ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাহে রমজানে ওরা মহাব্যস্ত ধর্মীয় বিধানে !

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৯ জুন ২০১৫

মাহে রমজানে  ওরা মহাব্যস্ত ধর্মীয়  বিধানে !

সমুদ্র হক ॥ রমজান মাস শুরুর আগের দিনই বগুড়ায় ইফতার মাহফিল, দান খয়রাত ও ঈদের আমেজ পরিলক্ষিত হলো। মানুষের ভিড়ে ঠাসা শহর যানজটে নাকাল মানুষ। শহরের প্রতিটি মোড়ে রিক্সা অটোরিক্সা গাড়ি নিয়ে যাতায়াত এতটাই কঠিন যে গন্তব্যে হেঁটে গিয়ে পৌঁছারও অনেক পরে যানবাহনের যাত্রী পৌঁছে। মুষল ধারায় বৃষ্টি হলে যানবাহন চলাচলে ডেড লক। এর মধ্যেই মানুষের ব্যস্ততা আগের দিনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। মাহে রমজান বলে কথা। এদিকে সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীরা কোমর বেঁধে নেমেছেন। নিত্যপণ্যের দাম তো বাড়িয়ে দিয়েছেই। রমজান মাসের অতি প্রয়োজনীয় পণ্য এদিক-সেদিক করে বাড়তি আদায়ের কৌশলও শুরু হয়েছে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ইফতার পার্টির জন্য এতটাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে আগেভাগে কাজটি সারলে একটা বোঝা নেমে যায় (ওদের কাছে ইফতার পার্টিও বোঝা)। উচ্চবিত্তরা এখনই যাকাতের কাপড় কেনার জন্য মার্কেটে ছুটছেন। এক শ্রেণীর কাপড়ের দোকানি সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে ‘যাকাতের কাপড় সস্তা দামে পাওয়া যায় (অর্থাৎ গরিব মানুষকে কম দামের কাপড় প্রদানের কি বাণিজ্যিক কৌশল)।’ একজন দোকানি জানালেন, বড় লোকদের অনেকে কম অর্থে অধিক পরিমাণ কাপড়ের চাহিদা দেন। বেশি কাপড় যাকাত দিলে এলাকায় সুনাম বাড়বে এমনটি আশা করেন তারা। তবে হালে গ্রামের লোকও কাপড়ের গুণগত মান বুঝতে পারে। ওই দোকানের সামনেই একজন স্বগোতোক্তি করলেন ‘হায়রে মানুষ ধর্মের বিধান নিয়েও কী কৌশল! পাপ-পুণ্যের বিচার করবেন ওপরওয়ালা, এইসব মানুষ যারা দরিদ্রকে ঠকিয়ে যাকাত দিচ্ছে তাদের বিচারও নিশ্চয়ই হবে।’ পবিত্র এই মাসে ধর্মীয় বিধান মানার জন্য মানুষ ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ঈদ পারি দিলেই ফের পূর্বাবস্থা। এর মধ্যে লোক দেখানো বিধান মানার ব্যক্তিও আছেন অনেক। বছরের বাকি মাস দুর্নীতি করে, লোক ঠকিয়ে ব্যবসা করে, হিপোক্রাসি করে সাধু সেজে রমজান মাসে নিজেদের কথিত সততার মুখোশ মেলে ধরেন। সারাবছর শার্ট প্যান্ট পরে ইংরেজি কায়দায় স্যুটেড বুটেড হয়ে তাপানুকূল গাড়িতে চরে অফিসে ও ঘরে বসে পার্সেন্টেজ আর নয়ছয়ের কারবার করে রমজান মাসে ধর্মীয় পোশাক পরে (পাজামা পাঞ্জাবি মাথায় টুপি) নিজেদের পুণ্যবানের (!) জানান দেন। এই বিষয়ে আরবী ও ইসলামের ইতিহাসের একজন অধ্যাপক বলেন, যারা সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে এ ধরনের কাজ করে নিজেদের সাধু সাজাবার চেষ্টা করেন প্রকারান্তরে তারা ধর্মকে অবজ্ঞা করে। ইসলাম সুন্দর জীবন যাপনের বিজ্ঞানময় বিধান। এই ধর্মকে এক শ্রেণীর মানুষ (এবং কোন কোন মাওলানা) ভুল ব্যাখ্যা (ইন্টারপ্রেট) করে অনেক বড় ক্ষতি করছেন। এই রমজান মাসেই কিছু মানুষকে দান খয়রাতে মেতে উঠতে দেখা যায়। এইসব বেশিরভাগ মানুষের পেশা ও বৃত্তান্ত ঘেঁটে যা জানা যায় তা মোটেও সুখকর নয়। তাদের অর্থের উৎস নিয়েও অনেক প্রশ্ন আছে। রমজান মাস এলেই তারা প্রকৃত মুখ আড়াল করে মুখোশে নিজেকে সাধুর (!) পরিচয় দেন। তারাই ঈদের বাজারের ভিআইপি ক্রেতা। শপিং মল, শো রুম, বড় দোকানগুলোতে তাদের কদর বেশি। মাহে রমজানে এইসব মানুষের ভিড়ে শহরের মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষ চ্যাপ্টা হয়ে থেতলে গিয়েছে। তাদের চাপা আর্তনাদের মধ্যেই পবিত্র মাস অতিক্রম করে। কাউন্টডাউন শুরু হয় ঈদের আনন্দের.....।
×