের জোব্বা বা আলখেল্লা ধারণ করুক না কেন এ কথার ভেতর দিয়ে প্রমাণ হলো তিনি আমাদের সোনার ছেলেদের বিশ্বাস করেন না। আজ রাজনৈতিক কারণে মাঠ গরম করার স্বার্থে বা খেলা জমানোর কায়দায় হারের জন্য বিচার চাইছেন একদিন জয়ের ঘটনার জন্যও তিনি একই কথা বলবেন। আমি নিশ্চিত তখন এরা বলবে জয়গুলো ছিল পরিকল্পিত। ভারতের ষড়যন্ত্রে পাকিস্তানকে ছোট করা বা কোন টুর্নামেন্ট থেকে আউট করার ফন্দি। আসলে এরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চরম শত্রু। এদের জীবনের কোথাও বাঙালিত্ব নেই। শফিউল আলম প্রধান একা কেউ নয়। তার আশপাশে দেখুন এমন হাজার নীরব খুনী আর ঘাতক এই দেশ ও জনতাকে খুন করতে চাইছে। কত বড় ধান্দাবাজ আর শয়তান হলে সাত খুনের আসামি গলা ফুলিবে সব বলতে পারে। এত সরকার এলো গেল কই কেউ তো তার টিকিটিও ছুঁতে পারল না। এমনকি বিএনপির মঞ্চে বসে খালেদা জিয়াকে পর পর কয়েকবার তিলক ওয়ালী নেত্রী সম্বোধনের পরও তার সঙ্গে তাদের আঁতাতে সমস্যা থাকল না। এর গূঢ় কারণ জানা দরকার। তা ছাড়া বাংলাদেশে যদি একাত্তরে সংঘটিত হত্যাকা-ের বিচার হতে পারে স্বাধীনতার পর ঠা-া মাথায় খুনের বিচার করা যাবে না কোন কারণে? যে কথা বলছিলাম। আজকাল বদলে যাবার যুগে অনেক সিনিয়র মানুষকেও আমরা এগুলো বলতে শুনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামজাদা অধ্যাপক আমাদের এককালের বাম আদর্শ ও চেতনার পতাকাবাহী প্রবীণ এক বুদ্ধিজীবী বলেছেন, বাঙালী জাতীয়তাবাদের নাকি আর কিছু দেয়ার নেই। উদাহরণগুলো দেখুন। বলছেন মোদি এসে হিন্দীতে বক্তৃতা দিল আমরা হাততালি দিলাম। পাকিস্তানের কেউ এসে উর্দুতে ভাষণ দিলে কি আমরা মানতাম? আহারে! মানুষ আসলে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শৈশবে চলে যায়। তার বুদ্ধি বিবেচনা আর ধমনীতে অতীতের বাইরে হয়ত কিছুই থাকে না। এই প্রবীণ মানুষটির লেখা পড়ে একসময় আন্দোলিত হতাম। যদিও চৈনিক বামদের আমি কখনও বিশ্বাস করি না। কারণ সে পথে যাবার মূল কারণ ছিল ভারত ও আওয়ামী রাজনীতিসহ অসাম্প্রদায়িকতার প্রতি আন্তরিক বিদ্বেষ। ভদ্রলোক এখনও বায়ান্নে বাস করছেন। সে সময় তো আমরা একদেশ বলে আমাদের ওপর ভাষা চাপানোর বিরোধিতা করেছিলাম। আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নেয়ার প্রতিবাদে জ্বলে উঠেছিলাম। এখন যদি নওয়াজ শরীফ আসেন তবে কি আমরা আশা করব যে তিনি বাংলায় ভাষণ দেবেন? তিনি তাঁর নিজের ভাষাতেই কথা বলবেন। কারণ এটা আর এক দেশ নয়। যার যার ভাষায় সে কথা বলবে। আমি একটা বিষয় বুঝি না, এইটুকু জানার পরও এদের মতো সিনিয়র প্রবীণরা কেন এমন সব কথা বলেন? ঐ যে অন্তরে বিদ্বেষÑ সেটাই আসলে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে ঝুঁকতে ঝুঁকতে এরা যে কখন লুটিয়ে পড়েছেন নিজেরাই জানেন না। অথচ এই দেশ এই জাতিকে এখন আমরা তার অন্তর্গত তেজ আর ভালবাসায় জ্বলে উঠতে দেখছি। গ্রামবাংলার ছেলেরা মেধা ও শ্রমে গড়ে তুলছে নতুন বলয়। ভারতের মতো শক্তিশালী দেশের প্রধানমন্ত্রীও সাকিবের কথা বলেন। সাকিবের সঙ্গে যোগ হয়েছে মুস্তাফিজ বা লিটনের দায়িত্ববোধ। এই ঐক্য ক্রিকেটের অবদান। হয়ত সে কারণেই এদের তা ভাল লাগছে না। না লাগুক, অন্ধ হলে কি আর প্রলয় বন্ধ থাকে? আমাদের দেশকে এরা কখনও ভালবাসেনি। ভালবাসতে পারেনি। জন্মপ্রক্রিয়ার সরাসরি ও প্রচ্ছন্ন দুশমনরাই আজও সক্রিয়। একবার ভাবুন জামায়াত যে লোকসান করে না করতে পারে না এরা তারচেয়ে বেশি করে। আর আমরা এদের বলি নেতা বা বুদ্ধিজীবী। আজ সময় এসেছে শক্ত হওয়ার। সরকারী দলেও এখন ছায়া শত্রুর ভিড়। আমার তো মনে হয় ছদ্মবেশীরা যেখানে আস্তানা পেতেছে, সে জায়গাটা ঠিক না করলে কোন অর্জন কিন্তু আসলে ফসল হয়ে উঠবে না। তাছাড়া সাইডলাইনে থাকা বিএনপি বা বেগম জিয়ারা সুযোগ পেলে এসবের ফলাফল নিজেদের ঘরেই নিয়ে যাবেন। যেটা তাঁরা আগেও সার্থকভাবে করে দেখিয়েছেন। একটা ব্যাপার ভাবুনÑ এই যে ইফতার কালচার, এর সঙ্গে বিদেশী মেহমানদের এত যোগ, এত ঘনঘটা আর সেলফি তোলার খায়েশ কি আসলে সংযমের সঙ্গে যায়? কই কোন নেতাকে তো দেখলাম না গ্রামবাংলায় গিয়ে মেহনতি কৃষক বা শ্রমিকের সঙ্গে ইফতার করতে? ইফতারের পার্টনার কি শুধু রাজদূত আর মান্যবরেরা? আর একদিন কিছু এতিম ডেকে খাওয়ানো? সব প্রশ্ন জমছে, জমে পাহাড় হচ্ছে। কিন্তু উত্তর মিলছে না। ষড়যন্ত্রের ডালপালা ছাড়ানোর আগেই সাইজ জরুরী। কেউকি সেটা বুঝছেন? না গৃহদাহের আগুনে পোড়ানো আলু খাবার লোভে ব্যস্ত তারা?
×