ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নেইমার চমকে ব্রাজিলের শুভসূচনা

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১৬ জুন ২০১৫

নেইমার চমকে ব্রাজিলের শুভসূচনা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কি ক্লাব কি দেশ, সবখানেই দুরন্ত, দুর্বার, অপ্রতিরোধ্য। বার্সিলোনা সতীর্থ লিওনেল মেসির ঠিক যেন বিপরীত! বলা হচ্ছে নেইমারের কথা। তারকা এই ফুটবলার আরেকবার নিজ দেশের জার্সিতে সৌরভ ছড়িয়েছেন। আর তাতেই দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের আসর কোপা আমেরিকায় শুভসূচনা করেছে রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। বাংলাদেশ সময় সোমবার ভোরে অনুষ্ঠিত ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও ব্রাজিল ২-১ গোলে পরাজিত করে পেরুকে। সেলেসাওদের হয়ে গোল করেন অধিনায়ক নেইমার ও বদলি হিসেবে নামা মিডফিল্ডার ডগলাস কস্তা। এই জয়ে ‘সি’ গ্রুপে শীর্ষ থাকল ব্রাজিল। গত বছর নিজ দেশে বিশ্বকাপের পর দলকে এক সুতোয় গেঁথেছেন দ্বিতীয় মেয়াদে কোচের দায়িত্ব পাওয়া কার্লোস দুঙ্গা। বিশ্বকাপের পর টানা ১১ ম্যাচ জিতে সে স্বাক্ষরই রেখেছেন লুইজ, উইলিয়ান, ফ্রেড, আলভেজরা। ‘সি’ গ্রুপের আরেক ম্যাচে আসরের অন্যতম ফেবারিট কলম্বিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে চমক দেখিয়েছে ভেনিজুয়েলা। বিজয়ী দলের হয়ে জয়সূচক গোল করেন জোসে রনডন। চিলির টেমুকো শহরে ব্রাজিল-পেরু ম্যাচটি শুরু থেকেই উত্তেজনা ছড়ায়। খেলা মাঠে গড়ানোর দ্বিতীয় মিনিটেই ব্রাজিলের জালে গোল করে চমক দেখায় পেরু। সমতা ফেরাতে বিলম্ব করেনি সেলেসাওরা। দুই মিনিট বাদেই দারুণ গোল করেন অধিনায়ক নেইমার। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে মিডফিল্ডার পাওলো গুয়েরো গোল করেন পেরুর হয়ে। গোলটিতে অবশ্য দায় ব্রাজিল ডিফেন্ডার ডেভিল লুইড ও গোলরক্ষক জেফারসনের। ডি বক্সের মাঝে বল বিপদমুক্ত না করে গোলরক্ষকের দিকে বাড়ান লুইজ। আর জেফারসন আলত করে সামনে বল বাড়ালে তা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দারুণ শটে গোল করেন গুয়েরো। নেইমারের কল্যাণে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের অবশ্য বেশিক্ষণ পিছিয়ে থাকতে হয়নি। চতুর্থ মিনিটেই সমতা ফেরায় তারা। ডান দিক থেকে দানি আলভেসের দারুণ ক্রসে ডি বক্সের মধ্যে লাফিয়ে উঠে হেডে গোল করেন ব্রাজিল অধিনায়ক। জাতীয় দলের হয়ে ৬৩ ম্যাচে নেইমারের এটি ৪৪ নম্বর গোল। সমতা ফেরানোর পর আক্রমণের ধার বাড়িয়ে দেয় ব্রাজিল। ১৫ মিনিটে নেইমারের প্রচেষ্টা গোললাইন থেকে ফিরিয়ে দেন প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার লুইস আডভিনকুলা। এরপর পাল্টা আক্রমণে কুয়েভোর শট রুখে দেন সেলেসাও গোলরক্ষক জেফারসন। বিরতির পর ৫৩ মিনিটে দর্শনীয় এক গোল থেকে নেইমারকে বঞ্চিত করে বারপোস্ট। ডি বক্সের বাইরে