ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দর্শক ফেরাতে নাট্য সংগঠন ও ফোরামগুলোর উদ্যোগ প্রয়োজন : মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন

প্রকাশিত: ০৪:১০, ২৫ জুন ২০১৫

দর্শক ফেরাতে নাট্য সংগঠন ও ফোরামগুলোর উদ্যোগ প্রয়োজন : মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন

মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন তরুণ অভিনেতা, সফল নির্দেশক, লাইট ডিজাইনার এবং প্রকাশক। নাটকের স্ক্রিপ্ট প্রকশনা সংস্থা কিচ্ছা কাহিনীর স্বত্বাধিকারী। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রকাশনা বিভাগের সহকারী পরিচালক। তাঁর নির্দেশনায় আগামীকাল শুক্রবার শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল হলে মঞ্চায়ন হতে যাচ্ছে নাটক ‘সুখ চান্দের মোড়’। নতুন এই প্রযোজনাসহ সমসাময়িক বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়। ঠিক এই সময়ে ‘সুখ চান্দের মোড়’ কেন। মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন : নতুন দল করতে গিয়ে মনে হয়েছে যে এমন একটি স্ক্রিপ্ট নিয়ে কাজ করি যেটা সহজ সরল, অভিনয় শিল্পীরা কাজ করে আনন্দ পায়। দর্শকরাও দেখে মজা পায়। এছাড়া কিচ্ছা কাহিনীর সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে বেশ কিছু স্ক্রিপ্ট বিষয়ে আমার ধারণা ছিল। সেখান থেকে আসাদুজ্জামান দুলালের এই স্ক্রিপ্টটির গল্পটি আমার ভাল লেগেছে। খুব সহজ উপস্থাপনার মাধ্যমে মানুষের মৌলিক বিষয় হাস্যরসের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। আমার দলের যাত্রা শুরু হিসেবে এই স্ক্রিপ্টটি উপযোগী মনে হয়েছে বলে এই নাটকটি হাতে নিয়েছি। নাটকের প্রেক্ষাপট কি? মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন : সহজ সরল এক নাট্য আখ্যান সুখ চান্দের মোড়। শ্রমজীবী মানুষ শত শোষণ বঞ্চনার মাঝেও যে জীবনের হাস্যরস অবগাহন করা যায় তারই চিত্র পাওয়া যাবে নাটকে। নাট্য নির্মাণে অনেকটা অনিবার্যভাবে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নাট্যাঙ্গিক সঙযাত্রা। শরীর অঙ্কন শিল্প এ প্রযোজনায় শ্রীবৃদ্ধি করেছে। বাকিটা বিচারের ভার দর্শকদের। এই নাটকটি আপনার কততম নির্দেশনা? মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন : এটি আমার দশম নির্দেশনা। আমার নিজের দলের প্রথম প্রযোজনা। এর আগে আমি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বিভিন্ন দলে নির্দেশনা দিয়েছি। আপনার নির্দেশনায় সেলিম আল দীনের ‘পুত্র’ নাটকটি বেশ প্রশংসিত হয়েছিল? মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন : হ্যা আমার মনে হয় ‘পুত্র’ নাটকটি একটি মাইল ফলক প্রযোজনা। নাটকটি সেলিম আল দীনের সর্বশেষ সম্পূর্ণ রচনা। ‘পুত্র’ নাটকটি সঙ্গে অন্যান্য নাটকের তুলনায় মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। এর একমাত্র বৈশিষ্ট পুরো নাটকটি করুন রসের। অন্য রসও আছে তবে নাটকের মূল রস করুন রস। নাটকে কৌতুকপূর্ণ বিষয়গুলো বিলাপের সুরে আসে। পক্ষান্তরে ‘সুখ চান্দের মোড়’ নাটকটি পুরোটাই হাস্যরসের ওপর রচিত। এ নাটকে আবার চরম কষ্টগুলোও কৌতুকের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশে মঞ্চনাটকে চলমান দর্শক সঙ্কটের কারণ কি বলে আপনি মনে করেন? মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন : নাট্য প্রযোজনার মান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা বলতে দ্বিধা নেই যে আমাদের নাট্য প্রযোজনার বিষয়বস্তু ও উপস্থাপনাশৈলী অবশ্যই বিশ্বমানের। কিন্ত এর মধ্যে অনেক প্রযোজনাই দর্শক সান্নিধ্য পাওয়া বা দর্শকদের চাহিদা অনুযায়ী নির্মাণ করা হয়না। কোন কোট নাট্যদল শুধুমাত্র নির্মাণের সৃজনি কৌশল ও অভিনবত্ব প্রদর্শনই ব্যতিব্যস্ত। কিন্ত দর্শকের রুচী বা চাহিদা এবং দর্শকের সান্নিধ্য পাওয়ার বিষয়টি নাট্য নির্মাণের ক্ষেত্রে গৌণ হয়ে যায়। কিছু প্রযোজনা আছে যেগুলো আন্তর্জাতিক মান তো দূরের কথা স্থানীয় মানও পায় না। এছাড়া হলে দর্শক আনার জন্য যে ধরনের উদ্যোগ বা কর্মসূচী প্রয়োজনা সেটাই নাই বললেই চলে। দর্শকের জন্য আমাদের ভাবনা, উদ্যোগ শুধু সেমিনারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আমি বলব ৭৪-৭৫ সালে আমাদের নাট্যদর্শকদের আনার জন্য যে প্রচেষ্টা ছিল সাম্প্রতিক সময়ে সেটা নেই। কোন দলকে দেখিনা নিজেদের দর্শক তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে। তারা শুধু বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভর করছে। তারা মনে করছে দর্শকরা এমনিতেই আসবে। কিন্তু নাটকের দর্শক কিন্তু আমজনতা নয়। নাটকের দর্শক সচেতন, শিক্ষিত, রুচিশীল, সংস্কৃতিমনা মানুষ। তাদের কাছে নাটকের খবর পৌঁছাতে হবে। নাটক এমন একটি শিল্প যেটার দর্শক সব সময়ই থাকবে এমনটি মনে করা ঠিক নয়। দর্শকদের হলে ফিরে আনতে নাটকের সংগঠনের পাশাপাশি ফোরামগুলোকে উদ্যোগ নিতে হবে। নাটক নিয়ে পড়ে এসেও অনেকেই অন্য পেশায় চলে যাওয়ার কারণ কি? মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন : এক্ষেত্রে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে। এর অন্যতম কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকেই কোন সাবজেক্ট না পেয়ে অগত্যা নাট্যকলা পড়তে আসেন। এটা একটা সামগ্রিক পলিসির বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়েগুলোতে যারা সংশ্লিষ্ট বিভাগ চালান তাদের এ বিষয়ে পলিসি থাকা উচিত। বিশেষ করে যারা এবিষয়ে পড়াশুনা করে আসছে তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিল্পকলা একাডোমিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে নাট্যকলা শিক্ষার্থীদের সুযোগ দিতে হবে। তাহলেই নাটকের শিক্ষার্থীরা অধ্যায়ন শেষে আর হাড়িয়ে যাবে না। শুধু তাই নয়, আমিও তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। সে কারণে দায়িত্ব নিয়েই বলছি শিক্ষকরা তাদের ক্লাসে শিক্ষার্থীদের দেশের মূলধারার নাট্যচর্চাকারীদের বিষয়ে এক ধরনের বিরোধ তৈরির চেষ্টা করেন। এ কারণে নাট্যজগত নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি হয়। সে কারণেই পাশ করার পর তারা আর এ লাইনে থাকতে চান না।-সাজু আহমেদ
×