ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কক্সবাজারে বিজিবি-বিজিপি পতাকা বৈঠকে ঐকমত্য

মানবপাচারসহ অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধে কাজ করবে বাংলাদেশ-মিয়ানমার

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৫ জুন ২০১৫

মানবপাচারসহ অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধে কাজ করবে বাংলাদেশ-মিয়ানমার

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে বান্দরবান পর্যন্ত বিস্তৃত বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত ও নাফ নদী এবং সাগরপথে মানবপাচার, মাদকসহ বিভিন্ন পণ্যের চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও বিভিন্ন সময়ে গুলিবর্ষণের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে মতৈক্য হয়েছে। রবিবার সৈকত নগরী কক্সবাজারে বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) ও মিয়ানমারের বিজিপি (বর্ডার গার্ড পুলিশ) এর রিজিওন কমান্ডার পর্যায়ে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকে এ মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিজিবির পক্ষে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দক্ষিণ পূর্ব রিজিওন কমান্ডার ও বিজিবি অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ হাবিবুল করিম। পক্ষান্তরে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষীদল বিজিপির সতের সদস্য প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সে দেশের মংডু রিজিওনের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থিন কো কো। রবিবার সকালে শহরের কলাতলী এলাকার হোটেল ওশান প্যারাডাইসে পতাকা বৈঠক চলে প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ২টা এবং মাঝপথে বিরতি দিয়ে পুনরায় ৩টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ পতাকা বৈঠক শেষে যৌথ প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। এতে জানানো হয়, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে মানবপাচার, মাদকসহ বিভিন্ন পণ্যের চোরাচালান অবৈধ অনুপ্রবেশ, গোলাগুলির ঘটনা এবং মিয়ানমারে উদ্ধারকৃত মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসী প্রত্যাশীদের বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠানো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তবে এ বৈঠকে মিয়ানমার থেকে বৈধ ও অবৈধভাবে বাংলাদেশে থাকা মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি বলে বিজিবি সূত্রে জানানো হয়েছে। এছাড়া বৈঠকে দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে নিয়মিত পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠানের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। যৌথ সংবাদ ব্রিফিংয়ে দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে সীমান্তে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে উভয় দেশের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখা নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। এছাড়াও পতাকা বৈঠকে ভবিষ্যতে সীমান্ত সংক্রান্ত যে কোন সমস্যাদিসহ দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণে একমত পোষণ করা হয়। এসব বিষয়ে দু’দেশ একসঙ্গে কাজ করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর আগে রবিবার সকাল সাড়ে ৮টায় মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল সে দেশের ঢেঁকিবুনিয়া পয়েন্ট হয়ে উখিয়ার ঘুনধুম সীমান্ত পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করলে বিজিবির পক্ষে তাদের অভ্যর্থনা জানানো হয়। পরে ঘুনধুম থেকে বিজিবির গাড়ি বহর দিয়ে কক্সবাজার শহরে নিয়ে আসা হয়। হোটেল ওশান প্যারাডাইসে কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর সকাল সাড়ে ১০টায় বৈঠকের সূচনা ঘটে। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত প্রথম দফায় বৈঠক চলে। এরপর বিরতি শেষে আবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত পুনঃবৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কক্সবাজার বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোঃ খালেকুজ্জামান জানান, সমুদ্রে ভাসমান অবৈধ অভিবাসীদের উদ্ধার, মাদক চোরাচালান ও অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধসহ দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। বৈঠক শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মিয়ানমার প্রতিনিধি দল কক্সবাজার ত্যাগ করেন। বিজিবি সদস্যরা এ প্রতিনিধি দলকে ঘুনধুম সীমান্তে পৌঁছে দেয়। কক্সবাজারে আরও ২২ দালাল চিহ্নিত ও গ্রেফতার ২ ॥ কক্সবাজার অঞ্চলে মানবপাচারের অবৈধ কাজে জড়িত থাকার আরও ২২ দালালকে চিহ্নিত করা হয়েছে। মিয়ানমার থেকে যেসব বাংলাদেশী ফেরত এসেছে এদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ এসব দালালদের নাম উদ্ধার করেছে। এরা কক্সবাজারসহ দেশের সতের জেলার বাসিন্দা। উল্লেখ্য, কক্সবাজার পুলিশ এ পর্যন্ত মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত ২২ গডফাদারের নাম পেয়েছে। এছাড়া দালালের নাম এসেছে দু’শতাধিক। এসব গডফাদার ও দালালদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে বলে পুলিশ জানায়। এদিকে, রবিবার আরও ২ দালাল গ্রেফতার হয়েছে। এদের মধ্যে টেকনাফ পুলিশ হারুন নামের একজনকে এবং কক্সবাজার গোয়েন্দা পুলিশ রামু থেকে বশির উল্লাহ নামের একজনকে গ্রেফতার করেছে। গডফাদার শামসুল উখিয়ায় শ্যোন এরেস্ট ॥ গত শনিবার চট্টগ্রামের একটি হোটেল থেকে শীর্ষ মানবপাচারকারী হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লিস্টেড উখিয়ার শামসুল আলম সোহাগকে উখিয়া থানা পুলিশ সেখানকার একটি মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখিয়েছে। এছাড়া শামসুল আলমকে সিএমপির কোতোয়ালি থানার পক্ষ থেকে ৫ দিনের যে রিমান্ড আবেদন জানানো হয় এর শুনানির জন্য আজ সোমবার দিন ধার্য করেছে আদালত। উখিয়ার যুবদলের সহ-সভাপতি মানবপাচারের শীর্ষস্থানীয় গডফাদার শামসুল আলম সোহাগ ও সিন্ডিকেট সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে সাগরপথে মানবপাচার করে আসছিল। মোবিক্যাশ সিস্টেমে মিয়ানমারে অর্থ পাচার ॥ এদিকে, বিভিন্ন দেশীয় বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে যে মোবিক্যাশ সিস্টেম চালু হয়েছে এতে করে প্রতিমাসে বাংলাদেশ থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অর্থ পাচারের এ ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে মানবপাচার ও মাদকসহ চোরাচালানের অর্থের লেনদেন। টেকনাফে দেশীয় বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের প্রদত্ত সিম কার্ডের মাধ্যমে এ অর্থ পাচার করছে পাচারকারীরা। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে প্রায় লক্ষাধিক মোবাইল সংযোগ (সিমকার্ড) অবৈধভাবে ব্যবহার করছে সেদেশের নাগরিকরা। এতে তারা ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে অনায়াসে দেশের গোপন তথ্য পাচারের পাশাপাশি ইয়াবা, মানবপাচার চোরাচালানসহ বিপুল পরিমাণ অর্থের অবৈধ লেনদেন করছে। এদিকে, মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি বাংলাদেশের সব মোবাইল ফোন কোম্পানির টাওয়ার সরিয়ে নিতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয়া এবং জরুরিভিত্তিতে নেটওয়ার্কের ফ্রিকোয়েন্সি কমিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করা হয়েছে জেনে নানা জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। ওই চিঠিতে নেটওয়ার্কের ফ্রিকোয়েন্সি কমিয়ে শুধু বাংলাদেশ ভূখ-ে সীমিত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
×