ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আম জাম লিচুর কেনা-বেচা বাড়ছে ;###;বিশ্ববাজারে এবারই প্রথম আম রফতানি ;###;প্রধান সমস্যা সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণ ;###;বছরে পচে নষ্ট হয় ৩-৩৫ ভাগ ফল

মধুমাসের ফল বাণিজ্য ॥ সাত হাজার কোটি

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৬ জুন ২০১৫

মধুমাসের ফল বাণিজ্য ॥ সাত হাজার কোটি

কাওসার রহমান॥ বছরজুড়ে কমবেশি ফল পাওয়া গেলেও সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় এ জ্যৈষ্ঠ মাসে। রঙবাহারি বিভিন্ন ফলের মৌ মৌ গন্ধে ভরিয়ে তোলে চারপাশ। ষড়ঋতুর এদেশে রোদে তেতে ওঠা জ্যৈষ্ঠে তৃষ্ণার্থ মানুষ পিপাসা মেটায় বিভিন্ন প্রজাতির রসালো ফল দিয়ে। সুস্বাদু ফলের অধিক সরবরাহ থাকায় সবার কাছে তাই জ্যৈষ্ঠ মাসটি মধুমাস নামে পরিচিত। চারদিকে এখন নানান ফলের মৌ মৌ গন্ধ আর ভ্রমরের গুঞ্জন। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুসহ নানা রসালো ফলে প্রকৃতি ঢেলে দিয়েছে তার সমস্ত রস। রসনাবিলাসী বাঙালীকে এই রস আস্বাদনে মাতিয়ে তুলতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে দেদার কেনাবেচা হচ্ছে মৌসুমি ফল। জ্যৈষ্ঠের বাতাসেও যেন মধুমাসের রসালো ফলের ঘ্রাণ। বাজারে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি চাহিদা লিচুর। সঙ্গে আমের চাহিদাও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আর বর্ষার আগাম বর্ষণে কাঁঠালও জানান দিচ্ছে ‘আমিও আসছি’। শুরুতে প্রতিটি মৌসুমী ফলেরই বেশি দাম থাকলেও এখন তা ক্রেতার নাগালের মধ্যে চলে এসেছে। তবে বিক্রেতারা বলছেন, তুলনামূলক এবার মৌসুমী ফলের দাম বেশি। ফলের গাড়িতে রাস্তায় রাস্তায় চাঁদাবাজির কারণে ফলের দাম বেশি পড়ছে। এছাড়াও এবারও ফলের বাজারে বিরাজ করছে ফরমালিন আতঙ্ক। অনেকেই এর জন্য ফল কিনতে একটু দ্বিধাবোধ করছেন। অতীত অভিজ্ঞতার কারণে ক্রেতারা ফরমালিনযুক্ত ফল কিনতে ভরসা পাচ্ছেন না। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন ফলে ফরমালিন ব্যবহার করলেও এবার তা আগের মতো নেই। বাজারে বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অনেক বেশি। বাঙালীর চিরায়ত রীতি অনুযায়ী জ্যৈষ্ঠ মাসেই মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনিকে ফল দিয়ে আদর-আপ্যায়নের ব্যবস্থা করে থাকেন গ্রামে বাস করা বাবা-মায়েরা। লেখাপড়া, চাকরি কিংবা ব্যবসার কারণে যারা শহরে থাকেন তারাও গ্রামে ফেরে মধুমাসের মধুর রসে মুখকে রাঙিয়ে তুলতে। আবার অনেক সময় দেখা যায় মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনি না আসতে পারলেও তাদের জন্য ফল পাঠিয়ে দেয়া হয়। বিভিন্ন প্রজাতির ফলের সমারোহ থাকে বলেই হয়ত জ্যৈষ্ঠ মাসে আয়োজন করা হয় জামাই ষষ্ঠীর। গ্রাম ও শহরে জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষে ষষ্ঠী তিথিতে সনাতন ধর্মের নারীরা ষষ্ঠী পূজা করেন। ঘর ও মন্দিরের বাইরে বট, করমচার ডাল পুঁতে প্রতীকী অর্থে অরণ্য তৈরি করে এ পূজা করা হয়। এজন্য জামাইষষ্ঠীকে অরণ্যষষ্ঠীও বলা হয়। হালে আমকে কেন্দ্র করে রাজশাহী অঞ্চলে শুরু হয়েছে এক ধরনের ‘ম্যাঙ্গো ট্যুরিজম’। একক প্রচেষ্টায় কিংবা কাজের উদ্দেশে এই