ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৯ জুন ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

বছর ঘুরে আবারও এসেছে মাহে রমজান। আজ শুক্রবার শুরু হয়েছে সিয়াম সাধনার পবিত্র মাস। আরবী এই মাসের পুরোটা সময় রোজা রেখে কাটাবেন মুমিন মুসলমানরা। সাধারণ দিনগুলোতে প্রচুর খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপার থাকে। রমজানে তা হয় না। দিনের বেলায় সবরকম পানাহার থেকে বিরত থাকেন রোজাদাররা। সঙ্গত কারণেই এ সময় বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকার রুজনামচা বদলে যায়। এখন তাই নতুন অফিস সময়। দেরি করে শুরু। আগে আগে শেষ। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছুটিতে, কিছু চালু করেছে নতুন রুটিন। তবে রোজার বদলে যাওয়া সময়টা বিশেষভাবে দৃশ্যমান হয় ইফতার ও সেহ্রির সময়। বৃহস্পতিবার ফার্মগেট থেকে গ্রিন রোড হয়ে নিউমার্কেট পর্যন্ত যেতে যেতে দেখা গেল এমন বেশকিছু দৃশ্য। ছোট বড় প্রায় সব রেস্তরাঁর সামনে নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ। বড় বড় ব্যানারে লেখা হয়েছেÑ ইফতার বাজার। আজ প্রথম রোজার দিন থেকেই এসব রেস্তরাঁয় বিক্রি হবে ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, হালিম, জিলাপীসহ বিভিন্ন প্রকার শরবত। ইফতার আয়োজনের বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে নামী দামী হোটেলগুলোও। রমজান শুরুর আগেই কোন কোন হোটেল রেস্তরাঁর পক্ষ থেকে নিজেদের আয়োজন সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়েছে। রমজান উপলক্ষে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের ক্যাফে বাজারে সোমবার ইফতার মেলার আয়োজন করা হয়। আরবের ঐতিহ্যবাহী খাবার, লাইভ কুকিং স্টেশন, শরবত ও পানীয় দিয়ে সাজানো হয় ব্যুফে। ছিল অত্যন্ত সুস্বাধু জিলাপী ও হালিম। এখান থেকে ইফতার গ্রহণে জনপ্রতি খরচ হবে ২,৫০০ টাকা। এখান থেকে বাসার জন্য কিনে নেয়া যাবে ইফতার বক্স। দাম ১,৮০০ টাকা (ডিলাক্স) এবং ২,১০০ টাকা (প্রিমিয়ার)। প্রতিকেজি জিলাপীর দাম ১,২০০ টাকা। অর্ধকেজি কিনলে দাম একটু বেশি পড়বে। সেক্ষেত্রে দাম ৭০০ টাকা। হালিম পাওয়া যাবে দুই রকমের। এক প্রকারের দাম ১,১০০ টাকা। অপরটির দাম রাখা হবে ২,০০০ টাকা করে। হোটেলের সহকারী পরিচালক (মার্কেটিং ও জনসংযোগ) সালমান কবির জানান, ইফতারের সব আইটেম বিশেষ যতেœর সঙ্গে তৈরি করা হচ্ছে। শুধু রোজাদাররা নয়, বিদেশী পর্যটকদেরও এসব খাবার আকৃষ্ট করবে। প্রতিদিন হোটেলের ক্যাফে বাজারে ব্যুফেতে ইফতার পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি। বর্ষার শুরু হলো। আনুষ্ঠানিক শুরু। সোমবার বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রিয় ঋতুকে বরণ করে নেয় রাজধানীবাসী। এ উপলক্ষে ছিল নানা উৎসব অনুষ্ঠান। আষাঢ়ের প্রথম দিবসে সরব হয়ে উঠেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। বকুলতলায় বর্ষাবরণ উৎসবের আয়োজন করেছিল সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। প্রায় একই রকম আয়োজন ছিল বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে। উভয় মঞ্চ থেকে গান নাচ কবিতা কথনে স্বাগত জানানো হয় বর্ষাকে। খুব সকাল বেলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ পঞ্চকবির গানে বর্ষাবন্দনা করেন শিল্পীরা। ছিল জনপ্রিয় লোকগানের পরিবেশনা। বর্ষায় ময়ূর যেমন নাচে, তেমনি নেচেছেন নবীন-প্রবীণ শিল্পীরা। প্রিয় কবিতা থেকেও বর্ণনা করা হয়েছে বর্ষাকে। জনপ্রিয় আবৃত্তিশিল্পীদের পরিবেশনা মন ছুঁয়ে গেছে। সব মিলিয়ে বেশ ছিল বর্ষাবরণের আনুষ্ঠানিকতা। অবশ্য বর্ষার প্রথম দিন বলে কথা! আকাশ যেন ভেঙ্গে পড়েছিল; সে কী বৃষ্টি! সকাল থেকে শুরু। সারাদিন অব্যাহত ছিল। ফলে কিছুটা ব্যাহত হয়েছে বর্ষাবরণ উৎসব। বৃষ্টিতে ভিজে একাকার উদীচীর কর্মী কঙ্কন নাগ বললেন, আমাদের উৎসবের অনেকটাই জলে ভেসে গেছে। তবু মন্দ লাগেনি। বর্ষা উৎসবে বৃষ্টিই তো বেশি প্রাসঙ্গিক! বৃষ্টি ও রোজার মধ্যেই ঢাকায় শুরু হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেট সিরিজ। একমাত্র টেস্টটি যথারীতি বৃষ্টির জলে ধুয়ে গেছে। বাংলাদেশও ভাল খেলেনি। তবে ওয়ান ডে নিয়ে টানটান উত্তেজনা ছিল। বৃহস্পতিবার সিরিজের প্রথম ওয়ান ডে ম্যাচ মিরপুরে অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বকাপের ম্যাচে আম্পায়ারদের পক্ষপাত এবং আইসিসির সভাপতি পদ থেকে বাংলাদেশের প্রতিনিধির পদত্যাগের ঘটনায় দুই দেশেই চলছিল তোলপাড়। সে উত্তাপ নিয়েই মাঠে গড়ায় প্রথম ওয়ান ডে। বাংলাদেশ দারুণ শুরু করে। খেলা যখন খুব উপভোগ্য হয়ে উঠে, ঠিক তখনই নামে বৃষ্টি। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই বর্ষণ ঝড়-তুফান আষাঢ়ের পুরোটা জুড়েই থাকবে।
×