ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংসদে বাজেট আলোচনা

সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমালে লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে ॥ মতিয়া

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২১ জুন ২০১৫

সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমালে লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে ॥ মতিয়া

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের আমলে সবদিক থেকে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন দেখে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া আবোলতাবোল বকছেন। আন্দোলনের নামে উনি (খালেদা জিয়া) সন্ত্রাস-নাশকতা ও ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে ‘পেয়ারে পাকিস্তানে’র মতোই বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দেশের জনগণ বিএনপি নেত্রীর জ্বালাও-পোড়াও ও পুড়িয়ে মানুষ হত্যার ঘৃণ্য রাজনীতির বিরুদ্ধে উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন। তিনি সঞ্চয়পত্রের ওপর থেকে সুদের হার কমানোর সমালোচনা করেন। শনিবার জাতীয় সংসদে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্যানেল সদস্য এ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর সভাপতিত্বে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনাকালে তিনি এসব কথা বলেন। মতিয়া চৌধুরী ছাড়াও বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নেন সরকারী দলের লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান, প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মাহবুব আলী, টিপু সুলতান, ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পি, এ কে এম ফজলুল হক, হাবিব-ই-মিল্লাত, মীর মোশতাক আহমেদ রবি, জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম মিলন ও মামুনুর রশিদ। আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাজেট নিয়ে সমালোচকদের কড়া সমালোচনা করে বলেন, বিশাল বাজেট বলে যারা সমালোচনা করে, তারা আসলে মতলবি কথা বলে। প্রত্যেকবারই বাজেট নিয়ে সমালোচনা করা হয়, কিন্তু আমরা প্রতিবার ৯৮-৯৯ ভাগ বাজেট বাস্তবায়ন করে তাদের সমালোচনার জবাব দিয়েছি। আসলে যারা বাজেটের সমালোচনায় মুখর, তারা আদৌ ট্যাক্স দিতে চায় না কি না সেটাই সন্দেহ। তিনি বলেন, বাজেট ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খবর প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে। শুধু অর্থনৈতিক সূচক নয়, সামাজিক দশটি সূচকেও বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে। এই তথ্য থেকেই বোঝা যায় বড় বাজেটের ফলই এই অর্থনীতির উন্নয়ন। আসলে বড় স্বপ্ন না থাকলে বড় হওয়া যায় না। সব সময় নিজেকে দীনহীন ভাবলে ক্ষতি হতে পারে। সঞ্চয়পত্রের ওপর সুদের হার কমানোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, এর ফলে লাখ লাখ সাধারণ মানুষ বিশেষ করে প্রবীণরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। মধ্যবিত্তদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি না করলে দেশের জিডিপি বাড়বে না। ভোগের সঙ্গে সম্পর্কিত হলো অর্থনৈতিক বাজার। বাজেটে বাজার বা ক্রয় ক্ষমতার নীতি কিছুটা দুর্বলভাবে আলোচিত হয়েছে। তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রের ওপর সুদের হার কামানো হয়েছে। ব্যাংক আমানতের ওপরও সুদের হার কম। এতে মধ্যবিত্তের চিন্তামুক্ত আয়ের পথ কমে যাচ্ছে। এতে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত শ্রেণীর লাখ লাখ পরিবার। এদের আয় হ্রাস করে বাজার অর্থনীতি কিভাবে হবে আমি বুঝতে অক্ষম। কারণ এরাই ক্রেতা। এদের কাছে টাকা না থাকলে ভোগ বাড়বে কিভাবে? তিনি বিষয়টি ভালভাবে ভেবে দেখার জন্য অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি। বিএনপি-জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সর্বজনবিদিত। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে তছনছ ও বাধাগ্রস্ত করতে হেন কোন ষড়যন্ত্র নেই যে তারা করেনি। আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত তাদের ‘পেয়ারে পাকিস্তানে’র মতো বাংলাদেশকেও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের জ্বালাও-পোড়াওয়ের জবাব জনগণ দিয়েছে। বেগম জিয়ার নির্দেশে জামায়াতে ইসলামী শবেবরাতের সময় মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে ইসলাম কায়েম করতে চায়। বিএনপি-জামায়াতের সীমাহীন তা-ব, সন্ত্রাস ও শত বাধাবিপত্তির পরও দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী রয়েছে, এতো বাধা সত্ত্বেও প্রবৃদ্ধি ৬ ভাগের ওপরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। কৃষিমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়কোচিত পদক্ষেপ, প্রজ্ঞা ও দুরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বে ৬১ বছর পর ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে, দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। চার দেশের মধ্যে ট্রানজিট চুক্তি হচ্ছে শীঘ্রই, যা দিয়ে আমরা অনেক লাভবান হব। শেখ হাসিনার অভূতপূর্ব সাফল্যে দেখে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া আবোলতাবোল বকছেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার নিজস্ব সক্ষমতা অর্জন করছে, এ কারণে বিশ্বব্যাংকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। এটি নির্মিত হলে প্রবৃদ্ধি একভাগ বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, বিএনপি কৃষকদের ভর্তুকির বিরুদ্ধে ছিল। কিন্তু আমরা ভর্তুকি দিয়েছি বলেই কৃষক দু’হাত উজাড় করে অকৃপণভাবে ফসলে ফসলে ভরে দিয়েছে গোটা দেশকে। সামাজিক, অর্থনীতিসহ সবদিক থেকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, বিএনপি-জামায়াত তাতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করছে। আমরা সকল বাধা অতিক্রম করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলবই। লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান বলেন, দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে হেন কোন ষড়যন্ত্র নেই তা করেনি বিএনপি-জামায়াত জোট। তিন মাস ধরে কথিত হরতাল-অবরোধের নামে নির্বিচারে মানুষকে হত্যা করে, ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের জনগণ তাদের সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছে। দেশ সবদিক থেকে আজ এগিয়ে যাচ্ছে। শিশু ও মহিলাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় পুরো বাংলাদেশকে সন্ত্রাস-জঙ্গীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করা হয়েছিল। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বিষয়টি আজ বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোও অকপটে স্বীকার করছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমাদের নারীরা শুধু এভারেস্ট বিজয় করছে না, দেশ-বিদেশে নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিচ্ছে। আবু সাঈদ আল মাহমুদ বলেন, শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন বলেই দেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, মানুষ তিন বেলা পেট ভরে খাত খাচ্ছে, দেশে বিদ্যুত সমস্যার সমাধান হয়েছে, জাতীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সরকারী দলের টিপু সুলতান বলেন, কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীকের ফাঁসি দিলেই চলবে না, দেশকে সন্ত্রাস-জঙ্গীমুক্ত করতে সন্ত্রাসী সংগঠন জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে হবে। কঠোরহস্তে এদের সন্ত্রাসী কর্মকা- দমন করতে হবে। ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পি বলেন, খালেদা জিয়ার অগ্নিসন্ত্রাস, নাশকতা, সন্ত্রাস ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা- মোকাবেলা করে বাংলাদেশ স্বল্প সময়ে এতো উন্নয়নে গোটা বিশ্ব বিস্ময় প্রকাশ করেছে। খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ ভারত হয়ে যাবে, মসজিদে উলুধ্বনি শোনা যাবে। আর উনি বলছেন, আমরা ভারতবিরোধী নই, হিন্দুদের নির্যাতন করিনি। আসলে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাত করে মুখে চুনকালি মেখে এসেছেন খালেদা জিয়া। জিয়া পরিবার খুনী ও পাপিষ্ঠ পরিবার।
×