ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাফল্যের মধ্য গগনে মাশরাফিরা

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২৬ জুন ২০১৫

সাফল্যের মধ্য গগনে মাশরাফিরা

মিথুন আশরাফ ॥ মাত্র সাত মাসেই কী বদলে গেছে বাংলাদেশ দল! যে দলটি গতবছরের শুরু থেকে পরিণত দল হয়েও নবেম্বর পর্যন্ত অন্ধকার সব মুহূর্তের দেখা পেয়েছে, সেই দলটিই কি না পরের সময়টুকুতে শুধুই আলোয় ভেসেছে। কী জিম্বাবুইয়ে, কী বিশ্বকাপ, কী পাকিস্তান, কী ভারত; যে সিরিজ, টুর্নামেন্টই সামনে এসেছে, শুধু সাফল্যই পেয়েছে। এমনই সাফল্য এ বছর ধরা দিয়েছে, সাফল্যের চূড়াতেই যেন উঠে যাচ্ছে বাংলাদেশ! ভারতের মতো শক্তিশালী দলকে সিরিজে হারানোর পর কী আর সাফল্যের মালা ক্রিকেটারদের গলায় না জড়িয়ে পারে। শেষপর্যন্ত বাংলাদেশ দেখিয়ে দিল, শুধু দুর্বল দলের বিপক্ষেই নয়, যোগ্যতা আছে শক্তিশালী দলকেও দুমড়ে মুছড়ে দেয়ার। ভারতকে হারানোয়, দুর্বল দলকে সিরিজে হারানোর যে অপবাদ এতদিন বাংলাদেশ ক্রিকেটের গায়ে লেগে ছিল, তা এবার উধাও হয়ে গেল। এখন বাংলাদেশের সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। এবার বাংলাদেশকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে লড়াই করতে হবে এবং ঝলকও দেখাতে হবে। এ সিরিজও হবে বাংলাদেশের মাটিতেই। ৫ জুলাই প্রথম টি২০ দিয়ে দুই ম্যাচের টি২০ (৫ ও ৭ জুলাই), তিন ম্যাচের ওয়ানডে (১০, ১২ ও ১৫ জুলাই) ও দুই ম্যাচের টেস্ট (২১-২৫ জুলাই ও ৩০ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট) সিরিজ হবে। টেস্টে বাংলাদেশ এখনও পরিণত দল হয়ে উঠতে পারেনি, তা সবারই জানা। তবে টি২০ ও ওয়ানডেতে বাংলাদেশ এখন ‘ভয়ঙ্কর’ দল। যে দলটিকে নিয়ে প্রতিপক্ষের ভেতর রীতিমত আতঙ্ক তৈরি হয়ে গেছে। যাকেই সামনে পাচ্ছে বাংলাদেশ, তাকেই যেন ‘গিলে’ খেয়ে ফেলার মতো অবস্থা হয়েছে। সাফল্য পেয়েই চলেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও তা বজায় রাখার পালা। অন্তত ওয়ানডেতে যদি সিরিজ জয় নাও হয়, একটি জয় যেন মিলে; তাহলেও টানা সিরিজ জয়ের যে ঝলকানি বাংলাদেশ দেখিয়ে চলেছে, তা অব্যাহত থাকবে। আপাতত ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের আনন্দই আসলে উপভোগ করা উচিত। তা করছেনও মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, তামিম, রুবেল, মুস্তাফিজরা। সেই সঙ্গে দুর্বল দলকে হারানোর অপবাদ যে দূর করা গেছে, তা ভেবে কী মুচকি হাসিও আসছে না? একটি করে সিরিজ, টুর্নামেন্ট এসেছে, আর প্রশ্ন উঠেছে; পারবে বাংলাদেশ? ২০১৪ সালের শুরু থেকে একটানা ১২ ওয়ানডে হারার পর এমন প্রশ্ন ওঠাও স্বাভাবিক। বাংলাদেশ যে শুধু টেস্ট খেলুড়ে দল শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজই নয়; আফগানিস্তানের মতো ‘দুর্বল’ দলের কাছেও হেরেছে! অবশেষে আসল জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজ। যখন হারের গোলকধাঁধাতে পড়ে গেছে তখন জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে পারবে বাংলাদেশ? সেই প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজে নতুন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার হাত ধরে ‘বদলে’ যাওয়া একটি দল হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিয়ে দেয়। ফিরে আসে জয়ের ধারায়। টানা ৫ ওয়ানডেতেই জিম্বাবুইয়েকে হারিয়ে দেয় এবং ‘বাংলাওয়াশ’ করে। এরপর অনেকদিনের বিরতি পড়ে। শুরু হয় বিশ্বকাপ। কেউই মুখে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠবে বাংলাদেশ, তা