ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুনতাসীর মামুনকে নিয়ে ফেসবুকে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৫ জুন ২০১৫

মুনতাসীর মামুনকে নিয়ে ফেসবুকে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ কলামিস্ট মুনতাসীর মামুনকে নিয়ে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। বিভিন্ন ফেসবুক লিংকে বলা হচ্ছে বেসরকারী স্যাটেলাইট চ্যানেল দেশ টিভিতে ‘ধর্ম ও রাজনীতি’ টকশোতে তিনি ইসলাম ধর্মকে কটাক্ষ করে বক্তব্য রেখেছেন। যদিও টকশোর কথা বলে এই বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে এই নামে দেশটিভিতে কখনও কোন টকশো হয়নি। এমনকি গত প্রায় এক বছর দেশটিভির কোন টকশোতেই মুনতাসীর মামুন অংশ নেননি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরের পর রাজনীতিতে নতুন কোন ইস্যু নেই। সঙ্গত কারণেই ধর্মীয় উস্কানির মাধ্যমে একটি পক্ষ জঙ্গীদের ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগে দেশটিভি এবং ভোরের কাগজে দুই দফা হামলা হয়েছে। এজন্য মুনতাসীর মামুনের সঙ্গে দেশটিভিকেও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মুনতাসীর মামুন দেশের প্রগতিশীল সকল আন্দোলনে নেতৃত্বের অগ্রভাগের মানুষ। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে বহুবছরের আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এসব বিষয়ে বহু লেখালেখিও করেছেন। দেশের এই ইতিহাসবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। কিন্তু কখনই ধর্মকে অবমাননা করে তিনি কিছু লেখেননি অথবা ধর্ম নিয়ে কোন বক্তব্যও দেননি। সঙ্গতকারণে জামায়াত শিবিরের প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকা অনেককেই হত্যার হুমকি দিয়েছে জঙ্গী সংগঠন। ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া মিঠাপুকুর নিউজ ২৪ নামের একটি লিঙ্কে গিয়ে দেখা গেছে বলা হচ্ছে ‘ইসলাম ধর্ম যেমন একটা ভ-ামি তেমনি বঙ্গ ভবনে আরবি সুরা লিখে রাখাটাও একটা ভন্ডামি’ এই শিরনামের পর মুনতাসীর মামুনের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু এখানে মানতাছের মামুন লেখা হয়েছে যদিও নামের বানান তিনি ব্যবহার করেন না। এখানে বক্তব্যর কোন লিঙ্কও (ভিডিও ক্লিপ) পাওয়া যায়নি। খোঁজ করে জানা গেছে মিঠাপুকুর নিউজ ২৪ নামে কোন সংবাদ পোর্টাল নেই। এটি একটি ফেসবুক পেজ। এখানে বিভিন্ন ধরনের সংবাদ শেয়ার করা হয়। জানা গেছে মিঠাপুকুর থেকেই এই ধরনের তিনটি ফেসবুক পেজ পরিচালনা করেন তিনজন ব্যক্তি। এরমধ্যে মুজাহিদুল ইসলাম নামে স্থানীয় বিএনপির এক কর্মী এই ফেসবুক পেজটি পরিচালনা করেন। যেখানে মুনতাসীর মামুনকে জড়িয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ওই পেজে মিঠাপুকুরে জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎবার্ষিকী পালনের খবরও রয়েছে। এই ফেসবুক পেজের পরিচালক মুজাহিদুল ইসলামের ব্যক্তিগত ফোন নম্বর (০১৭২২-৮৮৯৭৭৯) তে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। জানতে চাইলে দেশটিভির বার্তা প্রধান সুকান্ত গুপ্ত অলক জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের টেলিভিশনে এ ধরনের কোন টকশোই কোন দিন হয়নি। এমনকি অন্যকোন টকশোতে এসেও মুনতাসীর মামুন ধর্ম নিয়ে কোন বক্তব্য রাখেননি। তিনি বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে তিনি দেশ টিভির কোন টকশোতে অতিথি হিসেবে আসেননি। কারণ আমাদের টকশো হয় রাত পৌনে ১২টায়। মুনতাসীর মামুন রাত ১০টার পর কোন টকশোতে যান না বলেই আমরা জানি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে মিঠাপুকুরের এই খবরটি গত দুই দিন ধরেই ছড়ানো হচ্ছে। খোঁজ করে দেখা গেছে সেখান থেকে ‘নাস্তিক দমন কমিশন’ () ‘বাংলার চোখ’ () ‘ইসলাম ও জীবন’ ( ইসলাম ও জীবন), মিঠাপুকুর নিউজ টুয়ান্টিফোর (), ‘বেয়াদব বড় হলে আওয়ামী লীগ হয়’ (যঃঃঢ়ং://িি.িভধপবনড়ড়শ.পড়স/হধংঃরশইঝ)সহ প্রায় অর্ধ শতাধিক ফেসবুক পেজে উল্লিখিত লেখাসহ পোস্ট শেয়ার হয়েছে। গত দুই থেকে তিন দিন ধরে এই পোস্টগুলো ফেসবুকে ছড়াচ্ছে। এসব পোস্টে মুনতাসীর মামুনকে ‘ইসলামকে কটাক্ষকারী জানোয়ার’ উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে মুসলমানদের জাগ্রত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বিষয়টি নজরে এনে মুনতাসীর মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টিকে তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে জনকণ্ঠকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির পক্ষে এবং যুদ্ধাপরাধ, জঙ্গীবাদ ও মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে কথা বলায় যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধী জঙ্গীবাদী গোষ্ঠী আমার বিরুদ্ধে সুকৌশলে অপপ্রচার ছড়াচ্ছে বলে আমার বিশ্বাস।’ তিনি জনকণ্ঠকে আরও বলেন, ‘আমি নিকট অতীতে দেশ টিভিতে কোন টকশোতে যাইনি। আর আমি সাধারণত রাত ১০টার পরে কোন টক শোতে যাই না। দেশটিভির ওই টক শো প্রোগ্রাম হয় রাত ১১.৪৫-এ। কেবল যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়ে আলোচনা হলে আমি টক শোতে যাই। আমার বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার অনলাইনে ছড়ানো হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ বানোয়াট, অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাছাড়া, ইসলাম অবমাননা তো দূরে কথা আমি ব্যক্তিগতভাবে কারও কোন প্রকার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার পক্ষপাতী নই। আমি নিজেও ২০১২ সালে হজ পালন করেছি।’
×