সময় প্রচুর মানুষ যাচ্ছেন রাজশাহী অঞ্চলে। ঘুরে বেড়াচ্ছেন আমের হাট-বাজারে। ফিরতিপথে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন প্রিয়জনের জন্য ল্যাংড়া, ক্ষীরসাপাত, হিমসাগর, রাজভোগ, কোহিতুর কিংবা রানীপছন্দ। এসব জাতের আমের স্বাদ নিতে আম পর্যটকদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে রাজশাহী অঞ্চলে। বিশেষ করে ফরমালিন আতঙ্কের কারণে পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছেন দেশের আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে। উদ্দেশ হলো একেবারে বাগানের কাছাকাছি গিয়ে ফরমালিন মুক্ত আম খাওয়া, সেই সঙ্গে পরিবার পরিজনের জন্য ফরমালিন মুক্ত আম নিয়ে আসা। মধুমাসের বাণিজ্য ॥ মধুমাসের ফল এখন আমার জামাইষষ্ঠী কিংবা মুখ রাঙানোর মধ্যে নেই। এই ফল এখন বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য হয়ে উঠেছে। এ কারণে মধুমাসের ফলের এখন বাণিজ্যিক চাষাবাদ বাড়ছে। বরং চিরাচরিত ধান বা অন্যান্য ফসল বাদ দিয়ে কৃষক এখন মধুমাসের ফল আবাদের দিকে ঝুঁকছে। মধুমাসের প্রধান ফল আমের উৎপাদন এখন ১০ লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে। রসেভরা টসটসে লিচুর উৎপাদনও ছাড়িয়ে গেছে ৫০ হাজার টনে। আর জাতীয় ফল কাঁঠালের উৎপাদন না বাড়লেও বছরে প্রায় ১০ লাখ টনের কাছাকাছি উৎপাদন হচ্ছে। মূলত এই ফলগুলোই মধুমাসের ফলবাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রশানের কড়াকড়ির কারণে ভরা মৌসুমে এসে আমের দাম পড়ে গেলেও এবার ফলের রাজা আমের লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়াবে। লিচুর বাণিজ্যের পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর কাঁঠাল কেনাবেচার পরিমাণ ৬শ’ কোটি টাকারও বেশি হতে পারে। মধুমাসের এই প্রধান তিন ফলের লেনদেনের পরিমাণই এবার ৬ হাজার ৬শ’ কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে। আর মুখ রঙিন করা জাম, জামরুল, আনারস, পেয়ারা প্রভৃতির বাণিজ্যের হিসাব ধরলে মধুমাসের ফলবাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, গত দশ বছরের তুলনায় বর্তমানে ফলের চাষ কয়েকগুণ বেড়েছে। বিশেষ করে মধুমাসের প্রধান ফল আম, লিচু ও কাঁঠালের উৎপাদন বাড়ছে। এসব ফল এখন অর্থকরি হয়ে ওঠায় কৃষক বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগুলো চাষ করছে। কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি ড. আলম বলেন, এখন দেশীয় বাওকুল, আপেল কুল, বিভিন্ন জাতের আনারস, রঙ্গিন জামরুল, মিষ্টি আঙ্গুরের পাশাপাশি বিদেশী নানা ফল যেমন স্ট্রবেরি, ড্রাগনসহ হরেক রকম ফল উৎপাদন হচ্ছে। তাছাড়া আমের বিভিন্ন জাত উন্নয়ন হয়েছে। কয়েক বছরের মধ্যে বিদেশে ব্যাপক পরিমাণে আম রফতানিও সম্ভব হবে। তিনি বলেন, এ অবস্থায় ফলে অর্থনীতিকে শক্ত অবস্থানে নিতে গেলে আমসহ অন্যান্য মৌসুমী ফল প্রক্রিয়াকরণের দিকে যেতে হবে। এক্ষেত্রে শিল্পপতি ও গবেষকদের ভূমিকা রাখতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের বিশেষ ঋণ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা উচিত। সেই সঙ্গে যারা এসব ফল সংরক্ষণের জন্য হিমাগার ও প্রক্রিয়াকরণ কারখানা করতে চায় তাদের স্বল্পসুদে ঋণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। কৃষি তথ্য সার্ভিস জানায়, এ বছর আমের ভাল ফলন হয়েছে। রাজশাহী অঞ্চল ছাড়াও বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়িতে আম ও লিচুর বাণিজ্যিক চাষ বাড়ানো হয়েছে। কাঁঠালের রাজধানীখ্যাত ভালুকায় এবার এ ফলের ফলন হয়েছে ভাল। ফলের রাজার রাজত্ব ॥ ফলের রাজা আম এখন রাজার মতোই সারাদেশে দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করে বেড়াচ্ছে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া কোথায় নেই আমের জয়জয়কার। আর এই মধুমাসের ফলের মূল উৎস রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের সর্বত্রই এখন কেবল আম আর আম। হাটে, মাঠে, পাড়ার অলিগলিতে, পথে-প্রান্তরে, বাগানে-বাগানে শুধুই আম। বাজার থেকে এরই মধ্যে গোপালভোগ ও মোহনভোগ বিদায় নেবার পর এসেছে ক্ষিরসাপাত, ল্যাংড়া, লখনা, রানীপছন্দ, আম্রপলি, রানীপ্রসাদসহ বিভিন্ন জাতের বাহারি নামের সুস্বাদু আম। এসব আমের বিরামহীন বেচাকেনা এখন প্রাচীন এই জনপদে। গাছ থেকে আম নামানো ও বাজারজাতকরণ কাজের ব্যস্ততায় ফুরসত নেই আম বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্তদের। আমের কল্যাণে এখন চাঙ্গা হয়ে উঠেছে এই দুই জেলার অর্থনীতি। রাজশাহী অঞ্চলের দুইটি বড় আমের মোকাম রাজশাহীর বানেশ্বর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে প্রতিদিন বেচাকেনা হচ্ছে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকার আম। আমের কারবার নিয়ে রাজশাহী অঞ্চলের প্রায় ৬০ হাজার মানুষের মৌসুমী কর্মসংস্থানও হয়েছে। মধুমাস জ্যৈষ্ঠের পর জুন মাসজুড়ে চলবে এ ‘আম বাণিজ্য’। গাছের আম নামানোর কামলা থেকে আম চালানের ঝুড়ি বানানো এবং বাজারগুলোয় নানা ধরনের সহায়ক কাজে নিয়োজিত লোকজনের কর্মসংস্থানের ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে। আম বাণিজ্যের কারণে অর্থবছরের শেষদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয়ও বেড়েছে লেনদেনের হার। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, প্রতিবছরই আমের উৎপাদন বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে আমের বাণিজ্য। এ বছরের আমের পূর্ণাঙ্গ হিসেব এখনও তৈরি হয়নি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে গত বছর ৯ লাখ ৪৫ হাজার টন আম উৎপাদিত হয়েছে। এ বছর তা ১০ লাখ টন অতিক্রম করবে, আশা করা হচ্ছে। বিশ্বের আম উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি হারে আমের ফলন বাড়ছে। ২০১২ সালে দেশে ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে আম বাগান ছিল। এ বছর আম চাষ হয়েছে ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে। এফ এ ওর হিসাব অনুযায়ী, ২০১২ সালে বাংলাদেশে ৮ লাখ ৯০ হাজার টন আম উৎপাদন করে বিশ্বের অষ্টম আম উৎপাদনকারী দেশ হয়েছিল। গত দু’বছরের মধ্যে দেশে আমের উৎপাদন বেড়ে তা ১০ লাখ টন হয়েছে। আম উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তমে চলে এসেছে। দেশে বর্তমানে প্রায় দেড় কোটি আমগাছ রয়েছে। কৃষি বিভাগের মতে, বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে কৃষকদের সচেতনতার কারণে এবছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর