ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীতে গণধর্ষণের শিকার এবার নারী পুলিশ!

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ১৪ জুন ২০১৫

রাজধানীতে গণধর্ষণের শিকার এবার নারী পুলিশ!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়ার একটি বাসায় এক নারী পুলিশ সদস্য গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সাবেক স্বামীসহ তার তিনবন্ধু মিলে ধর্ষণের এ ঘটনাটি ঘটায় বলে ওই মহিলা পুলিশ ও তার পরিবারের অভিযোগ। নারী পুলিশ সদস্যকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়েছে। ধর্ষণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। আজ ওই নারী পুলিশ সদস্যের ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হতে ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে। ধর্ষণ বিষয়ে ওই মহিলা পুলিশ থানায় মামলা করতে গেলেও খিলগাঁও থানা পুলিশ মামলা নেয়নি। শনিবার বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিলে খিলগাঁও থানা পুলিশ ওই মহিলা পুলিশের জবানবন্দী গ্রহণ করতে যায়। সে সময় উত্তেজিত হয়ে ওই মহিলা পুলিশ জবানবন্দী নিতে যাওয়া পুলিশ সদস্যদের ওপর চড়াও হন। যদিও বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। জবানবন্দী নিতে যাওয়া এক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে তার ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। গত ১০ জুন বুধবার রাতে খিলগাঁও থানাধীন তিলপাপাড়ার একটি বাসায় গণধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে বলে ওই নারী পুলিশ সদস্যের দাবি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে তিনি ওই বাড়ি থেকে কৌশলে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। ওঠেন খিলগাঁও এক আত্মীয়ের বাসায়। এরপর তিনি খিলগাঁও থানায় মামলা দায়ের করতে যান। কিন্তু থানা মামলা নেয়নি। পরে তিনি শুক্রবার রাজারবাগ পুলিশ হাসাপাতালে ভর্তি হন। সেখান থেকেই শনিবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি হন। ওই নারী পুলিশ পরে হাসপাতালে সাংবাদিকদের ঘটনাটি জানান। রীতিমত হইচই শুরু হয়। ওই নারী পুলিশ সদস্যের ভাই নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে বলেন, তাদের বাড়ি গাজীপুর জেলায়। তারা চার ভাই ছয় বোন। ঘটনার শিকার হওয়া বোন ভাইবোনদের মধ্যে ষষ্ঠ। প্রায় নয় বছর আগে সে বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টেবল পদে যোগদান করে। বর্তমানে ডিএমপির তুরাগ থানায় কনস্টেবল পদে কর্মরত। এরআগে তিনি রাজারবাগ পুলিশ লাইনে কর্মরত ছিলেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি (ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার) সূত্রে জানা গেছে, কনস্টেবল পদে চাকরিকালীন তার পরিচয় হয় আরেক কনস্টেবল কালিমুর রহমানের সঙ্গে। পরিচয় থেকে প্রেম। দীর্ঘদিন প্রেমের পর ২০১১ সালে কালিমুর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের আগে কালিমুর কনস্টেবল থেকে সহকারী উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) হিসেবে পদোন্নতি পান। পদোন্নতির পরেই কালিমুর রহমান বিয়ে করেন। বিয়ের সময় কালিমুর খিলগাঁও থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি রাজধানীর উত্তরা এসপিবিএনে (স্পেশাল প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন) কর্মরত। তাদের সংসারে মাইশা রহমান নামে আড়াই বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। কর্মজীবনে একে অপরকে সন্দেহ করার সূত্রধরে পারিবারিক অশান্তি শুরু হয়। এর