বল পেয়ে আচমকা জোরালো শট নিয়েছিলেন বার্সা তারকা। বাঁকানো শটটি গোলরক্ষককে ফাঁকি দিলেও বারপোস্ট কাঁপিয়ে ফিরে আসে। ৭৫ মিনিটে দারুণ সুযোগ নষ্ট করে ব্রাজিল। পাল্টা আক্রমণে বল নিয়ে এগিয়ে নেইমার বল পাঠিয়েছিলেন বদলি খেলোয়াড় ডগলাস কস্তাকে। কিন্তু গোলরক্ষকের ওপর দিয়ে তার পাঠানো চিপ গোলের নিশান খুঁজে পায়নি। ১-১ গোলে ম্যাচ যোগ করা সময়ে গড়ানোয় ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ার শঙ্কা জেগেছিল ব্রাজিল। সেখান থেকে দুঙ্গার দলকে উদ্ধার করেন কোস্টা। ৯১ মিনিটে ইউক্রেনের ক্লাব শাখতার ডোনেস্কের এই মিডফিল্ডার গোল করে ব্রাজিলকে দারুণ জয় পাইয়ে দেন। এই গোলটিতেও অসামান্য অবদান রাখেন নেইমার। ডি বক্সের বাইরে বাঁদিক থেকে অসাধারণ রক্ষণচেরা পাস দেন বার্সা তারকা। তা পেয়ে গোলরক্ষকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ান কস্তা। ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নেইমার ম্যাচ শেষে বলেন, এটা সত্যিই অনেক কঠিন প্রতিযোগিতা। প্রথম ম্যাচে আমরা জয় পেয়েছি, এটাই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, আমি এখন নিজের পারফর্মেন্স ধরে রাখতে চাই। আমি সব সময় চাই গোল করার মধ্য দিয়ে রেকর্ড গড়তে। এ জন্য মাঠে কঠিন পরিশ্রম করি। পেরুর বিরুদ্ধে ম্যাচে দ্বিতীয় গোল পেতে পারতাম। সে সুযোগ নষ্ট হয়েছে, তবে আশা রাখছি পরের ম্যাচে আবারও গোল করতে পারব। এছাড়া গোলে সহযোগিতা করতে চাই, মোট কথা ম্যাচ জয়ে যা কিছু করা দরকার তাই করতে চাই। ২৩ বছর বয়সী এই মহাতারকাকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন কোচ ও সতীর্থরাও। ব্রাজিল কোচ দুঙ্গা বলেন, নেইমার আরেকবার আমাদের সাফল্য উপহার দিয়েছে। স্পেনে সে লম্বা মৌসুম কাটিয়েছে। বার্সিলোনার হয়ে তিনটি ফাইনালে খেলেছে। কিন্তু জাতীয় দলে ফিরেও সে সমান দায়িত্ব নিয়েই খেলছে। এতে করে আমাদের অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে গেছে। ভেনিজুয়েলার বিরুদ্ধে কলম্বিরয়ার শুরুর একাদশে ছিলেন সবাই। রিয়াল মাদ্রিদের জেমস রড্রিগুয়েজ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের রাদামেল ফ্যালকাও ও চেলসির জুয়ান কুয়াডারডো। এরপরও ব্রাজিলে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা দলটি জিততে পারেনি। মাঠ ছাড়তে হয়েছে হার নিয়ে। বিশ্বকাপে যে পারফর্মেন্স দেখিয়েছিল কলম্বিয়া তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি ভেনিজুয়েলার বিরুদ্ধে ম্যাচে। ম্যাচের ৬০ মিনিটে ভেনিজুয়েলার হয়ে জয়সূচক গোল করেন রনডন। পরিকল্পিত একটি আক্রমণ থেকে হেডে গোল করে তিনি কলম্বিয়ানদের হৃদয় ভাঙেন। ম্যাচ শেষে কলম্বিয়ান গোলরক্ষক ডেভিড অসপিনার কণ্ঠে ঝরেছে হতাশা। বলেন, ভেনিজুয়েলার খেলোয়াড়েরা আমাদের খেলার জায়গা ছোট করে দিয়ে সফল হয়েছে। আমরা চেষ্টা করেও নিজেদের খেলাটা খেলতে পারিনি।
×