মৌসুম শেষে আমের উৎপাদন প্রায় ২লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টনে গিয়ে দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। জেলার ৫টি উপজেলায় ২৪ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এসব আমদাদি জমিতে প্রায় ১৯ লাখ আমগাছ রয়েছে। এফএও’র হিসাবে, বর্তমানে বিশ্বের আম উৎপাদনকারী দেশ হলো ভারত। এর পরেই রয়েছে চীন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান। আর আম রফতানিকারক দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে মেক্সিকো। এরপর রয়েছে ফিলিপিন্স, পাকিস্তান, ব্রাজিল ও ভারত। আম রফতানি ॥ এ বছর থেকে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের আম রফতানির মাধ্যমে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। বাংলাদেশের আম প্রথমবারের মতো বিদেশে রফতানি হয়েছে। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের ল্যাংড়া ও আম্রপলি দুই দফায় ২ হাজার ১৬০ কেজি আম রফতানি হবে। বাংলাদেশের আমের ক্রেতা বিশ্বের সবচেয়ে বড় খুচরা পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট। প্রাথমিকভাবে সাতক্ষীরার আম রফতানি শুরুর পর প্রতিসপ্তাহে ৪ মণ করে অন্য জেলার আম যুক্তরাজ্যের বাজারে রফতানি হয়। ইতোমধ্যে বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্টের কাছে দেশের সাত জেলার নয়টি উপজেলার ১৮০ আম চাষির নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও আম পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে আম রফতানির ব্যাপারে বিশ্বের শীর্ষ পণ্য ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল প্রকিউরমেন্ট লজিস্টিকসের সঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, হর্টেক্স ফাউন্ডেশন ও এফএওর একটি চুক্তিও স্বাক্ষর হয়েছে। মোট রফতানি পণ্যের মধ্যে কৃষিজাত পণ্য মাত্র দুই শতাংশ। আশা করা যায়, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তা পাঁচ শতাংশে পরিণত হবে। আম রফতানি এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে আম উৎপাদনে ‘কীটনাশক’ ব্যবহার রোধ করতে পারলে এ মধুফল রফতানি বাড়বে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ইউএসএআইডি-বাংলাদেশ’র পরিচালক (ইকোনমিক গ্রোথ) রামোনা এম ই হ্যামজারি বলেছেন, বিশ্বে প্রতিবছর খাদ্যপণ্য খাতে ৫২০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা রয়েছে। এ খাতে বাংলাদেশের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য থেকে দেখা যায়, গত অর্থবছরে জুলাই মাসে ১ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলারের ফল (আমসহ) রফতানি হয়েছে। যেখানে আগের অর্থবছর জুলাই মাসে রফতানি হয় ১৯ লাখ ৬০ হাজার ডলার। ফরমালিন আতঙ্কে রফতানিতে এমন নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কীটনাশক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ না করলে এ বছরও ফল রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ‘টসটসে’ লিচু ॥ বিশেষণ হিসেবে ‘টসটসে’ কথাটি সবচেয়ে বেশি যায় বোধহয় খাটে লিচুর সঙ্গেই। গ্রীষ্মকালে ‘রূপেগুণে’ অনন্য এই রসালো ফলটির জনপ্রিয়তাও থাকে একদম তুঙ্গে। স্বাদে-গন্ধে তো বটেই সালাদ, জুস, জেলির মতো বিচিত্র রেসিপির উপাদান হিসেবে লিচু পয়লা নম্বরের ফল। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয় এবং মোট উৎপাদন প্রায় ৫০ হাজার টনের বেশি। যা আমাদের চাহিদার মাত্র চার-ভাগের একভাগ পূরণ করে। শুধু পাবনায় প্রতিবছর প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমি থেকে ২৪ থেকে ২৫ হাজার মেট্রিক টন লিচু উৎপাদন হয়, যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। লিচুর জন্য আর এক বিখ্যাত জেলা হলো দিনাজপুর। দিনাজপুরেও প্রায় ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়। ক্রমেই দেশে লিচুর বাণিজ্যিক চাষ বাড়ছে। ফলে মধুমাসে মৌসুমী ফলের বাণিজ্যে লিচু একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৫০ হাজার টন লিচু উৎপাদিত হয়। কৃষক পর্যায়ে প্রতিটন লিচু কেনাবেচা হয় দুই লাখ টাকায়। ফলে ৫০ হাজার টন লিচুর কেনাবেচায় বছরে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। লিচুর উৎপত্তিস্থল চীনের দক্ষিণাঞ্চল বিশেষত কাওয়াংতুং ও ফুবিং প্রদেশ। এখান থেকে ধীরে ধীরে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন সময়ে লিচুর বিস্তার ঘটে। লিচু গন্ধ ও স্বাদের জন্য দেশ-বিদেশ বেশ জনপ্রিয়। বোম্বাই হলো দেশের পুরনো উচ্চ ফলনশীল লিচুর জাত। এছাড়া অন্যান্য জাতের মধ্যে রাজশাহী, মাদ্রাজী, মঙ্গলবাড়ীয়া, কদমী, কালীপুরী, মুজাফফরপুরী, বেদানা এবং চায়না-৩ উল্লেখযোগ্য। পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ কাঁঠাল ॥ খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দে গ্রিক দার্শনিক থিওফ্রাসটাস লিখেছেন, ‘আরেকটি বৃক্ষ রয়েছে, যা অত্যন্ত বড় এবং যার ফল অসাধারণভাবে মিষ্টি। ভারতের বস্ত্রহীন ঋষিরা এই ফল খান।’ সম্ভবত কাঁঠালের কথাই লিখেছিলেন থিওফ্রাসটাস। ফলটির উৎস ভারতবর্ষেই। বাংলাদেশে এটি কাঁঠাল নামে পরিচিত হলেও থাইল্যান্ডে কানুন এবং মালয়েশিয়ায় ফলটির নাম নাংকা। ভারতীয় উপমহাদেশ বিশেষত বাংলাদেশ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে কাঁঠালের উৎপত্তি স্থান হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশ, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণ ভারত, বিহার, মিয়ানমার, মালয়, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি এলাকা ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও এরূপ ব্যাপকসংখ্যায় কাঁঠালের চাষ করতে দেখা যায় না। তবে ব্রাজিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের জ্যামাইকা প্রভৃতি দেশে সীমিত আকারে কাঁঠাল জন্মে। সাধারণত লালচে মাটি ও উঁচু এলাকায় এটি বেশি দেখা যায়। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া কাঁঠাল চাষের জন্য উপযোগী হওয়ার কাঁঠালের ফলন বেশ ভাল হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ভালুকার কাঁঠাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় জেলাতেই সরবরাহ করা হয়। এ বছর ভালুকায় কিছু কিছু এলাকায় কাঁঠালের বাম্পার ফলন হলেও বেশিরভাগ স্থানে ফলন কম হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর প্রায় ১০ লাখ গাছে কাঁঠালের উৎপাদন