ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১ জুলাইয়ের মধ্যে মজুরি পরিশোধের নির্দেশ

বেতন বোনাস নিয়ে অস্থির হতে পারে গার্মেন্টস

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৭ জুন ২০১৫

বেতন বোনাস নিয়ে অস্থির হতে পারে গার্মেন্টস

এম শাহজাহান ॥ ঈদ সামনে রেখে গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে বেতন-ভাতা ও বোনাস সময় মতো পরিশোধ করার দাবিতে। আর তাই আগামী ১০ জুলাইয়ের মধ্যে গার্মেন্টস খাতের সকল শ্রমিক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের বেতন পরিশোধের জন্য মালিকদের নির্দেশ দিয়েছে বিজিএমইএ। কারখানাগুলো কঠোর মনিটরিংয়ের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়া ঈদের ছুটির আগে ভাতা পরিশোধ করার জন্যও বলা হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, শতভাগ কমপ্লায়েন্স করার শর্তে গার্মেন্টস খাতে বেতন-বোনাস নিয়ে এখন আর বড় ধরনের সমস্যা নেই। গত কয়েক বছরে ঈদের আগে বড় ধরনের কোন অস্থিরতাও দেখা যায়নি। তবে ঈদ সামনে রেখে ষড়যন্ত্রকারীদের ইন্ধনে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে এ শিল্পে। এ আশঙ্কা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, শ্রমিক সংগঠন এবং গোয়েন্দা সংস্থার। আর এ কারণে বিজিএমইএ এবারও ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির সদস্যরা রোজার শুরু থেকে ঝুঁকিপূর্ণ গার্মেন্টসগুলো নিয়মিত মরিটরিং করছেন। শুধু তাই নয়, পোশাক খাতের বড় আটটি জোনে পুলিশ নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি এসএম মান্নান কচি জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদের আগে বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য আমরা মালিকদের নির্দেশ দিয়েছি। আশা করছি, বিজিএমইএর নির্দেশে সময়মতো বেতন পরিশোধ করবেন মালিকরা। তিনি অস্থিরতার আশঙ্কা নেই জানিয়ে বলেন, ষড়যন্ত্র রয়েছে তবে তা সফল হবে না। ঝুঁকিপূর্ণ গার্মেন্টসগুলো নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। এজন্য বিজিএমইএতে একটি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি রয়েছে। প্রত্যাশা করছি, ঈদের আগে এ শিল্পে কোন ধরনের অস্থিরতা তৈরি হবে না। জানা গেছে, বিজিএমইএর কঠোর মনিটরিংয়ের পরও প্রায় ১ হাজার কারখানায় ছোটখাটো সমস্যা রয়েছে। এছাড়া বেতন-ভাতা ও বোনাস পরিশোধে শতাধিক কারখানায় সঙ্কট তৈরি হতে পারে। কারখানাগুলো আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ায় এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে আর্থিক সমস্যা মোকাবেলায় ইতোমধ্যে বিজিএমইএ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে সময়মতো টাকা প্রদানের জন্য অনুরোধ করবে বলে জানা গেছে। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম জনকণ্ঠকে বলেন, ১০ জুলাইয়ের মধ্যে বেতন পরিশোধ করবেন মালিকরা। আর ঈদের আগে ভাতা পরিশোধ করা হবে। তিনি বলেন, শ্রমিকদের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে এবার ছুটি প্রদানের ক্ষেত্রে নতুন কৌশল নেয়া হয়েছে। ছুটিতে যারা আগে যাবেন তারা আবার কাজে যোগদানও করবেন আগে। আবার যারা পরে যাবেন তারা ফিরবেনও পরে। তিনি বলেন, নিয়মিত মনিটরিংয়ের ফলে এ শিল্প নিয়ে এখন ব্যাড গেম খেলার সুযোগ অনেক কমে গেছে। সূত্রমতে, ঈদের আগে পোশাকশিল্প মালিকদের বেতন-বোনাস ও ওভারটাইম ভাতা প্রদান করার জন্য সরকারীভাবে নির্দেশনা দেয়া হবে। এজন্য আগামী সপ্তাহে শ্রম মন্ত্রণালয়ে পোশাকশিল্প সংক্রান্ত ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ প্রসঙ্গে শ্রম মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদ সামনে রেখে পোশাক কারখানায় অস্থিরতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকেই। এ সমস্যা তৈরি হয় বেতন-বোনাস নিয়ে। তাই আগামী সপ্তাহে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটির বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওই বৈঠকের পর আশা করছি যেসব কারখানায় সমস্যা রয়েছে তার একটি সমাধান হবে। তিনি বলেন, ঈদ আসলেই পোশাক কারখানায় সঙ্কট তৈরি হয়। মালিকপক্ষের গাফিলতির কারণেই এমনটি হয়ে থাকে। এছাড়া রয়েছে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র। অনেকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলেও এ সময় পোশাক শ্রমিকদের ব্যবহার করতে চায়। এদিকে পোশাক শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস ঈদের আগে প্রদানের জন্য শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে দাবিও জানানো হয়েছে। তারা বলছেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করা হোক। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদের আগে বেতন ও বোনাস পাওয়া প্রতিটি শ্রমিক পরিবারের জন্য জরুরী। ঈদ আসলেই ছোট কারখানার মালিকরা বেঁকে বসেন। ফলে শ্রম অসন্তোষ তৈরি হয়। এবছরও শতাধিক কারখানায় বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা তৈরি হতে পারে, তবে ওসব প্রতিষ্ঠানের দিকে নজর রাখা হচ্ছে।
×