ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হোয়াইটওয়াশ- ভারতের সম্মান বাঁচানোর ম্যাচ আজ

বৃত্ত পূরণের প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ০৭:২৭, ২৪ জুন ২০১৫

বৃত্ত পূরণের প্রত্যাশা

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাওয়াশ কী শুধু বাংলাদেশ ক্রিকেটপ্রেমীদের কণ্ঠেই শোনা যাচ্ছে? তা তো ভারত ক্রিকেটারদের কণ্ঠেও আছে। তাই তো আজ সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে খেলতে নামার আগে রবীচন্দ্রন অশ্বিন মঙ্গলবার বলে দিলেন, ‘যেভাবেই হোক বাংলাওয়াশ ঠেকানোর চেষ্টা করব।’ এ বাংলাওয়াশের স্বপ্নেই এখন বিভোর পুরো জাতি, দেশের আপামর জনগণ, ক্রিকেটপ্রেমীরা। বাংলাদেশ ক্রিকেটাররাও কী সেই আশাতেই আছেন না? নাসির হোসেন বলেই দিলেন, ‘ইনশাআল্লাহ, বাংলাওয়াশ হবে।’ আজ শেষ ওয়ানডেতে জিতলেই তা হয়ে যাবে। ভারতকেও ‘বাংলাওয়াশ’ চেনানো যাবে। শুরুতে বাংলাদেশকে পাত্তা দেয়নি ভারত। আর এখন এতটাই পাত্তা দিচ্ছে যে, সব গোলমেলে বেঁধে যাচ্ছে। শুধুই হার হচ্ছে নিয়তি। প্রথম ওয়ানডেতে ৭৯ রানে হারের পর দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও ৬ উইকেটে হেরেছে। আজ যখন তৃতীয় ওয়ানডেতে খেলতে নামবে ভারত, এর আগে যেখানে ভারতের জয় নিয়ে বেশি ভাবনা হওয়ার কথা, মনে হচ্ছে হার শব্দটিই বেশি তাদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। কিভাবে হার এড়ানো যায়, সেই চিন্তাই ধোনি, কোহলিরা করে যাচ্ছেন। যাচ্ছে তাই ঝামেলায় পড়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত। চাপ নিলেও বিপদ, না নিলেও বিপদ। যেভাবেই হোক জিততে হবে। পরপর দুই ওয়ানডেতে হেরে এরই মধ্যে লজ্জায় পড়েছে ভারত ক্রিকেট দল। যদি তৃতীয় ওয়ানডেতেও হেরে যায়, দেশে পৌঁছানোটাই বিপদ হয়ে যাবে ক্রিকেটারদের। সম্মানটাই যাবে। সেই সম্মান রক্ষা করতেই এখন ভারতকে নামতে হবে খেলতে। পারবে ভারত জয় তুলে নিতে? ভারত যতটা ঝামেলায় আছে, ততটাই স্বস্তিতে বাংলাদেশ। ইতিহাসের সেরা প্রাপ্তি যে মিলেছে। ভারতের মতো শক্তিশালী দলকে টানা ২ ম্যাচে হারিয়ে দিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে নিয়েছে। আজ জিতলে তো ভারতকে হোয়াইটওয়াশই করে দেবে। এমন ম্যাচের আগে আবার ক্রিকেটাররা স্বস্তিতে থাকলেও স্বপ্ন ম্যাচ জয়েরই থাকছে। নাসির হোসেনই যেমন বলে দিয়েছেন, ‘ড্রেসিংরুমে তৃতীয় ম্যাচ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বলা হয়েছে, আমরা যদি টানা ২ ম্যাচ হারতাম, এরপর তৃতীয় ম্যাচ জেতার জন্য যেভাবে খেলতাম; সেভাবে যেন খেলি।’ বোঝাই যাচ্ছে, তৃতীয় ওয়ানডে জেতার জন্য বাংলাদেশ কতটা ‘সিরিয়াস’। বাংলাদেশ সিরিয়াস হলেও ভারত দল অস্বস্তিতে কাটাচ্ছে। ক্রিকেটাররা হোটেল রুম থেকে বের হয়ে যে একটু হোটেলেই ঘুরাফেরা করবেন, তাও করতে পারছেন না। ধোনিত সোমবার পুরো দিনই হোটেল রুমে বন্দী থেকেছেন। মাঠ আর হোটেল, হোটেল আর মাঠ; এই হচ্ছে তাদের ঠিকানা। আর মাঝপথে শুধু খেলা হচ্ছে, ভারত হারছে। এমনই অবস্থা হয়েছে, বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে অনেক বেশি কষ্ট দিচ্ছে। যাকে বলা হয়ে থাকে, ‘ক্যাপ্টেন কুল’। সেই ‘কুল’ এখন ‘হট’ হয়ে গেছেন। তার নেতৃত্ব নিয়েও কথা উঠছে! বিশ্বকাপজয়ী ভারত অধিনায়ককে নিয়ে চলছে সমালোচনাও। এমনই অবস্থা হয়েছে, ‘কুল’ থাকতে ধোনিকে যোগ ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়েছেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক বিষেন সিং বেদী। বলেন, ‘এবার ধোনি মেজাজ হারাল। এ থেকে পরিষ্কার ও আর ক্যাপ্টেন কুল নয়।’ ভারতের কিংবদন্তি স্পিনারের মতে, ‘এটা ধোনির বৈশিষ্ট্য নয়। নতুন এক তরুণ খেলোয়াড়কে ওর ওভাবে ধাক্কা দেয়া মোটেও উচিত হয়নি। ওর মন ও শরীরে বিশ্রাম দরকার। আমার মনে হয় যোগ ব্যায়াম করলে ধোনির উপকার হবে।’ বেদী বুঝছেন, হার কোনভাবেই সহ্য করতে পারছেন না ধোনি। কিন্তু সেটি যে হয়েই চলেছে। আর তা এমনিতেই হচ্ছে না। নৈপুণ্য দেখিয়েই, যোগ্যতা দেখিয়েই জিতছে বাংলাদেশ। ভারতের সাবেক সফল অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীই বলেছেন, ‘বাংলাদেশ অবিশ্বাস্য পারফর্ম করেছে। ওরা আমাকে একেবারে চমকে দিয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের পেস বোলাররা। বাংলাদেশ থেকে ভারত অনেক ভাল দল। তাদের দুই ম্যাচে ২২৮ ও ২০০ রানে শেষ করে দেয়া কিন্তু সোজা কথা নয়।’ সঙ্গে যাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা, সেই বামহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে সৌরভ জানান, ‘মুস্তাফিজ তো অসাধারণ বোলিং করেছে। একটা ছেলে ২০ ওভার বল করে ১১ উইকেট নিচ্ছে-ভাবাই যায় না!’ মুস্তাফিজ শুধু ১১ উইকেটই নেননি, ভারতকে কাঁপিয়ে দিয়েছেন। সিনিয়র ক্রিকেটাররা বাংলাদেশ সফরে আসতেই চাচ্ছিলেন না। অথচ এসে এমন হারই হচ্ছে, লজ্জায় মুখ লুকাতে হচ্ছে। তৃতীয় ওয়ানডেতেও যে মুস্তাফিজ ত্রাস দেখা যাবে না, তা কে বলতে পারে। তবে মুস্তাফিজ যাকে আদর্শ মানেন। যাকে অনুসরণ করেন। সেই মোহাম্মদ আমির কিন্তু ত্রাস তৈরি করবে মুস্তাফিজ, এমনই ভাবছেন, ‘মুস্তাফিজের বোলিং আমি দেখেছি। দারুণ এক বোলার। আমাকে সে আদর্শ মানে শুনে অনেক ভাল লাগছে। তার বোলিং দেখে মনে হচ্ছে, দারুণ ক্যারিয়ার অপেক্ষা করছে তার সামনে। সে সাধারণ কোন বোলার নয়। তার বোলিংয়ে সব ধরনের অস্ত্র আছে। এছাড়া তার ক্রিকেটীয় জ্ঞানটাও দারুণ।’ সাবেক অধিনায়ক সুনীল গাভাস্কার তো বলে দিয়েছেন, ‘এটা বাংলাদেশ দলের ক্ষণিকের দ্যুতি নয়। বাচ্চা এখন বড় হয়েছে। ভারতের সঙ্গে এখন তাদের কাঁধে কাঁধ। আর দুই ম্যাচে হার-জিতের ব্যবধানটা দেখেন। দুই ম্যাচে বাংলাদেশ শুধুই কি জিতল, ভারতকে নাস্তানাবুদ করলও।’ তা কিভাবে হলো? সবার মুখে একটি নামই, মাশরাফি বিন মর্তুজা। বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে সব বদলে দিয়েছেন। দলের ক্রিকেটারদের সব সময়ই অনুপ্রাণিত করে রাখেন এবং জেতার যে মানসিকতা তা তৈরি করে রাখেন। মাশরাফি বলেন, ‘ক্রিকেটে মোমেন্টাম খুব গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, ছেলেরা এটা ধরে রাখবে। আমি চাই ওরা এমন ক্রিকেট খেলা অব্যাহত রাখুক। সিরিজ শুরুর আগে কেউ বলেনি, আমরা সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে যাব। এমনকি ভারতীয় দল থেকেও বলেছে আমাদের হারানোর কিছু নেই। তাই আসলেই আমাদের হারানোর কিছু নেই। পরবর্তী ম্যাচে যাব, খেলব এবং উপভোগ করব।’ এই উপভোগ করতে করতেই যদি আজও জিতে যায় বাংলাদেশ, তাহলেই বাংলাওয়াশ হবে ভারত। সেই স্বপ্নে বিভোর পুরো জাতি।
×