হয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫০-৬০ কোটি টাকা। হবিরবাড়ী, মলিকবাড়ী, ডাকাতিয়া ও উথুরা ইউনিয়নে বেশি পরিমাণে কাঁঠাল উৎপন্ন হলেও প্রায় সকল ইউনিয়নের গ্রামগুলোতেই কাঁঠাল বাগান রয়েছে। ফলন অন্য বছরের তুলনায় কম হলেও দাম গত বছরের চেয়ে বেশি। আব্দুস ছালাম নামে পাড়াগাঁও গ্রামের কাঁঠালের বেপারি জানান, এবার কাঁঠালের সাইজ বড়। দাম গত বছরের চেয়ে কাঁঠাল প্রতি ২ থেকে ৪ টাকা বেশি। মধুমাসের প্রধান দুই ফল আম ও লিচুর ফলন বাড়লেও দিন দিন উৎপাদন কমছে জাতীয় ফল কাঁঠালের। গত তিন বছরে ফলন কমেছে ৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ। মূলত ফলটির উৎপাদন বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক না হওয়ায় অন্য ফল আবাদে ঝুঁকছেন চাষী। উন্নততর জাত সহজলভ্য না হওয়ার পাশাপাশি ফলটি যথাযথ সংরক্ষণের সুযোগ না থাকা এবং বিপণন ও বাজারজাতকরণে দুর্বলতায় প্রতি বছর প্রায় শতকোটি টাকার কাঁঠাল পচে নষ্ট হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) হিসেবে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে কাঁঠাল উৎপাদন হয় ১০ লাখ ৫ হাজার ১৬৪ টন। পরের বছর উৎপাদন কমে দাঁড়ায় ৯ লাখ ৬১ হাজার ৮২১ টনে। ২০১১-১২ অর্থবছরে ৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৮৬ টন উৎপাদন হলেও ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রায় ৯ লাখ টনে নেমে এসেছে। চলতি বছরও দেশে কাঁঠালের উৎপাদন নয় থেকে ১০ লাখ টনের মধ্যে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে প্রতি টন কাঁঠাল বিক্রি হয় গড়ে ৬ হাজার ২৫০ টাকা করে। অর্থাৎ প্রতি কেজি বিক্রি হয় গড়ে ৬ টাকা ২৫ পয়সা দরে। ফলে নয় লাখ টন কাঁঠাল কেনাবেচায় লেনদেন হয় প্রায় ৫৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর কাঁঠালের উৎপাদন দশ লাখ টন ধরলে এই লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬২৫ কোটি টাকা। তবে শহরে এসে সোয়া ৬ টাকা কেজি দরের এই কাঁঠালই বিক্রি হয় দ্বিগুণ তিনগুণ দামে। ফলে ভোক্তা মার্কেটে এসে এই কাঁঠালের বাণিজ্যও দ্বিগুণ তিনগুণ বেড়ে যায়। দেশে উৎপাদিত কাঁঠালের দুটি পরিচিত জাত ‘গালা’ ও ‘খাজা’। দুটির মাঝামাঝি বৈশিষ্ট্যের ‘রসখাজা’ কাঁঠালও দেশে পাওয়া যায়। এছাড়া রুদ্রাক্ষী, সিঙ্গাপুর, সিলোন, বারোমাসি, গোলাপগন্ধা, চম্পাগন্ধা, পদ্মরাজ, হাজারি প্রভৃতি জাতের কাঁঠাল রয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাজারি কাঁঠাল বাংলাদেশে আছে, বাকিগুলো টিকে আছে ভারতে। দেশে ফলটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এ কারণে প্রতি বছর নষ্ট হচ্ছে বিপুল পরিমাণ কাঁঠাল। আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করতে পারলে এবং সুপার মার্কেটে বিক্রির অনুমতি পেলে ফলটি রফতানি করা সম্ভব বলে মনে করেন বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল এ্যান্ড এ্যালাইড প্রডাক্টস এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। সুপার মার্কেটে অনুমতি না পাওয়ায় বর্তমানে বিভিন্ন এথনিক মার্কেটে কাঁঠাল রফতানি হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, কাঁঠাল আবাদ বাড়াতে এবং সব আবহাওয়ার