ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের মাটিতে প্রথম বোলার হিসেবে টেস্টে ১ উইকেট শিকার

সাকিবের আরেক কীর্তি

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ১৩ জুন ২০১৫

সাকিবের আরেক কীর্তি

মোঃ মামুন রশীদ ॥ স্পিনারদের ওপরই বেশি ভরসা করেছিল বাংলাদেশ দল। সে কারণে শক্ত স্পিন বোলিং বিভাগ গড়তে গিয়ে এক পেসার নিয়েই ভারতের বিরুদ্ধে চলমান টেস্টে নেমেছে। বিশ্বসেরা টেস্ট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের ওপর বাড়তি ভরসা ছিল দলের। এক পেসারের তত্ত্বটা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে প্রথম দিনে বৃষ্টির আক্রমণের মধ্যেও ভারতীয় ওপেনারদের ব্যাটিং তা-বের কারণে। ফতুল্লায় প্রথম দিনই বিনা উইকেটে ২৩৯ রান তুলে ফেলে সফরকারীরা। সাকিবসহ বাংলাদেশী বোলাররা কোন পাত্তাই পায়নি। দ্বিতীয় দিন বৃষ্টিতে ভেসে গেছে। তবে শুক্রবার তৃতীয় দিনে মাত্র ৫০ মিনিটের মধ্যেই ভারতীয় ব্যাটিংয়ে প্রথম আঘাত হানেন সাকিব। ফিরিয়ে দেন দোর্দ- প্রতাপে খেলতে থাকা ওপেনার শিখর ধাওয়ানকে। এর মাধ্যমে নতুন এক ইতিহাস গড়ে ফেলেন তিনি। দেশের মাটিতে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এক শ’ উইকেটের মালিক হয়ে যান। ঘরের মাঠে সাকিব ২৮তম টেস্ট খেলতে নেমেই এ কীর্তি গড়লেন। অবশ্য পরে আরও তিনটি উইকেট শিকার করেছেন, সাজঘরে ফিরিয়েছেন রোহিত শর্মা, মুরালি বিজয় ও আজিঙ্কা রাহানেকে। চলতি টেস্টে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে সফলতম বোলার সাকিবের শিকার ৪ উইকেট। সব মিলিয়ে দেশের মাটিতে সর্বাধিক ১০৩ উইকেট নেয়া হয়ে গেছে তাঁর। ভারতীয় দল ব্যাটিংয়ে নামার পর যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল তাতে করে প্রথম দিনেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। হতাশার একটি দিন কেটেছে স্বাগতিক বোলারদের। ধাওয়ান ও মুরালি বিজয় মিলে ব্যাটিং তা-ব চালিয়েছেন। ওয়ানডে মেজাজে রান তুলেছেন তাঁরা। তবে তৃতীয় দিনে জ্বলে উঠেছেন সাকিব। যেভাবে খেলছিলেন ধাওয়ান তাতে করে মনে হচ্ছিল ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিটা পেয়ে যাবেন। ১৫০ রানে অপরাজিত ছিলেন। তবে আর মাত্র ২৩ রান করতে পেরেছেন তিনি। সাকিবের বলে তাঁর হাতেই ক্যাচ দিয়ে ১৭৩ রানে ফিরে যান ধাওয়ান। ভারতীয় শিবিরে প্রথম আঘাতটা হানেন তিনিই। এর মাধ্যমে টেস্ট ইতিহাসে বাংলাদেশের পক্ষে নতুন ইতিহাস রচনা করে ফেলেন। দেশের মাটিতে এর আগে কোন বাংলাদেশী বোলারই ১০০ উইকেট নিতে পারেননি। এমনকি কেউ সাকিবের ধারেকাছেও নেই। কোন দেশের কোন বোলারই বাংলাদেশের মাটিতে এত উইকেট নিতে পারেননি। সাকিবের এখন বাংলাদেশের মাটিতে মোট শিকার ১০৩ উইকেট। দেশের মাটিতে ২৮ টেস্টে ৩৪.৬৭ গড়ে তিনি এ উইকেটগুলো শিকার করেছেন। ক্যারিয়ারে মোট উইকেট সংখ্যা ১৪৬। ক্যারিয়ারে ১৪ বার ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেও দেশের মাটিতে ১০ বার নিয়েছেন ইনিংসে ৫ উইকেট বা তার বেশি। দেশের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বাধিক উইকেটের মালিক আর মাত্র ৪ উইকেট শিকার করতে পারলেই আরেকটি মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলবেন। সেটি ১৫০ উইকেটের মাইলফলক। তাঁর কারণেই শেষ পর্যন্ত তৃতীয় দিনে ভারতের ৬ উইকেট তুলে নিয়ে কিছুটা মান বাঁচিয়েছে বাংলাদেশের বোলিং বিভাগ। তবে বিষয়টি জানতেন না সাকিব। সংবাদ সম্মেলনে তা জানার পর তিনি বলেন, ‘খুব ভাল লাগছে। দেশের মাটিতে ১০০ উইকেট, এটা তো বেশ ভাল একটি অর্জন।’ সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত সাকিব ২৪.৩ ওভার বোলিং করে একটি মেডেনসহ ১০৫ রান দিয়ে শিকার করেছেন ৪ উইকেট। দেশের মাটিতে সাকিব ভারতের বিরুদ্ধে পঞ্চম টেস্টে ১৩, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪ টেস্টে ১৭, শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৪ টেস্টে ২০, জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ৩ টেস্টে ১৮, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৪ টেস্টে ১৬, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ২ টেস্টে ১, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৪ টেস্টে ৯ এবং ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২ টেস্টে ৯ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। সাকিবের পেছনে আছেন বাংলাদেশের মাটিতে ১৮ টেস্ট খেলে সাবেক বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ রফিক ৬৬ উইকেট শিকার করে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা মাশরাফি বিন মর্তুজার দখলে ২০ টেস্টে ৫১ উইকেট। আর সফরকারী দলের পক্ষে সবার উপরে নিউজিল্যান্ডের স্পিনার ড্যানিয়েল ভেট্টরি ৩৪ উইকেট নিয়ে। বাংলাদেশের মাটিতে অবশ্য স্বীকৃত বোলার হিসেবে সর্বাধিক টেস্ট সাকিবই খেলেছেন। এটি তাঁর দেশের মাটিতে ২৮তম টেস্ট। দ্বিতীয় স্থানে পেসার শাহাদাত হোসেন রাজিব ২২ টেস্ট খেলে।
×