ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

কাব্যিক উচ্চারণে উদ্দীপ্ত স্বরচিত্রের আবৃত্তি উৎসব

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১২ জুন ২০১৫

কাব্যিক উচ্চারণে উদ্দীপ্ত স্বরচিত্রের আবৃত্তি উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কবিতা নিয়ে অনন্য এক আয়োজন। কাব্যমালার দোলায়িত ছন্দে মুখরিত অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ। প্রতিযোগী কিংবা অতিথি বাকশিল্পীদের কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে যেন ঘটে চলেছে কাব্যবীজের স্ফুরণ। বৃহস্পতিবার মেঘলা দিনের দুপুর থেকে রাত অবধি শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে উচ্চারিত হয়েছে এমন মধুর শব্দধ্বনি। উপলক্ষ আবৃত্তি সংগঠন স্বরচিত্রের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্্যাপনের আবৃত্তি উৎসব ও প্রতিযোগিতা। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া চার দিনের উৎসব ও প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় দিন ছিল বৃহস্পতিবার। এদিনও পরিবেশিত হয়েছে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার আমন্ত্রিত আবৃত্তিশিল্পীদের কবিতাপাঠ। আর তার তাদের সঙ্গে সমানতালে নানা কবির কবিতা থেকে আবৃত্তি করেছেন ঢাকা ও ঢাকার বাইরের প্রতিযোগীরা। উচ্চারিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে শামসুর রাহমান, নির্মলেন্দু গুণ, রফিক আজাদ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, জয় গোস্বামীসহ বরেণ্য বাংলা কবিদের কবিতার চরণ। বৃহস্পতিবারের আয়োজনের সূচনা হয় দুপুর তিনটায়। প্রথমেই ছিল শুভেচ্ছা বক্তৃতা পর্ব। এ পর্বে কবিতা সম্পর্কিত নানা বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি বাচিকশিল্পী। তারা হলেন মীর বরকত, ইকবাল খোরশেদ ও ঝর্ণা সরকার। সভাপতিত্ব করেন স্বরচিত্রের সভাপতি মাহিদুল ইসলাম। আলোচনা শেষে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রতিযোগীদের অংশগ্রহণে ‘জীবনানন্দ দাশ পদক আবৃত্তি প্রতিযোগিতা।’ ঢাকা ও ঢাকার বাইরের প্রায় ৭০ জন প্রতিযোগীর কণ্ঠে উচ্চারিত হয় নানা বিষয়ের বৈচিত্র্যময় কবিতা। প্রতিযোগিতা শেষে শেষ বিকেলে উপস্থাপিত হয় স্বরচিত্রের আবৃত্তি প্রযোজনা রুদ্রবীণা। নজরুলের দ্রোহ ও প্রেমের কবিতায় সজ্জিত প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন মাহিদুল ইসলাম। আবৃত্তি সংগঠক স্বরকল্পন পরিবেশন রাজাকারের নামতা শীর্ষক বৃন্দ আবৃত্তি। বিদ্রƒপাত্মক বিভিন্ন ছড়ার কোলাজে নির্মিত প্রযোজনাটির গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় ছিলেন মুস্তাফিজ রিপন। সন্ধ্যায় শুরু হয় আমন্ত্রিত শিল্পীদের একক আবৃত্তি পরিবেশনা। ততক্ষণে কবিতানুরাগীদের সরব উপস্থিতিতে প্রায় পরিপূর্ণ মিলনায়তনে কবিতাপাঠে অংশ নেন হাসান আরিফ, নাসির উদ্দিন, এনামুল হক বাবু, ইকবাল খোরশেদ, নাজমুল আহসান, নায়লা তারান্নুম কাকলী, তামান্না তিথি, অনন্যা লাবণী, পুতুল ও শুক্লা দাসগুপ্তা। আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে শীর্ষক আবৃত্তি ও নৃত্যের যুগলবন্দী পরিবেশনাটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করে কবিতাকেন্দ্রিক এ আয়োজনে। মাহিদুল ইসলামের আবৃত্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নৃত্য পরিবেশন করে নন্দন কলাকেন্দ্রের শিল্পীরা। পরিবেশনাটির নির্দেশনায় ছিলেন এম আর ওয়াসেক। নাচ ও কবিতার সম্মিলিত পরিবেশনা শেষে শুরু জেলা শহর থেকে আমন্ত্রিত শিল্পীদের পরিবেশনা। এতে একক আবৃত্তিতে অংশ নেয় নারায়ণগঞ্জের পিন্টু সাহা, চট্টগ্রামের মিলি চৌধুরী, বাগেরহাটের পারভীন আহমেদ প্রমুখ। এরপর পরিবেশিত হয় ধইরা দিবানি শিরোনামের বৃন্দ আবৃত্তি। সাদেকুর রহমান পরাগের গ্রন্থনা ও হাসান আরিফের নির্দেশনায় অংশ নেয় শ্রুতিঘরের বাকশিল্পীরা। দ্বিতীয় দিনের আয়াজনের সমাপ্তি ঘটে আমন্ত্রিত খ্যাতিমান আবৃত্তিশিল্পীদের কবিতাপাঠের মাধ্যমে। একক কণ্ঠে কবিতার শিল্পিত উচ্চারণের এ পর্বে অংশ নেন হাসান ইমাম, আশরাফুল আলম, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, লায়লা আফরোজ, রূপা চক্রবতী ও রফিকুল ইসলাম। আজ শুক্রবার এ উৎসব ও প্রতিযোগিতার তৃতীয় দিন। এদিন বেলা ৩টায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে শুরু হবে অনুষ্ঠান। চলচ্চিত্রকার বাদল রহমান স্মরণ ॥ প্রয়াত প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার বাদল রহমান। নির্মাণ করেছিলেন এমিলের গোয়েন্দা বাহিনীসহ শিল্পমান সমৃদ্ধ কিছু ছবি। আর চলচ্চিত্র নির্মাণের পাশাপাশি অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন এদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনে। সেই সূত্রে তিনি ছিলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। বৃহস্পতিবার ছিল বরেণ্য চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের পঞ্চম প্রয়াণবার্ষিকী। এ উপলক্ষে বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার মিলনায়তনে বাদল রহমান স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি। ‘জাতি, আত্মপরিচয় ও বাংলাদেশের চলচ্চিত্র’ শীর্ষক এ স্মারক বক্তৃতা করেন চলচ্চিত্র গবেষক অধ্যাপক জাকির হোসেন রাজু। স্মারক বক্তৃতার আগে ছিল বাদল রহমান স্মরণে আলোচনা। বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী এ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। আলোচনায় অংশ নেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী ও সিনেমাটোগ্রাফার আনোয়ার হোসেন এবং খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা মসিহউদ্দীন শাকের। বাদল রহমান স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি বেলায়াত হোসেন মামুন। স্মরণের এ আয়োজনে আলোচনা ও স্মৃতিচারণের মাধ্যমে উচ্চারিত হয় দেশের চলচ্চিত্র ভুবনে বাদল রহমানের অবদান। অনুষ্ঠানের শুরুতে বাদল রহমান স্মরণে পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। স্বাগত বক্তব্যে বেলায়েত হোসেন মামুন বলেন, সবাই অভিভাবক হতে পারে না, বাদল রহমান ছিলেন আমাদের সত্যিকারের অভিভাবক। নাটক, গান ও শিল্পের অন্যান্য ক্ষেত্রের লোকেরা একত্রে কাজ করতে পারলেও চলচ্চিত্রের লোকেরা একত্রে কাজ করতে পারে না। আর বাদল রহমান সিনেমার লোকদের একটি জায়গা করে দেয়ার জন্য