উপযোগী করতে গবেষণা চলছে। বহুমুখী গুণের অধিকারী ফল কাঁঠাল ব্যবহারোপযোগী করা হচ্ছে না এমন মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নাজমা শাহীন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাঁঠালে বিদ্যমান ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস জটিল রোগ আলসার, ক্যান্সার, উচ্চরক্তচাপ ও বার্ধক্য প্রতিরোধে সক্ষম। এছাড়া এর শক্তিশালী এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দেহকে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যালস থেকে রক্ষা করে। সর্দি-কাশির সংক্রমণ থেকে রক্ষা ও বদহজম ঠেকাতে কাঁঠাল বেশ কার্যকর। গাছটির শিকড় চর্মরোগের সমস্যা ও হাঁপানি উপশমে কার্যকর। ফলটিতে বিদ্যমান ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম হাড় ও মাড়ি শক্তিশালীকরণে ভূমিকা রাখে। ৫৬ হাজার বর্গমাইলে ৬২ প্রকারের ফল ॥ মধুমাসের ফলের বাণিজ্য থেকে জাম, জামরুল, পেয়ারা কোন ফলই বাদ যায় না। রসে ভরা জাম কথা। দেখেই মন ভরে যায়। খেয়েও ভরে উঠে মন। আমাদের দেশে দুই জাতের জাম পাওয়া যায়। ক্ষুদি জাম ও মহিষে জাম। আবার মধুমাসের ছোট ও মাঝারি আকারের পেয়ারা সবার কাছেই বেশ জনপ্রিয়। পেয়ারা সাধারণত সবুজ রঙের হলেও অন্য রঙের পেয়ারাও দেখা যায়। বর্তমানে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির পেয়ারা চাষ হচ্ছে আমাদের দেশে। প্রাচ্যের আপেল বলে খ্যাত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ পেয়ারা মধুমাসের শেষের দিকে এসে বাজার দখল করে রাখে। এছাড়া কলা, আনারস, পেঁপে, লেবু জাতীয় ফল ও আমড়ার কদরইবা কম কিসের! ফলের এই তালিকায় স্থান পেয়েছে ৬২ প্রকারের ফল। মাত্র ৫৬ হাজার বর্গমাইল পরিমিত স্থানে যে অন্ততপক্ষে ৬২ প্রকারের ফলের উপস্থিতি, এটি বিশ্বাস করা কঠিন। প্রায় ২৩ গুণ বড় আয়তন বিশিষ্ট যে ভারত-রাষ্ট্র সেখানে রয়েছে প্রায় ৬৪ প্রকারের ফল। জলবায়ুগতভাবে বৈচিত্র্যময় ওই দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের যে এমন নেক-এ্যান্ড- নেক তথা সমান সমান বা পাশাপাশি অবস্থান, এটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। সাম্প্রতিককালে এদেশে ফলের উৎপাদন ধীরগতিতে বাড়ছে। ইদানীং কিছু বিদেশী ফলের আবাদও বাংলাদেশে হচ্ছে। তবে চাহিদার তুলনায় ফলের মোট সরবরাহ এখানে অপ্রতুল। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য দৈনিক মাথাপিছু কমপক্ষে ৮৫ গ্রাম ফল খাওয়া প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে আমাদের দৈনিক গড় প্রাপ্যতা হচ্ছে মাত্র ৩৫ গ্রাম। বাংলাদেশে ফলের উৎপাদন মৌসুমভিত্তিক। অধিকাংশ ফলেরই উৎপাদন হয় মধু মাসে। বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে দেশের মোট ফল উৎপাদনের শতকরা ৫৪ ভাগই উৎপাদিত ও বাজারজাত করা হয়। বাকি শতকরা ৪৬ ভাগ ফলের উৎপাদন হয় অবশিষ্ট ৮ মাসে। মধুমাসে উৎপাদিত ফলগুলোর মধ্যে আম, কাঁঠাল, লিচু ও আনারস অন্যতম। বছরের অন্য সময় উৎপাদিত ফলগুলোর মধ্যে আছে কুল, আমড়া, আমলকী, বেল, সফেদা, জলপাই, ডালিম, কামরাঙ্গা ইত্যাদি। পেঁপে ও কলা সারাবছরই উৎপাদিত হয়। অন্যান্য ফলের উৎপাদন যাতে বছরের বিভিন্ন সময়ে নিশ্চিত করা সম্ভবপর হয় সে জন্য গবেষণা