সাহস করে বলতে পারেননি। দেশের বাইরে খেলা। তাও আবার অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে। প্রথম পর্বেই বিদায় বাংলাদেশ। এমনই যখন ভাবনা হয়েছে, তখন আফগানিস্তানের মতো দলও হুঙ্কার দিয়েছে, স্কটল্যান্ডও চোখ রাঙিয়েছে। সবাইকে শিক্ষা দিয়ে দিয়েছে মাশরাফির দল। এমনকি ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলাও নিশ্চিত করে নেয়! বিশ্ব ক্রিকেটে প্রশংসায় ভাসতে থাকে বাংলাদেশের নাম। কোয়ার্টার ফাইনালে এসে যে ভারতের বিপক্ষে হেরেছে বাংলাদেশ, সেই ম্যাচটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তগুলো না গেলে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে খেলতেও পারত মাশরাফির দল। তা হয়নি। তবে বিরোচিত সংবর্ধনাই ক্রিকেটাররা দেশে এসে পেয়েছেন। সেই যে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ, তা বিশ্বকাপেও ধরে রেখেছে। এবার বাংলাদেশের মাটিতে বিশ্বকাপ শেষে খেলতে এসেছে পাকিস্তান। তরুণ দল পাকিস্তানের। এরপরও সাকিব ছাড়া আর কেউই সিরিজ জেতার কথা বলতে পারেননি। সাকিব সেই সাহস সবার মনের ভেতর ঢুকিয়ে দেন। সত্যিই তাই ঘটল। প্রথম ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালের পর আবারও বাংলাদেশ হারাল পাকিস্তানকে। অনেকেই বলতে চেয়েছেন ‘ফ্লুক’। দ্বিতীয় ম্যাচও জিতল বাংলাদেশ। তাতেও নিন্দুকদের মন ভরল না। প্রথমবার বাংলাদেশ সিরিজে হারাল পাকিস্তানকে, তাতেও ‘হয়ে গেছে আর কি,’ এমনও বলতে শোনা গেছে। যখন তৃতীয় ওয়ানডেতেও জিতে পাকিস্তানকে ‘বাংলাওয়াশ’ করল বাংলাদেশ, তখন গিয়ে সমালোচকরা যেন থমকে দাঁড়াল। এটা তো ‘ফ্লুক’ হতে পারে না। সত্যিই বাংলাদেশ বদলে গেছে। এরপরও কথা উঠল, পাকিস্তান দুর্বল দল তো তাই হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। যেমনটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ হয়েছিল। তখন বলাবলি হলো, বোঝা যাবে; যদি ভারতকেও হারাতে পারে বাংলাদেশ। সাকিব এবারও সবার আগে বললেন, ‘আমরা সিরিজ জিততে পারি।’ কিন্তু সেই কথায় খুব বেশি লোক মিলল না যে সমর্থন জানালো। তবে মনের ভেতর কিন্তু ঠিকই সিরিজ জিততে পারে বাংলাদেশ, এমন একটা ভাবনা সবার ভেতরই কাজ করেছে। কিন্তু মুখে কেউ বলতে চায়নি। শেষপর্যন্ত কী দেখা গেল। সিনিয়র ক্রিকেটাররা আইপিএল খেলা শেষে বাংলাদেশে খেলতে আসতে চাননি। ভারতের ক্রিকেট বোর্ড মানিয়ে পাঠিয়েছে। সেই সিনিয়র ক্রিকেটাররাও বাংলাদেশকে টানা দুই ম্যাচে হারাতে পারল না। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কাছে সিরিজ হারল ভারত। সেই সঙ্গে প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ যখন জয় পেল, তখনই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে প্রতিশোধ নেয়াও হয়ে গেল। প্রথম ওয়ানডেতে জেতার পর ভারত ক্রিকেটারদের এমন ভাব ছিল যেন দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দুমড়ে মুছড়ে দেবে। কিন্তু তা আর পারল না। উল্টো হেরেই গেল। এক মুস্তাফিজুর রহমানই হারিয়ে দিলেন ভারতকে। তৃতীয় ওয়ানডেতে গিয়ে যখন ভারতের সামনে সম্মান রক্ষার লড়াই এসে দাঁড়ায়, অবশেষে জয় পেল ভারত। সান্ত¡নার জয় পেল। তবে বাংলাদেশ যে আগেই সিরিজ জিতে নিয়েছে, তাতেই বুঝিয়ে দিয়েছেন মাশরাফিরা, শুধু দুর্বল দলকেই নয়, পুরো শক্তির দলকেও সিরিজে হারাতে পারেন তারা। সঙ্গে র‌্যাঙ্কিংয়ে ৭ নম্বরে থাকা চূড়ান্ত করে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলাও নিশ্চিত করে নিয়েছে বাংলাদেশ। তাতে ধীরে ধীরে সাফল্যের চূড়াতেও উঠছে বাংলাদেশ।
×