জেরধরে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। দু’জনই আলাদা বসবাস করে। সম্প্রতি তাদের মধ্যে নতুন করে সংসার করার ইচ্ছে জাগে। দু’জনের যোগাযোগ বাড়তে থাকে। বিষয়টি ওই নারী পুলিশের কর্মস্থল তুরাগ থানার উর্ধতন কর্মকর্তা এবং ওই নারীর সাবেক স্বামীর সাবেক কর্মস্থল খিলগাঁও থানার উর্ধতন কর্মকর্তারা জানতেন। এ নিয়ে আলাপ আলোচনাও চলছে। বুধবার এমনই আলোচনার প্রেক্ষিতেই কালিমুর রহমান তার সাবেক স্ত্রীকে তিলপাপাড়ার একটি বাসায় যেতে বলেন। ওই নারী বিশ্বাস করে সেই বাসায় যান। তাকে বাসায় আটকে রেখে কালিমুর রহমান ও পরে তার কয়েক বন্ধু জোরপূর্বক তাকে গণধর্ষণ করে। বৃহস্পতিবার সকালে ওই নারী পুলিশ সদস্য কৌশলে বাড়ি থেকে পালাতে সক্ষম হন। গিয়ে ওঠেন খিলগাঁওয়ে এক আত্মীয়ের বাসায়। সেখান থেকে তিনি শুক্রবার রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তির আগে তিনি খিলগাঁও থানায় ঘটনার বিষয়ে মামলা দায়ের করতে যান। কিন্তু থানা কর্তৃপক্ষ মামলা নেয়নি। এরপর শনিবার দুপুরে গিয়ে ভর্তি হন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ওসিসি সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ওই নারী পুলিশ হাসপাতালে সাংবাদিকদের জানানোর পর ব্যাপক আলোচনার জন্ম হয়। এরপর থেকেই ওই নারী পুলিশের জবানবন্দী গ্রহণ করতে ওসিসিতে হাজির হতে থাকে পুলিশ। বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে ওই নারী স্বাভাবিকভাবেই ঘটনার বিষয়ে জবানবন্দী দিয়েছেন। কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয়, খিলগাঁও থানার এক কর্মকর্তা জবানবন্দী নিতে গেলে। ওই কর্মকর্তা নিজেকে খিলগাঁও থানার কর্মকর্তা পরিচয়ে জবানবন্দী নিতে গেলে উত্তেজিত হয়ে পড়েন ওই নারী পুলিশ। তিনি ওই কর্মকর্তার সঙ্গে রীতিমত বাগবিত-ায় লিপ্ত হন। ওই নারী পুলিশ সদস্য বলতে থাকেন, মামলা করতে থানায় গেছি। ঘটনা বলেছি। কিন্তু আপনারা আমাকে কোন পাত্তা দেননি। এখন আমার জবানবন্দী নিতে এসেছেন কেন? এর জন্য ওই নারী পুলিশ সদস্য, খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাদের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন। যদিও শেষ পর্যন্ত কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও পুলিশ সদস্যরা বোঝানোর পর ওই নারী পুলিশ সদস্য স্বাভাবিক হন। পরে স্বাভাবিকভাবেই জবানবন্দী দেন। ওসিসির সমন্বয়কারী ডাঃ বিলকিস বেগম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জনকণ্ঠকে জানান, জবানবন্দী দেয়ার সময় ওই নারী পুলিশ সদস্য জবানবন্দী নিতে আসা পুলিশ সদস্যদের প্রতি উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। যদিও বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। চিকিৎসক, নার্স ও পুলিশ সদস্যরা বোঝানোর পর জবানবন্দী নিতে আসা সব পুলিশ সদস্যকেই ওই নারী পুলিশ সদস্য স্বাভাবিকভাবে জবানবন্দী দিয়েছেন। ডাঃ বিলকিস বেগম জানান, ধর্ষণের বিষয়ে ওই নারীর বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। আলামতে ওই নারীর ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে। অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হতে রবিবার ওই নারীর ফরেনসিক পরীক্ষা হবে। এ বিষয়ে ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে অভিয্ক্তুদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সন্ধ্যা ছয়টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঘটনার বিষয়ে থানায় বা আদালতে কোন মামলা হয়নি। অভিযুক্তদেরও কেউ আটক হয়নি। প্রধান অভিযুক্ত ওই নারীর সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
×