ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যাত্রা হোক শুভ

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ২১ জুন ২০১৫

যাত্রা হোক শুভ

পারস্পরিক ভাবের আদান-প্রদান, পরস্পরকে চেনাজানার পাশাপাশি অর্থনৈতিক অগ্রগতি, প্রবৃদ্ধি, সমৃদ্ধি ও সংস্কৃতির দিগন্ত প্রসারিত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের জনগণ পারস্পরিক সম্পর্ক, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বিস্তার ঘটাবে। দীর্ঘকাল ধরে এক ধরনের প্রায় বিচ্ছিন্ন প্রতিবেশী দেশগুলো অর্থনৈতিক অগ্রগতি, প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি ও জনগণের মধ্যে সংযোগ সাধনের লক্ষ্যে সড়ক সংযোগ চুক্তি সম্পাদন করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সহজ যাতায়াতের স্বাদ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া তথা সার্কভুক্ত নিকট প্রতিবেশী চারটি দেশ পেতে যাচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তাঁর শাসনের শেষ দিকে উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরায় চালুর ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এক সময় এই দেশগুলোর মধ্যে যাতায়াত ছিল অবাধ এবং জটিলতামুক্ত। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল দুর্গম ও বন্ধুর। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হতে থাকলেও দেশগুলো স্বাধীন হওয়ার পর সেই সংযোগ সীমিত হয়ে যায়। এবার চারটি দেশ নতুন করে গড়ে তুললো সড়ক যোগাযোগ। বিমানপথই এই দেশগুলোর যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম অনেকদিন ধরে। অবশ্য বাংলাদেশ-ভারত দীর্ঘ পাঁচ দশক পর সড়ক ও রেল যোগাযোগ পুনর্¯’াপন করেছে। স্থলবন্দরগুলোও সচল হয়ে উঠেছে। এখন চারটি দেশ মিলে অসম্ভবকে সম্ভব এবং অকল্পনীয়কে বাস্তবে রূপদানের মাধ্যমে সমৃদ্ধশালী ও সম্পদশালী করে তুলবে। কানেক্টিভিটির আলোকে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সম্প্রসারিত করাটা যে জরুরী তা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকার দীর্ঘদিন পরে হলেও উপলব্ধি করতে পেরেছে তা প্রশংসনীয়। প্রতিবেশীর মধ্যে সুসম্পর্ক না থাকলে অবাধ বাণিজ্যের এই চরম প্রতিযোগিতাপূর্ণ যুগে এগিয়ে যাওয়া দুরূহ। এ ক্ষেত্রে জোটবদ্ধতার বিকল্প নেই। তাই দরকার এসব দেশের মানবসম্পদকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগিয়ে উন্নত দেশগুলোর সমপর্যায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা। এসব ক্ষেত্রে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন সহজতর করে তুলবে এই যোগাযোগ। এই প্রথম সড়কপথে সরাসরি নিজস্ব যানবাহন নিয়ে অন্যদেশে যাওয়া যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে ভিসা পদ্ধতি। এ বিষয়গুলোরও দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। পণ্যবাহী ট্রাক ও লরি চার দেশের পণ্য অনায়াসে ও দ্রুত পরিবহন করতে পারবে। কাঁচা পণ্য বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। এই সড়ক সংযোগ চালু হলে বছরে বাংলাদেশ আয় করবে প্রায় বিশ হাজার কোটি টাকা। আদায় হবে ১৫ ধরনের মাসুল। আগামী অক্টোবরে পরীক্ষামূলক চালুর পর ২০১৬ হতে নিয়মিত সড়ক যোগাযোগ শুরু হবে। অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ উন্নয়নের জন্য এই সংযোগ বাংলাদেশকে যেমন সমৃদ্ধ করবে তেমনি অন্য দেশগুলোকেও। এই যোগাযোগের সম্পূরক হিসেবে গড়ে উঠবে শিল্পায়ন, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান। বাণিজ্য যোগাযোগ সুদৃঢ় হলেই গতিশীল অর্থনৈতিক অবস্থান তৈরি করতে পারবে দেশগুলো। চার দেশের মধ্যে গড়ে উঠবে বিনিয়োগের সহজ ব্যবস্থা। তেমনি অন্যান্য ক্ষেত্রও সম্প্রসারিত হবে। এতে মিয়ানমার ও চীনকে সংযুক্ত করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তা হলে অর্থনৈতিক খাতে বিশাল অগ্রগতি ঘটবে। চার দেশের মধ্যে সড়ক সংযোগ শুভ হোক। শুভ হোক নতুন এই যাত্রাপথ।
×