ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নাফ নদীতে বিজিপির গুলিতে এক বিজিবি আহত

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৮ জুন ২০১৫

নাফ নদীতে বিজিপির গুলিতে এক বিজিবি আহত

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের টেকনাফ সংলগ্ন নাফ নদীতে বিনা উস্কানিতে মিয়ানমারের বিজিপি (বর্ডার গার্ড পুলিশ) বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) ওপর গুলি চালিয়েছে। এ ঘটনায় বিজিবির এক সদস্য গুলিবিদ্ধ ও আরেক সদস্যকে বিজিপি অপহরণ করেছে। বুধবার ভোর ৫টায় টেকনাফ সদর থেকে ৬ থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তরে লালদিয়া নামক স্থানের নাফ নদীতে এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ বিজিবি সদস্যের নাম বিপ্লব (৩৫) আর অপহৃত বিজিবি সদস্যের নাম আবদুর রাজ্জাক। আবদুর রাজ্জাককে বিজিপি ধরে নেয়ার কথা ইতোমধ্যে স্বীকার করেছে। গুলিবিদ্ধ বিজিবি সদস্য বিপ্লবকে জরুরীভিত্তিতে কক্সবাজার হাসপাতালে ভর্তি করার পরে চট্টগ্রাম সিএমএইচে ভর্তি করা হয়েছে। তার ডান হাতে গুলি লেগেছে। এছাড়া আরেকটি গুলি তার কান বরাবর চলে যাওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। সিএমএইচ সূত্রে জানানো হয়েছে, গুলিবিদ্ধ বিপ্লবের অবস্থা বর্তমানে শঙ্কামুক্ত। সংঘটিত ঘটনার পর আজ বিজিবি ও বিজিপির মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। বৈঠকটি ঠিক কোথায় হবে অর্থাৎ সে দেশের মংডুতে না বাংলাদেশের টেকনাফে তা বুধবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। ঘটনার সময় বিজিপি সদস্যদের গুলিবর্ষণের পাল্টা জবাব দেয় বিজিবি সদস্যরা। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ১২ থেকে ১৫ রাউন্ড গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এদিকে, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ঘটনাটি ভুল বুঝাবুঝির কারণে হয়েছে। এরপরও এ ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন করা হবে এবং তা পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে সমাধান করা হবে। ঘটনা নিয়ে দু’দেশের সীমান্ত রক্ষীদের দু’ধরনের বক্তব্য রয়েছে। বিজিবি দাবি করেছে, বিজিপির সদস্যরা বাংলাদেশী জলসীমার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা তল্লাশি করার প্রক্রিয়ায় বিজিবি সদস্যরা বাধা দেয়। এতে প্রথমে হাতাহাতি হয় এবং পরে তা গোলাগুলি পর্যায়ে রূপ নেয়। অপরদিকে, বিজিপির পক্ষ থেকে যে বক্তব্য বিদেশী গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে তাতে বলা হয়েছে বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষীদল তাদের জলসীমায় প্রবেশ করার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। ভোরে এ ঘটনার পর বিজিবির পক্ষ থেকে মিয়ানমারের বিজিপি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। বিজিপি ঘটনার সময় বিজিবি সদস্য আবদুর রাজ্জাককে যে ধরে নিয়ে গেছে এবং বর্তমানে যে তাদের হেফাজতে রয়েছে তা স্বীকার করেছে। সহসা যে দু’দেশের পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে তখন তাকে ফেরত দেয়া হবে বলে ইতোমধ্যে বিজিপি জানিয়েছে। বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল এসএম আনিসুর রহমান এ ঘটনার পর মিয়ানমারের বিজিপিকে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান। তিনি জানান, ঘটনার সময় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। বিজিবির অন্য একটি সূত্র জানায়, ঘটনার সময় বিজিবি নাফ নদীর বাংলাদেশী জলসীমায় টহল দিচ্ছিল। ওই সময় বিজিপি সদস্যরাও তাদের জলসীমায় টহলরত অবস্থায় ছিল। টহলের সময় বিজিপির টহলযান মাছ ধরার জালে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এতে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। তবে আরেকটি সূত্রে বলা হয়েছে, বিজিপি সদস্যরা অবৈধভাবে বাংলাদেশী জলসীমায় ঢুকে একটি ইঞ্জিন বোটে তল্লাশি চালানোর সময় বিজিবি সদস্যরা বাধা দিলে এ ঘটনার জন্ম নেয়। এ ঘটনার পর আগামীতে সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ, মিয়ানমার দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের উচ্চ পর্যায়ের পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠানের দু’দেশের সীমান্তে অহেতুক গুলিবর্ষণসহ অনাকাক্সিক্ষত কোন ঘটনা না ঘটার ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা হওয়ার চারদিনের মাথায় এ ঘটনা ঘটেছে। উল্লেখ্য, গত ১৪ জুন কক্সবাজারে দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের রিজিওন কমান্ডার পর্যায়ে যে বৈঠক হয় তাতে সীমান্তে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে উভয়পক্ষ একমত হয়। প্রসঙ্গত, গেল বছরের ২৮ মে মিয়ানমারের বিজিপি ও সে দেশের সেনাবাহিনীর সদস্যরা সীমান্তের ২২নং পিলারের পাশে বিজিবির টহল দলের ওপর বিনা উস্কানিতে গুলি চালিয়েছিল। এতে নাইক্ষ্যংছড়ির পানছড়ি বিওপির নায়েক মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান। পরে ওই বিজিবি সদস্যের নাম মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীরা সে দেশে নিয়ে যায়। বিজিবি কর্তৃপক্ষের কড়া প্রতিবাদের মুখে তিনদিন পর নায়েক মিজানের লাশ ফেরত দিতে বাধ্য হয় মিয়ানমারের বিজিপি। এছাড়া নাফ নদীতে বাংলাদশী জেলেদের ধরে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দেয়ার বহু ঘটনা রয়েছে। গত মার্চেও লালদিয়া নামক স্থানে বিজিবি সদস্যরা একটি নৌকা তল্লাশিকালে বিজিপির পক্ষ থেকে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। মাঝে মাঝে বিনা উস্কানিতে মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যদের গুলিবর্ষণের ঘটনায় সীমান্ত এলাকার লোকজন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বুধবারের ঘটনার পর কোন উত্তেজনা না থাকলেও বাংলাদেশী জেলেরা নাফ নদীতে মাছ ধরতে যেতে সন্ত্রস্ত্র অবস্থায় রয়েছে।
×