ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুস্তাফিজের আরেকটি রেকর্ড

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ২৫ জুন ২০১৫

মুস্তাফিজের আরেকটি রেকর্ড

মোঃ মামুন রশীদ ॥ অভিষেকে যা করেছিলেন তেমনটা তাঁর আগেও ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে নয় ক্রিকেটার করে দেখিয়েছিলেন। এমনকি বাংলাদেশের একজনও ছিলেন তালিকায়। তবে প্রথমবারের মতো আচমকা দলে ঢুকেই আর বসে থাকতে হয়নি। অভিষেক হয়ে গেছে আর সেটা কাজে লাগিয়ে নিজেকে উজ্জ্বলতম পারফর্মার হিসেবেই উপস্থাপন করেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। তবে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচে কি করবেন সেটা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু আরও ভয়ঙ্কর রূপে আবির্ভূত হয়ে ৬ উইকেট দখল করলেন। ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন, জিতিয়েছেন ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ। তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডের পরও তিনি সবার ওপরেই থাকলেন। রেকর্ড যেন পিছুই ছাড়ছে না তার। অভিষেকে ৫ উইকেট নেয়া বোলারদের মধ্যে কেউ ক্যারিয়ারের প্রথম তিন ওয়ানডেতে এর আগে ১৩ উইকেট নিতে পারেননি। তবে মুস্তাফিজ ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা ও সুরেশ রায়নাকে সাজঘরে ফিরিয়ে সেই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। তিন ম্যাচের সিরিজে ১৩ উইকেট শিকার ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সেরা নৈপুণ্য। সেটা আর কেউ ওয়ানডের ইতিহাসে করে দেখাতে পারেননি। তবে অস্ট্রেলিয়ান পেসার রায়ান হ্যারিস ৫ ম্যাচের সিরিজে ৩ ম্যাচ খেলে ১৩ উইকেট নিয়েছিলেন। নতুন রেকর্ড গড়ে আরেকটি ইতিহাস রচনা করলেন সাতক্ষীরা এক্সপ্রেস খ্যাতি পাওয়া এবং ‘ছোট বাঘ’ নাম পাওয়া মুস্তাফিজ। অভিষেক ম্যাচেই মূল স্ট্রাইক বোলার হিসেবে শুরু করেছিলেন মুস্তাফিজ। ক্রিকেট বোদ্ধারা বলে থাকেন ব্যাটিংয়ের মতো বোলিং জুটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মুস্তাফিজের জুটি হিসেবে দারুণ মানিয়ে উঠেছিলেন তাসকিন আহমেদ। বিশেষ করে অভিষেক ম্যাচেই তার সঙ্গী হিসেবে তাসকিন দারুণ অনুপ্রেরণার কারণ ছিলেন। প্রথম ওয়ানডেতে ভারতীয় ব্যাটিংয়ে ধসের শুরুটা করেছিলেন তাসকিনই। এই ভারতের বিপক্ষেই অভিষেক ওয়ানডেতে গত বছর জুনে ২৮ রানে ৫ উইকেট শিকার করেছিলেন তাসকিন। সেটা ছিল অভিষেক ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা আর এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় সেরা বোলিং নৈপুণ্য। এবার তিনি প্রথম ওয়ানডেতে ভারতীয় ব্যাটিংয়ে হামলে পড়লেন এবং সাজঘরে ফিরিয়ে দিলেন জোড়া আঘাতে শিখর ধাওয়ান ও বিরাট কোহলিকে। এরপর আর কোন বোলারকে সুযোগ দেননি মুস্তাফিজ। রোহিত শর্মা, আজিঙ্কা রাহানে, সুরেশ রায়না, রবীন্দ্র জাদেজা ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও তার সঙ্গী ছিলেন তাসকিন। এবারও আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ৬ উইকেট শিকার করেন মুস্তাফিজ- ফিরিয়ে দেন এবার রোহিত, মহেন্দ্র সিং ধোনি, রায়না, জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল ও অশ্বিনকে। তৃতীয় ম্যাচে প্রথমবার সঙ্গী পাল্টে আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে বোলিং করলেন মুস্তাফিজ। আর এই প্রথম যেন নিষ্ক্রিয় দেখা গেল ভয়ানক এ কাটার ও সেøায়ারের মালিককে। দারুণ বিধ্বংসী মুস্তাফিজ এদিন শুরু থেকেই তেমন ভাল করতে পারেননি। যদিও প্রথম আঘাতটা তিনিই হেনেছিলেন। সিরিজে তৃতীয়বারের মতো রোহিতকে সাজঘরে ফেরত পাঠান তিনি। প্রথম স্পেলে ৫-০-২৫-১ বোলিং বিশ্লেষণ নিয়ে শেষ করেন তিনি। ৩৫তম ওভারে দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে আরও দুই ওভার বোলিং করে ৮ রান দিয়ে কোন সাফল্য পাননি। শেষ স্পেলে ৪৭ ও ৪৯তম ওভারে অবশ্য বেশ মার খেতে হয়েছে। ২৪ রান দিয়েছেন। তবে এর বিনিময়ে তিনি সিরিজে তৃতীয়বারের মতো শিকার করেছেন রায়নাকে। তৃতীয় ওয়ানডে শেষ করেছেন ১০ ওভারে ৫৭ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে। এর মাধ্যমে সিরিজে ১৩ উইকেট হয়ে গেল তার। এর আগে অভিষেকে ৫ উইকেট নেয়া কোন বোলারই টানা তিন ম্যাচ ভাল বোলিং করে এত বেশি উইকেট নিতে পারেননি। জিম্বাবুইয়ের ব্রায়ান ভিটোরি নিয়েছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম তিন ম্যাচে ১১ উইকেট। সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেন মুস্তাফিজ। ১৯ বছর বয়সী এ তরুণ বাংলাদেশের জন্য নতুন এক রেকর্ড গড়েছেন। তিনি সিরিজে ১৩ উইকেট নিয়েছেন যা ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সেরা বোলিং নৈপুণ্য ইতিহাসে। এর আগে বাঁহাতি স্পিনার রাজ্জাক জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হোমসিরিজে ৪ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে ছিলেন বাংলাদেশের পক্ষে এক সিরিজে সেরা বোলিং নৈপুণ্য দেখানো বোলার। কিন্তু ৩ ম্যাচেই সমান সংখ্যক উইকেট নিয়ে সবার ওপরে উঠে গেলেন মুস্তাফিজ। বিশ্বের যেকোন বোলারকেই পেছনে ফেললেন নৈপুণ্যে। তিন ম্যাচের সিরিজে অনেকে ১২ উইকেট নিলেও ৩ ম্যাচের সিরিজে এই প্রথম কোন বোলার ১৩ উইকেট নিলেন। অবশ্য অস্ট্রেলিয়ান পেসার রায়ান হ্যারিস ২০১০ সালে ৫ ম্যাচের সিরিজে মাত্র ৩ ম্যাচ খেলে ১৩ উইকেট নিয়েছিলেন। তাই নতুন রেকর্ডের জন্ম দিলেন মুস্তাফিজ।
×