স্টাফ রিপোর্টার ॥ নারী অধিকার মানবাধিকার, আর নারী নির্যাতন মানবাধিকার লঙ্ঘন। এটা এখন নারী আন্দোলনের একার বিষয় নয়, এ আন্দোলন এখন গোটা রাষ্ট্রের। তাই এ কঠিন লড়াইয়ে আমরা সবাইকে পাশে পেতে চাই বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ বাস্তবায়ন বিষয়ে প্যানেল আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম। শনিবার সকাল দশটায় সেগুনবাগিচায় মহিলা পরিষদ কার্যালয়ে এ মতবিনিময় সভা হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারীর মানবাধিকার রক্ষার জন্য এবং মানবিক, গণতান্ত্রিক সমতাপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলার জন্য চার দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে, যা স্রোতের উল্টো দিকের কাজ। প্রতিটি মানুষ জন্মগ্রহণ করে মানুষ হিসেবে। কিন্তু সমাজ ধর্ম আইন ও প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা দিয়ে নারীকে অর্ধেক মানুষ হিসেবে রাখা হয়। আর তাই নারীর এ অবস্থান থেকে মুক্তির লক্ষ্যে বিশেষ একটি লেন্স দিয়ে আমরা সমাজ দেখি আর তা হচ্ছে জেন্ডার লেন্স। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের মূল কাজের একটি অপরিহার্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে আইনী সহায়তা দেয়া। নারীর সচেতনতা বৃদ্ধি করে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক দার্শনিক, ধর্মীয় প্রথা, মনস্তত্ত্ব এতকিছুর বিরুদ্ধে কাজ করতে হচ্ছে, আন্দোলন করতে হয়েছে পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে। এই সমাজ নারীকে অর্ধেক মানব হিসেবে চিন্তা করে, নারীকে পূর্ণ মানব হিসেবে দেখে না। ইঞ্চি ইঞ্চি করে আমাদের এই আন্দোলনে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। আমরা বাধা পাচ্ছি এবং বাধা পার হয়ে কাজ করছি। আইনের চোখে সবাই সমান। আর তাই নারীর মানবাধিকার এবং আইনের সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বক্তব্যের শেষে সভায় উপস্থিত আইনজীবীসহ সকলকে একসঙ্গে নিয়ে নারী নির্যাতন প্রতিরোধের আহ্বান জানান। সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্যানেল আইনজীবী জেয়াদ আল মালুম বলেন, সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণা, সিডও সনদের ঘোষণা, বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকার, শিশু অধিকার ঘোষণা নিয়ে এই আইনটি বাংলাদেশে করা হয়েছে পারিবারিকভাবে সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষ্যে। এর উদ্দশ্য হচ্ছে আমাদের পারিবারিক ব্যবস্থার গঠন ও কাঠামোর মধ্যে থেকে পরিবারকে অক্ষুণœ রেখে নারীর অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ শুরু থেকে এই আইনের ড্রাফট করার সঙ্গে জড়িত। আমাদের পরিবার ব্যবস্থা যদি সুখী না হয় তাহলে সমাজে উন্নতি হবে না। বাংলাদেশে এ আইন করার প্রয়োজনীয়তা বহুবার বহুভাবে হয়েছে। একে প্রচার করতে হবে এবং পারিবারিক আদালতকে এগিয়ে নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এ আইন প্রয়োগ না হলে বোঝা যাবে না এখানে কি কি সীমাবদ্ধতা ও জটিলতা আছে। মহিলা পরিষদের প্যানেল আইনজীবী হয়ে আমরা সামাজিক দায়িত্ব পালন করছি, কাজেই সকলে মিলে এ আইনের প্রচার ও বাস্তবায়নের জন্য কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন ২০১০ বিষয়ে তিনি বলেন, এ আইনে শাস্তির কোন ব্যবস্থা নেই।