ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষমতার দম্ভে-

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১৫ জুন ২০১৫

ক্ষমতার দম্ভে-

রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক প্রভাব ও ক্ষমতার দম্ভ অনেক সময় সাধারণ নাগরিকের জন্য দুর্যোগ বয়ে আনে। একজন মানুষ হিসেবে অপর মানুষের প্রতি মানবিকতাবোধ থাকাটাই স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক হলো ধরাকে সরা জ্ঞান করে মানুষের সঙ্গে গর্হিত আচরণ। যুবক বখতিয়ার আলম রনি যা করেছেন তা আরও বড় কিছু। রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে ১৩ এপ্রিল মধ্যরাতে গাড়ি থেকে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়েছেন, সেই গুলিতে নিহত হন দু’জন। এ দু’জনের একজন হলেন দৈনিক জনকণ্ঠের অটোরিক্সাচালক ইয়াকুব আলী, অপরজন রিক্সাচালক হাকিম। ঘটনার মাসদেড়েক পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতারে সমর্থ হয়। রিমান্ডে নেয়ার পর রনি স্বীকার করেছেন গুলি ছোড়ার সময় তিনি নেশাগ্রস্ত ছিলেন। তার গাড়িচালকের জবানবন্দীতেও বিষয়টির সত্যতা উঠে এসেছে। লাইসেন্স করা পিস্তল থেকেই রনি গুলি করেন। তিনি রাজনীতিবিদ নন কিংবা প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি বা ব্যবসায়ীও নন। তাই আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার নেপথ্যে যে সাংসদ মায়েরই প্রভাব কাজ করেছে তা এখন পরিষ্কার। যানজটে বিরক্ত হয়ে যে গাড়ি থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন রনি, সে গাড়িটি তার মায়ের। অপরাধের জন্য কেবল অপরাধীই দায়ী হন, তার কোন নিকটাত্মীয় নয়। কিন্তু একাধিক কারণে রনির মায়ের নাম বিভিন্ন মহলে উচ্চারিত হচ্ছে। তিনি ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী এক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। প্রথমত রনির পিস্তল কেনার বিষয়টি এখন প্রশ্নবিদ্ধ। দ্বিতীয়ত তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার পরিচয় রাখতে পারেননি। অপরাধীকে শনাক্ত করতে গোয়েন্দাদের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। তৃতীয়ত পুলিশের হেফাজতে রনি তার মা সাংসদ বলে দম্ভ দেখান। তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ যেসব কথাবার্তা গণমাধ্যমে এসেছে তা পড়ে শঙ্কিত হতে হয়। তিনি বলেন, ‘আমার মায়ের হাত লম্বা, পুলিশের সামনে যা স্বীকার করেছি, আদালতে তা বলব না।’ আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান, এখানে ছাড় দেয়া কিংবা বিরাগবশত চরম পদক্ষেপ নেয়া- দুটোরই কোন সুযোগ নেই। যে যতখানি অন্যায় করবে তার সাজা আইনসম্মতভাবে ততটুকুই নির্ধারিত। একজন মদ্যপ উচ্ছৃঙ্খল নাগরিকের বংশ পরিচয় যাই হোক না কেন, সেটি বিবেচ্য হতে পারে না। অভিযুক্ত কেন, ক্ষমতার প্রভাব বলয়ে থাকা কারোরই অপরাধ করে আইনের আওতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। অপরাধীকে তার প্রাপ্য সাজা পেতেই হবে। অথচ সমাজের প্রভাবশালী ও ক্ষমতা বলয়ের মধ্যে থাকা অনেকেই আইন লঙ্ঘনের মানসিকতা লালন করে থাকেন। হত্যাকারীর কাছ থেকে নিহতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ের আইনসম্মত পথ আছে কিনা সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই তা ভেবে দেখবেন। এই ঘটনায় ন্যায়বিচার পাওয়া গেলে জনমনে এমন ধারণা দৃঢ় হবে যে, দেশে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে। এখানে ক্ষমতাসীনদের কারও অপরাধ করে পার পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এ ঘটনাটির সঠিক বিচার হলে, সরকারেরও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।
×