ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গল টেস্ট দিয়ে শুরু শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান সিরিজ

লড়াইটা সাঙ্গাকারা-ইউনুস খানেরও

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১৭ জুন ২০১৫

লড়াইটা সাঙ্গাকারা-ইউনুস খানেরও

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বয়স সমান ৩৭, দু’জনেরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আগমন ২০০০ সালে। পার্থক্য কুমার সাঙ্গাকারা শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ রানের মালিক, ইউনুস খান সিংহাসনে বসার দ্বারপ্রান্তে। আর তিন টেস্ট খেলে বিদায় বলবেন লঙ্কান গ্রেট, অপরদিকে খান সাহেব চালিয়ে যাবেন আরও কিছুদিন। মিল-অমিল যাই থাক, গলে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মধ্যকার তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট দিয়ে গড়ানো দ্বৈরথে লড়াইটা আসলে দুই অভিজ্ঞ উইলোবাজ সাঙ্গাকারা আর ইউনুস খানেরই। কিছু বিষয়ের সঙ্গে আলোচনায় থাকছে র‌্যাঙ্কিংও। ৯৭ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে পাকিস্তান। ৯৬ পয়েন্টে ঠিক তারপরই স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। সিরিজ জিতলে এ লাফে চতুর্থ স্থানে ওঠার সুযোগ দু’দলের সামনে। কারণ চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে থাকা ভারত-ইংল্যান্ডের পয়েন্টও সমান ৯৭। বিশ্বকাপটা ভাল কাটেনি কারই। পাকিস্তানের অবস্থা বেশিই খারাপ। বাংলাদেশ সফরে কোনক্রমে টেস্ট সিরিজ ১-০তে জিতলেও ওয়ানডে-টি২০তে হোয়াইটওয়াশ হয় পাকিরা। কেঁপে ওঠে দলটির ক্রিকেটের ভিত। কোচ ওয়াকার ইউনুসের চাকরি নিয়ে টানাটানি। সম্মানের পাশাপাশি চাকরি বাঁচাতে সাবেক স্পিডস্টারের জন্য সিরিজটা তাই অগ্নিপরীক্ষার। অন্যদিকে স্বাগতিক শিবিরে বন্ধু মাহেলা জয়াবর্ধনেকে ছাড়া এই প্রথম টেস্ট খেলতে নামা সাঙ্গাকারার ওপর দৃষ্টি থাকবে বিশেষভাবে। কারণ এই সিরিজের প্রথম দুটি ও আসন্ন ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলে সব ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন লঙ্কান তো বটেই, আধুনিক সময়ের অন্যতমসেরা এই ব্যাটসম্যান। গত টি২০ ও ওয়ানডে বিশ্বকাপের মধ্য দিয়ে স্বল্পদৈর্ঘীয় ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন তুখোড় সাঙ্গা। ওয়ানডে বিশ্বকাপ দিয়ে সব ধরনের ক্রিকেটকেই বিদায় জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচক ও দেশবাসীর আবদারের মুখে টেস্ট নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যান তিনি। তবে এবার সিদ্ধান্তটা চূড়ান্ত। দু’দিন আগে নির্বাচকদের সঙ্গে আলোচনা করেই জানিয়েছেন, আগস্টে ঘরের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচের মধ্য দিয়ে টেস্টকেও চিরতরে বিদায় জানাবেন ৩৭ বছরের মাতালে হিরো। সাঙ্গাকে ‘হিরো’ বললেও, হয়ত কম বলা হবে! সনাথ জয়সুরিয়া-অরবিন্দ ডি সিলভা উত্তর যুগে ছিলেন লঙ্কান ক্রিকেটের দিকপাল হয়ে। টেস্ট-ওয়ানডে দুই ঘারনায় শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ রানের মালিক সাঙ্গাকারা। ৩৮ সেঞ্চুরির সাহায্যে ৫৯ গড়ে টেস্টে তার মোট রান ১২,২০৩। ১১ হাজারের ওপরে রান আছে কেবল অবসরে যাওয়া মাহেলার (১১,৮১৪)। সর্বোপরি টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের মালিক শচীন টেন্ডুলকর (১৫,৯২১)। যেহেতু তিন টেস্ট খেলবেন, সেটি ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে বিদায়লগ্নে দারুণ এক রেকর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে সাঙ্গাকারা। তিন ম্যাচের ৬ ইনিংসে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি হলেই স্যার ডন ব্র্যাডম্যানকে (১২টি) পেছনে ফেলবেন ১১ ডাবল সেঞ্চুরির মালিক। ন্যূনতম ১ ডাবল সেঞ্চুরি হলেও যৌথভাবে নাম লেখাবেন শীর্ষে। ৯ ডাবল সেঞ্চুরিতে তৃতীয় স্থানে ব্রায়ান লারা। বিপরীতে ব্যাট হাতে অধিনায়ক মিসবাহ-উল হকের সঙ্গে পাকিস্তানীদের বড় ভরসার নাম ইউনুস। গ্রেট জাভেদ মিয়াদাদকে টপকে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়তে আর ২৮৫ রান চাই তার (৮৫৪৭)। বুড়ো হারে ভেল্কি দেখিয়ে সম্প্রতি দারুণ ছন্দে রয়েছেন পাকিস্তানের রেকর্ড সর্বোচ্চ ২৯ সেঞ্চুরির মালিক। ব্যাট হাতে লঙ্কানদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে অভিজ্ঞ ইউনুসের সঙ্গে থাকবেন মিসবাহ, দারুণ প্রতিভাবান আজহার আলি ও মোহাম্মদ হাফিজ। দীর্ঘ পরিসরে দৃশ্যপট বদলে দেয়ার সামর্থ্য রাখেন আসাদ শফিক। বোলিংয়ে জুনায়েদ খান, এহসান আদিল ও ওয়াহাব রিয়াজকে নিয়ে পেস আক্রমণ ভারসাম্যপূর্ণ। স্পিনে জুলফিকার বাবর-ইয়াসির শাহর সঙ্গে হাফিজ। তবে সাঈদ আজমল নেই বলে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন লঙ্কান কোচ মারভান আতাপাত্তু! অন্যদিকে সাঙ্গাকারার সঙ্গে স্বাগতিক ব্যাটিংয়ের স্তম্ভ অধিনায়ক ম্যাথুস, লাহিরু থিরিমান্নে আর কিথরুয়ান ভিতানাগে। বোলিংয়ে ধাম্মিকা প্রসাদ-রঙ্গনা হেরাথ বড় নাম। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, দু’দলই চেনা প্রতিপক্ষ। পাকিস্তান হয়ত নিজেদের মাটিতে খেলতে পারছেন না, তবে তাদের দ্বিতীয় হোম ভেন্যু হয়ে ওঠা আমিরাতের কন্ডিশনও একইরকম। অধিনায়ক মিসবাহ সেটিই বলেছেন। ১৯৮২ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত মুখোমুখি মোট ৪৮ টেস্টের ১৭টি জিতে এগিয়ে পাকিস্তান। শ্রীলঙ্কার জয় ১৩টিতে। ড্র হয় ১৮ টেস্ট। ২০১৪ সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা সফরে ২-০তে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল পাকিরা। কলম্বোয় মুখোমুখি শেষ ম্যাচে ১০৫ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতেছিল স্বাগতিক লঙ্কানরা।
×