ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘জঙ্গী নেত্রীকে রাজনৈতিক মুখোশ পরিয়ে নেতা বানানোও দুর্নীতি’

এমপিপুত্র বা মন্ত্রীপুত্র অপরাধে জড়ালে ছাড় পাবে না ॥ ইনু

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৫ জুন ২০১৫

এমপিপুত্র বা মন্ত্রীপুত্র অপরাধে জড়ালে ছাড় পাবে না ॥ ইনু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের গণমাধ্যম ও দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতিবাজদের দেখেও না দেখার ভান করে বলে অভিযোগ করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক দুর্নীতির কারণে খুনী ও জঙ্গী নেত্রীকে রাজনৈতিক মুখোশ পরিয়ে নেতা বলা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে সরাসরি লেনদেন এবং মুখ দেখে, দল দেখে ছাড় দেয়া এ দু’টি অভিযোগ দুদক ও গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে রয়েছে। এটা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। এ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তা না হলে দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব নয়। রবিবার রাজধানীর বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট ভবনে ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যম পুরস্কার-২০১৫’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলে। অনুষ্ঠানে চার সংবাদকর্মীকে দুর্নীতি বিরোধী প্রতিবেদন প্রকাশের জন্যে পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেয়া হয়। দুদক ও পিআইবির যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানটির সহযোগিতায় ছিল ঢাবি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং জিআইজেড। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যমের অতি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হচ্ছে দুর্নীতি। পত্রিকার পাতায় প্রতিদিনই কোন না কোন দুর্নীতিবিরোধী রিপোর্ট থাকছে। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বর্তমানে ছিটেফোঁটা হলেও বলার চেষ্টা করছে। দুর্নীতিবিরোধী কর্মকা-ে দীর্ঘ ঐতিহ্যের কারণেই প্রিন্ট মিডিয়ার ভূমিকা প্রশংসনীয়। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের নিষ্ক্রিয়তার কারণে অনেক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকে না। প্রয়োজনীয় প্রহরী সংস্থা, গণমাধ্যমের সক্রিয়তা ও স্বাধীনতার মধ্যে দিয়ে দুর্নীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব। প্রশাসনের দুর্নীতি ধরার জন্যে সংবাদকর্মীদের আরও দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। গণমাধ্যম যদি দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে লেনদেনের সম্পর্ক তৈরি করে তাহলে তা সমাজের জন্যে অমঙ্গলজনক। গণমাধ্যমের সততার ওপর সমাজ টিকে থাকা নির্ভর করে। তাই সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে সরাসরি লেনদেন এবং মুখ দেখে, দল দেখে ছাড় দেয়া এ দু’টি অভিযোগ দুদক ও গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে রয়েছে। এটা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। এ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। নাহলে দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব নয়। মন্ত্রী বলেন, এ অভিযোগ শুধু দুদক বা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধেই নয়। একইভাবে নজরদারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগকারী ব্যক্তিরাও দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে সরাসরি লেনদেন অথবা মুখ দেখে, দল দেখে দুর্নীতিবাজদের ছাড় দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত। এটা কাম্য হতে পারে না। ইনু বলেন, একজন এমপি পুত্র প্রকাশ্যে গুলি করবে, এক্ষেত্রে কোন ছাড় দেয়া চলবে না। এর কোন ছাড় হতে পারে না। এর মাফ নেই। অপরাধ বা দুর্নীতির সঙ্গে এমপিপুত্র বা মন্ত্রীপুত্র যেই জড়িয়ে পড়ুক না কেন তাকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। সমাজ ব্যবস্থায় বুদ্ধিভিত্তিক ও রাজনৈতিক দুর্নীতি রয়েছে উল্লেখ করে ইনু বলেন, আপনি বুদ্ধির চর্চা করেন, অথচ জেনেশুনে রাজাকারদের সমর্থন করছেন, একজন খুনী ও জঙ্গীকে রাজনৈতিক মুখোশ পরিয়ে তাদের নেতা বলছেন। এটা বুদ্ধিভিত্তিক ও রাজনৈতিক দুর্নীতি। যুদ্ধাপরাধী ও তালেবানী দলকে গণতান্ত্রিক দল হিসেবে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টাও বুদ্ধিভিত্তিক দুর্নীতির অংশ। জামায়াতে ইসলামী জঙ্গী পোষে এটা বলতে হবে। কেবলমাত্র প্রশাসনের দুর্নীতির পেছনে ছুটবেন, রাজনৈতিক দুর্নীতি দেখেও না দেখার ভান করবেন-তা হতে পারে না। দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, সমাজের সকলের অংশগ্রহণে দুর্নীতি প্রতিরোধের মূল ভূমিকা হচ্ছে গণমাধ্যমের। আমরা গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে পারি। দুর্নীতির উৎসমূল প্রতিরোধ করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ করতে হবে। দেশের স্কুলগুলোয় ২২ হাজার সততা সংঘ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, দুর্নীতি প্রতিরোধে স্কুল শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে আমরা এ পদক্ষেপ নিয়েছি। বিশেষত তরুণ প্রজন্মকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে হবে। যে কোন মূল্যে দুর্নীতির অবক্ষয় থেকে তাদের ঠেকাতে হবে। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট ও দুর্নীতি দমন কমিশনের যৌথ উদ্যোগে প্রবর্তিত দুর্নীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যম পুরস্কার-২০১৫ পান চার সাংবাদিক। তারা হলেন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ক্যাটাগরিতে দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার মুজিব মাসুদ, আঞ্চলিক সংবাদপত্র ক্যাটাগরিতে যশোরের দৈনিক গ্রামের কাগজ পত্রিকার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার ফয়সল ইসলাম, টেলিভিশন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন চ্যানেল ২৪-এর শামীমা সুলতানা ও টেলিভিশন ক্যামেরাপার্সন ক্যাটাগরিতে মাছরাঙা টেলিভিশনের কামরুজ্জামান ফিরোজ। অনুষ্ঠানে দৈনিক সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার সভাপতিত্ব করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মর্তুজা আহমেদ, পিআইবির মহাপরিচালক শাহ আলমগীর ও ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত।
×