ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে লিড ইকোনমিস্ট ডক্টর জাহিদ হোসেন

জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭% অর্জন অসম্ভব না হলেও চ্যালেঞ্জিং ॥ বিশ্বব্যাংক

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৬ জুন ২০১৫

জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭% অর্জন অসম্ভব না হলেও চ্যালেঞ্জিং ॥ বিশ্বব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে বৃহৎ আকারের গতানুগতিক বাজেট হিসেবে আখ্যায়িত করেছে বিশ্বব্যাংক। এছাড়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ অর্জন অসম্ভব না হলেও চ্যালেঞ্জিং হবে এবং সেক্ষেত্রে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩ শতাংশ বা তার কাছাকাছি হবে বলেও পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সোমবার বাজেটপরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় তুলে ধরেছে সংস্থাটির লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন। তিনি জানান, বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চার চ্যালেঞ্জ এবং পাঁচটি ঝুঁকি রয়েছে। অপরদিকে মূল্যস্ফীতি সর্বকালের ভাল অবস্থায় থাকায় আগামী অর্থবছর পে-স্কেল বাস্তবায়নের উপযুক্ত সময় বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে বাজেটপরবর্তী এই সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর সালমান জায়দী। এ সময় যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সন্মেলনে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আগামী বাজেটে চারটি প্রধান চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ ইউরোপ মন্দা থেকে বের হতে পারবে কিনা, তেলের দাম কম হওয়ায় মধ্য মেয়াদে মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক চাহিদা কমবে কিনা, পোশাক খাতের চলতি সংস্কার সঠিকভাবে এবং সময়মতো শেষ হবে কিনা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে কিনা। এছাড়া ছয়টি ঝুঁকি হচ্ছেÑ রাজস্ব আহরণ, উন্নয়ন প্রকল্পের (এডিপি) মানসম্মত বাস্তবায়ন, অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ, সুদের হার নিয়ন্ত্রণে রাখা, ভর্তুকি কমার সুফল গরিবের কাছে সমানভাবে পৌঁছানো এবং প্রস্তাবিত বাজেটে উল্লিখিত সংস্কার কার্যক্রম গতিশীল করা। বলা হয়েছে, প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব নয়, কিন্তু চ্যালেঞ্জিং হবে। বিশেষ করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, বিনিয়োগের হার ২৯ থেকে ৩৩ শতাংশ নিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রবৃদ্ধি বিষয়ে তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের যে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তা পৃথিবীর ২০ দেশের মধ্যে একটি। সুতরাং ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির যে ফাঁদ বলা হয়, তা নেগেটিভ অর্থে না দেখে পজিটিভ অর্থে মূল্যায়ন করা উচিত। তিনি বলেন, এবারের বাজেটে বিনিয়োগ বাড়াতে উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কথা বলা হয়েছে, যার কয়েকটির কাজ এ বছরের মধ্যে শেষ হবে। বিদ্যুত উন্নয়ন বাড়াতেও নানা পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। এসব কারণেই আমার মনে হয়, চ্যালেঞ্জ হলেও সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন কঠিন হবে না। তবে বাস্তবতার নিরিখে বলা যায় আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩ শতাংশ বা এর আশপাশেই থাকবে। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ২ শতাংশ অর্জন সম্ভব হবে; এটি বাস্তবসম্মত। কেননা মুদ্রানীতি এখনও ঠিক আছে। যদি জুলাই মাসে নতুন মুদ্রানীতি এখনকার মতো হয় তাহলে ভাল হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি এখন সর্বকালের সবচেয়ে বেশি ভাল অবস্থায় রয়েছে। এ সময়টিই হচ্ছে পে-স্কেল বাস্তবায়নের উপযুক্ত সময়। কেননা সরকারী কর্মচারীদের কর্মক্ষমতা, দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এটি করতে হবে। ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে না। তাই এর চেয়ে বেটার টাইমিং দেখি না। সূত্র জানায়, গত ৪ জুন জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য প্রায় তিন লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এতে সাত শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার কথা জানিয়ে মুহিত বলেন, রাজস্ব ও মুদ্রানীতির সুসমন্বয় এ লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে।
×