ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

তাহের ও ননী আমার বাবা ও চাচাকে গুলিতে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২৩ জুন ২০১৫

তাহের ও ননী আমার বাবা ও চাচাকে গুলিতে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নেত্রকোনার রাজাকার কমান্ডার মোঃ ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের নবম সাক্ষী মঞ্জু মিয়া তালুকদার জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে আংশিক জেরা করেন। আজ মঙ্গলবার আবার তাকে জেরা করার জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। অন্যদিকে সোমবার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নতুন রেজিস্ট্রার শহীদুল আলম ঝিনুক। আসামি তাহের ও ননীর বিরুদ্ধে নবম সাক্ষী জবানবন্দীতে বলেন, রাজাকাররা আমার বাবা, তিন চাচা, ভগ্নিপতি ও চাচাত ভাইসহ আরও কয়েকজনকে আটক করে। এরপর তাহের ও ননী আমার বাবা রুজ আলী ও চাচা জাফর আলীকে গুলি করে হত্যা করে। আমার বাবাকে আটকের সময় আমার চাচী নুরুন্নাহার বাধা দিতে গেলে আসামি আতাউর রহমান ননী ও ওবায়দুল হক তাহের তার কান থেকে দুল টান দিয়ে খুলে নিলে রক্ত বের হয়। রাতের বেলা আমরা আমার বাবা ও চাচার লাশ দাফন করি। পরে আমার চাচা আলম ও সাদেক ফিরে এলে অন্যান্য আটককৃতদের অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানান যে, তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধান দেব মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফিরে এসেছে। সাক্ষীর জবানবন্দীতে সহায়তা করেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে আরও বলেন, আসামিরা আটককৃতদের ওপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন করেছে। পরে আমরা খবর পাই যে, আসমা গ্রামের চানফর আলী আহত অবস্থায় ফিরে গুমুরিয়ায় জৈনদ্দিনের বাড়িতে আছে। আমরা তার কাছে গেলে সে আমাদের বলে যে, আসামি ওবায়দুল হক তাহের ও আসামি আতাউর রহমান ননী ঠাকুরকোনা ব্রিজের নিচে আটককৃত অন্যদের গুলি করে মেরে ফেলেছে। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সন্ধান করি। কিন্তু কোন লাশ সেখানে পাইনি। আমার চাচী নুরুন্নাহার স্বামী হত্যার খবর শুনে পাগল হয়ে যায়। পরে আমার ওই চাচীর বারহাট্টা রেলস্টেশনে কাছে ট্রেনের নিচে পড়ে আত্মহত্যা করে। রাজাকার ও পাকিস্তানীরা পাশ্চিমপাড়ায় দিয়ে নবী নেওয়াজের ১৬টি ঘর, কালা চান, আকরাম আলী, কাজ আলীসহ অন্যদের বাড়িঘর লুটপাট করে অগ্নিসংযোগ করে। আমি আসামি ওবায়দুল হক তাহেরকে ১৯৭০ সালে যখন তার পিতা মঞ্জুরুল হক সাহেবের সাথে নির্বাচনের কাজে আমাদের এলাকায় এনেছিলেন তখন থেকেই চিনি। আসামি আতাউর রহমান ননী বারহাট্টা, চন্দ্রপুর হুজরাবাড়ি, বউশিতে ফুটবল খেলতে এসেছিলেন বিধায় তাকে চিনতাম। সাক্ষী বলেন, আমার নাম মঞ্জু মিয়া তালুকদার, আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬৬ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম- লাউফা, থানা- বারহাট্টা, জেলা- নেত্রকোনা। আমি বর্তমানে কৃষিকাজ করি। ১৯৭১ সালে মক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ২২-২৩ বছর। তখনও আমি কৃষিকাজ করতাম। রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব গ্রহণ ॥ দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নতুন রেজিস্ট্রার শহীদুল আলম ঝিনুক। সোমবার তিনি বিদায়ী রেজিস্ট্রার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন। ঢাকার-৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শহীদুল আলম ঝিনুককে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেয় আইন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এস মোহাম্মাদ আলী স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সুপ্রীমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতির আদেশে তাকে এ পদে নিয়োগ দেয়া হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (মতামত) মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে গত বছরের ২৪ আগস্ট থেকে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার পদে ছিলেন। নতুন রেজিস্ট্রার দায়িত্ব নেয়ায় তিনি তার মূল পদে ফিরে গেছেন।
×