চলচ্চিত্র কেন্দ্র গড়তে চেষ্টা করেছেন। পিতৃস্মৃতিচারণ করে বাদল রহমানের ছেলে অভিষেক রহমান বলেন, বাবার সঙ্গে আমি চলচ্চিত্র ও শিল্প-সাহিত্য নিয়ে খুব বেশি আলাপ করতে পারিনি নানা ব্যস্ততায়। এ জন্য আমার খুব দুঃখ হয়। বিশিষ্ট চলচ্চিত্র গ্রাহক আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি ছিলাম স্থাপত্যবিদ্যার ছাত্র। বাদল ভাই আমাকে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন। তারই প্রচেষ্টার ভর্তি হলাম পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে। এর পরই বদলে গেল আমার জীবন। মনে পড়ে, এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী সিনেমার শূটিংয়ে তার সঙ্গে শিশুদের নিয়ে কত কষ্ট করেই না খুলনায় গিয়েছিলাম। চলচ্চিত্র নির্মাতা মসিহউদ্দীন শাকের বলেন, বাদল রহমান অত্যন্ত জনপ্রিয় লোক ছিলেন। তার সঙ্গে হেঁটে গলে প্রচুর সালাম পাওয়া যেত। জাকির হোসেন রাজু বলেন, দেশের যে কোন চলচ্চিত্র আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বাদল রহমান। দেশের সিনেমা আন্দোলনকে যারা জাতীয় আন্দোলনে রূপ দিয়েছিলেন তাদের অন্যতম ছিলেন তিনি। গণগ্রন্থাগারে আবৃত্তিসন্ধ্যা বিষ বিরীক্ষের বীজ ॥ কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর অনবদ্য এক কাব্যনাট্য বিষ বিরীক্ষের বীজ। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী অবস্থার প্রেক্ষাপটে নানা টানাপোড়েন উঠে এসেছে কবিতার চরণ ধরে। উপস্থাপিত হয়েছে রাজাকার আক্কেল মোড়লের কুকর্মের বয়ান, রূপবানের জীবনের কালো অধ্যায়, বকুলির সাহসিকতার বর্ণনা, পাচুবিবির সাহসী জীবনের গল্প কিংবা রাখাল গৌরবের জীবন দর্শনের দ্বন্দ্ব-সংঘাত। আর এই কাব্যনাট্যটিকে একই শিরোনামে আবৃত্তি প্রযোজনা নির্মাণ করেছে বৈকুণ্ঠ আবৃত্তি একাডেমি। নির্দেশনা দিয়েছেন খ্যাতিমান আবৃত্তিশিল্পী শিমুল মুস্তাফা। মঞ্চসজ্জা করেছেন শিল্পী চারুপিন্টু। বৃহস্পতিবার সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে প্রযোজনাটি নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো আবৃত্তিসন্ধ্যা। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রের কুশীলবরা হলেন মাহমুদুল হাকিম তানভীর, আদিত্য রানা, এইচএম রুবেল, রায়হান নাসিফ, তানভীর আনজুম, ইয়ামুল আশুরা বৃষ্টি, শরাবান তহুরা জিনিয়া, মাহিনূর মুমু, দিনা মিত্র, গোলাম কিবরিয়া মিনার, বিধান চন্দ্র, পল্লব গোপ, মোজাম্মেল হক বাপ্পি, আব্দুল হালিম, ওলি আহমেদ ও শিমুল মুস্তাফা। শিল্পকলার স্টুডিও থিয়েটারে মঞ্চস্থ অঙ্কুর ॥ মঞ্চে এলো ঢাকা মৌলিক নাট্যদলের দ্বিতীয় প্রযোজনা অঙ্কুুর। কাজী রফিকের রচনা থেকে নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন সাজু আহমেদ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ওহী চৌধুরী, অলি উল্লাহ অলি, মনি বেগম, তুষার খান, জাভেদ আকাশ, নিলয় রহমান, জিএম স্পর্শ, নিপা, সাজু আহমেদ, হিরা, অপু, ফারুক, ইমরান, পরান, হিমেল, রাহাত, আনিস নিলয়, সুমন, সবুজ, রানা মল্লিক প্রমুখ। নাটকের সঙ্গীত পরিচালনায় হাসান সিদ্দিকী, কোরিওগ্রাফি করেছেন নিলয় রহমান, পোশাক মনি বেগম ও সেট ডিজাইন করেছেন অলি উল্লাহ অলি।
×