প্রয়োজন। মিশ্র ফল বাগান সৃষ্টি করেও সারাবছর ফলজ পুষ্টি সরবরাহ করা সম্ভব। এ দেশে সাধারণত ৯টি প্রধান ও ৪৮টি অপ্রধান ফলের উৎপাদন লক্ষ্য করা যায়। এদের চাষাধীন জমির পরিমাণ ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫৩৫ হেক্টর। মোট উৎপাদন ৪৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৪৫ মেট্রিক টন। প্রধান ফলগুলোর মধ্যে আম, কলা, কাঁঠাল, আনারস, পেঁপে, লিচু ও কুল প্রায় শতকরা ৭৯ ভাগ জমি দখল করে রয়েছে। অবশিষ্ট শতকরা ২১ ভাগ জমিতে হয় অপ্রধান ফলগুলোর চাষ। বাংলাদেশের মৌসুমী ফল ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং ওমানে রফতানি হচ্ছে। রফতানিকৃত ফলগুলোর মধ্যে আছে কাঁঠাল, বাতাবি লেবু, কুল, সাতকরা, আম, আমড়া, সুপারি, জলপাই ও পেয়ারা। দিনের পর দিন বিদেশে এগুলোর চাহিদা বাড়ছে। আগামী দিনে, চীন, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম এবং নেদারল্যান্ডসসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে বাংলাদেশী ফল রফতানির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। ফল সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজার জাতকরণ আমাদের আর একটি প্রধান সমস্যা। ফলের উৎপাদন মৌসুমভিত্তিক বলে কৃষকরা এর ন্যায্য দাম পায় না। অনেক সময় উৎপাদকগণ বিক্রয় মূল্যের অর্ধেক দামও পায় না। কয়েক হাত বদলের মাধ্যমে ফল ভোক্তার হাতে পৌঁছায় বলে ভোক্তা প্রদত্ত দামের প্রায় অর্ধেকের বেশি নিয়ে যায় মধ্যস্বত্বভোগী। উপযুক্ত সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের অভাবে শতকরা প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ ফল পচে নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য ফলের ভর মৌসুমে বিশেষ করে মধুমাসে বিদেশ থেকে ফল আমদানির ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষণ নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে ফল সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকে উৎসাহিত করতে হবে। বাংলাদেশে বর্তমানে ৬৩০টি নিবন্ধীকৃত খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প রয়েছে, যার মধ্যে ৩০টি প্রতিষ্ঠান ফল থেকে জ্যাম, জেলি, স্কোয়াশ, ফলের রস, আচার, চাটনি, সস, ক্যান্ড আনারস, সøাইসড ও ক্যান্ড আমের পাল্প ইত্যাদি উৎপাদন করছে। এদের কিছু পণ্য বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। এ ধরনের শিল্পের সম্প্রসারণ প্রয়োজন। অধিকন্তু কৃষকের উৎপাদিত ফল অভ্যন্তরীণভাবে বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিবহন ও হিমায়িত সংরক্ষণের ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করতে হবে। তাছাড়া গাছ থেকে ফল সংগ্রহ ও প্যাকিং-এর ক্ষেত্রেও অনেক সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১.৪৪ লাখ হেক্টর জমি থেকে প্রায় ২২ লাখ টন ফল উৎপাদন হয়। অথচ দরকার প্রায় ৬৭.০ লাখ মেঃটন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফলের প্রাপ্তির পরিমাণ ও উৎপাদন বাড়াতে হবে। বাংলাদেশে যে সব ফল উৎপাদন হয় তার মধ্যে কলা, আম, কাঁঠাল, নারিকেল, পেঁয়ারা, আনারস ও তরমুজ সাতটি ফলের উৎপাদন ১৭.৫ লাখ মেঃটন, যা মোট উৎপাদনের শতকরা ৮০ ভাগ।
×