ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ময়মনসিংহ ও কুষ্টিয়া

বিদ্যুতের পর্যাপ্ত সরবরাহ সত্ত্বেও লোডশেডিং

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২৪ জুন ২০১৫

বিদ্যুতের পর্যাপ্ত সরবরাহ সত্ত্বেও লোডশেডিং

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ মাহে রমজানে ঘন ঘন বিদ্যুত বিভ্রাটের ফলে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ময়মনসিংহবাসী। মিনিটে মিনিটে বিদ্যুতের আসা যাওয়ার খেলা ছাড়াও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুতহীন থাকার ঘটনা ঘটছে ময়মনসিংহের শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত। গ্রীড থেকে পর্যাপ্ত বিদ্যুত সরবরাহ (লোড) থাকার পরও কেন বিদ্যুতের এমন ভেল্কিবাজি-এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় ভুক্তভোগী গ্রাহক। তবে বিদ্যুত বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তারা সবসময় বলে আসছেন এই সমস্যা সাময়িক। অথচ সমস্যার কার্যকর ও স্থায়ী সমাধান মিলছে না। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন ময়মনসিংহের বিদ্যুত গ্রাহক। বিদ্যুত বিভাগের স্থানীয় সূত্র জানায়, জেলার দুইটি ডিভিশনে পিকআওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১২০ মেঃওঃ। ময়মনসিংহ ডিভিশন-২-এ চাহিদা হচ্ছে ৬৪ মেঃওঃ। এর মধ্যে শহরে এই ডিভিশনের অধীন চাহিদা রয়েছে ৩০ মেঃওঃ। এই চাহিদার পুরোটাই সরবরাহ দেয়া হচ্ছে গ্রীড থেকে। একই অবস্থা ময়মনসিংহ ডিভিশন-১ এ। রমজান শুরুর পর থেকে চাহিদার বিপরীতে সরবরাহের কোন ঘাটতি ছিল না। গ্রীড সূত্র জানায়, বতর্মানে পর্যাপ্ত লোড রয়েছে। চাহিদার পুরো বিদ্যুত সরবরাহ দেয়া হচ্ছে বলে জানান গ্রীড কর্মকর্তারা। অথচ বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে নাজুক অবস্থা ময়মনসিংহ ডিভিশন-১ এর। এই ডিভিশনের অধীন শহরের একাংশ ছাড়াও রয়েছে শহরতলীর শম্ভুগঞ্জ, ফুলবাড়িয়া, তারাকান্দা, ফুলপুর, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ ও নান্দাইল উপজেলাসমূহ। অভিযোগ এই ডিভিশনের আওতায় খোদ শহর এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুতহীন থাকছে বেশ কয়েকটি ফিডারের গ্রাহক। এর সঙ্গে বিদ্যুতের আসা যাওয়ার লুকোচুরি খেলা তো আছেই। শহরের আকুয়া ও আউটার স্টেডিয়াম এলাকাসহ গোপালপুর, তারাকান্দা ও হালুয়াঘাটে ইফতার ও তারাবি নামাজের সময়েও ঘটছে বিদ্যুত বিভ্রাট ও লোডশেডিংয়ের ঘটনা। গ্রাহকদের অভিযোগ বিষয়টি জানাতে ময়মনসিংহ ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে মোবাইলে ফোন করে পাওয়া যায়নি। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা প্রশ্ন তুলে বলছেন, বিদ্যুত সরবরাহের কোন ঘাটতি না থাকার পরও কেন এই ভোগান্তি? নাম প্রকাশ করা হবে না শর্তে বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, জরাজীর্ণ তার ও ট্রান্সফরমারের ওভারলোড সমস্যাসহ ত্রুটিপূর্ণ বিতরণ ব্যবস্থাই এর জন্য দায়ী। বিষয়টি স্বীকার করে ময়মনসিংহ ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন জনকণ্ঠকে জানান, তার ডিভিশনের চাহিদা ৫০ মেঃওঃ। পুরো সরবরাহ পাওয়ার পরও দুর্বল সিস্টেম ও ওভারলোডেড লাইনের কারণে এই বিদ্যুত সরবরাহ দেয়া যাচ্ছে না। ফলে লোডশেডিং ও বিভ্রাটের মতো ঘটনা ঘটছে। নিজস্ব সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া থেকে জানান, চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুতের সরবরাহ না থাকায় কুষ্টিয়ার গ্রামাঞ্চলে মানুষজন চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। অবস্থা এমন যে দিনে ও রাতে ক’বার বিদ্যুত আসে আর যায় তার হিসাব রাখাই হয়ে পড়েছে কঠিন। আকাশে সামান্য মেঘ দেখা দিলেই বিদ্যুত চলে যায়। থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ফলে পবিত্র রমজান মাসে প্রচ- গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঘন ঘন লোডশেডিং গ্রামীণ জনজীবনকে করে তুলেছে বিপর্যস্ত। অসহনীয় এই বিদ্যুত বিপর্যয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে রোগী ও শিক্ষার্থীরা। ঘন ঘন বিদ্যুত চলে যাওয়ায় রাতে মানুষজনের ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটছে চরম। খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, জেলা শহর ছাড়া কুষ্টিয়া পল্লীবিদ্যুত সমিতির আওতায় দৌলতপুর, মিরপুর, কুমারখালী, খোকসা, ভেড়ামারা ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলার গ্রামাঞ্চলে মোট বিদ্যুত গ্রাহক রয়েছে ১ লাখ, ৮৮ হাজার, ৭৭৭ জন। এসব এলাকায় পিক আওয়ারে দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে ৬৬ থেকে ৬৭ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে গড়ে ৪৩ থেকে ৫৫ মেগাওয়াট। প্রতিদিনই থাকছে বিদ্যুতের ঘাটতি। গত ২০ জুন এখানে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৬৫ মেগাওয়াট। পাওয়া গেছে ৪৩ মেগাওয়াট। ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের এই ঘাটতি লোডশেডিং করে কভার করতে হয়েছে। এর জন্য সন্ধ্যা ৭টার পর থেকেই শুরু হয় পর্যায়ক্রমে লোডশেডিং। পল্লী বিদ্যুত সমিতির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, গত ২০ জুন কুষ্টিয়া স্বস্তিপুর সাব স্টেশন এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১০ মেগাওয়াট। রাত ৯টায় সেখানে পাওয়া যায় সাড়ে ৮ মেগাওয়াট।
×